সৈন্যরা বলেন, কোনও না কোনও বুলেটে তাঁদের প্রত্যেকের ঠিকানা লেখা রয়েছে। যেদিন সেই বুলেট ছুটে আসবে, তাকে এড়ানোর কোনও পথ নেই। আর সেভাবেই দেশের জন্য নিঃশর্তে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন অনেক সেনা। পেয়েছেন শহিদের সম্মান। তাঁদের এই ত্যাগকে স্মরণ করে রাখতেই এবার এক অভিনব প্রয়াস নিলেন বেঙ্গালুরুর এক ব্যক্তি। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁরা। কর্মজীবনের শুরু থেকেই তাঁরা মনে মনে জানেন, পদ্মপাতায় জলের বিন্দুর মতোই ক্ষণস্থায়ী তাঁদের জীবন। যে কোনও মুহূর্তে ঘনিয়ে আসতে পারে সেই অন্তিম মুহূর্ত। নিজে কিছু বুঝে ওঠার আগেই হয়তো প্রাণ কেড়ে নেবে শত্রুর রাইফেল থেকে ছুটে আসা বুলেট। মৃত্যুর আগে শেষবারের মতো দেখাও হবে না প্রিয় মুখগুলির সঙ্গে। তবুও তাঁরা ঝুঁকি নেন। ঝোড়ো আবহাওয়াই হোক কি গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহ কিংবা তুষারপাত, তাঁরা কর্তব্যে অচল। শত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার ভার যে তাঁদের কাঁধেই। তাই দেশের জন্য শহিদ হতেও রাজি ভারতীয় সেনারা।
আরও শুনুন: বাজল বাজনা, ঘর সাজল বিয়েবাড়ির মতো, কফিনবন্দি তরুণ জওয়ানের জন্য আয়োজন মা-বাবার
পুলওয়ামা হামলা প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল এমনই ৪০ জন বীর সৈনিকের। ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সিআরপিএফ কনভয়ের উপর হামলা চালিয়েছিল সন্ত্রাসবাদীরা। সেই কালো দিনটি যেমন ভোলার নয়, তেমনই অমর হয়ে আছেন এই ৪০ জন শহিদও। আর এই মর্মান্তিক ঘটনাই বদলে দিয়েছিল বেঙ্গালুরুর অধ্যাপক এবং সংগীতশিল্পী উমেশ গোপীনাথ যাদবকে। সেদিন থেকেই এক ব্রত পালন করে চলেছেন তিনি।
কী সেই ব্রত? শহিদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার উদ্দেশ্যেই এক অভিনব কাজ করে চলেছেন যাদব। পুলওয়ামা হামলার পর থেকেই এক বছর ধরে সারা ভারত ঘুরেছেন তিনি। তবে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে নয়। সেই ৪০ জন শহিদের জন্মস্থানে পৌঁছনোই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। তাঁদের প্রত্যেকের বাড়ি থেকে, কিংবা যে শ্মশানে তাঁদের দাহ করা হয়েছিল সেখান থেকে মাটি সংগ্রহ করে এনেছেন তিনি। এই কাজের জন্য মোট ৬১ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন যাদব। অবশেষে সিআরপিএফ-এর লেথপোরা ক্যাম্পে তাঁর সংগ্রহ দিয়ে একটি স্মারক নির্মাণ করা হয়েছে।
আরও শুনুন : শহিদ ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রার স্মৃতি নিয়েই দিন কাটাচ্ছেন প্রেমিকা ডিম্পল, শুনে আপ্লুত কিয়ারা
কিন্তু এখানেই থেমে যায়নি যাদবের যাত্রা। ক্রমাগত চলেছেন যাদব, এক শহিদের পরিবার থেকে আরেক শহিদের পরিবার পর্যন্ত। ২৮টি রাজ্য এবং ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘুরে শহিদের স্পর্শ লেগে থাকা মাটি তুলে আনছেন তিনি। এই শহিদদের মধ্যে রয়েছেন ১৯৪৭-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ, ১৯৭১-এর ভারত-পাক যুদ্ধ, অপারেশন রক্ষক, গালওয়ান, ২৬/১১-এর মুম্বই হামলায় মৃত সৈন্যরা, এমনকি গত বছরের বিপিন রাওয়াত-এর হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মৃতেরাও। সেলুলার জেল এবং পোর্ট ব্লেয়ার-এর ফ্ল্যাগ পয়েন্ট থেকেও মাটি সংগ্রহ করেছেন তিনি। যাদবের অতিক্রান্ত পথের পরিমাণ এতদিনে দাঁড়িয়েছে সোয়া লক্ষ কিলোমিটার।
নিজের ব্রতকে ‘জন্মভূমি কর্মভূমি’ বলে উল্লেখ করে থাকেন যাদব। এখনও পর্যন্ত ১৪৪ জন শহিদের জন্মস্থানে গিয়েছেন তিনি। তাঁদের ছোঁয়া লাগা এই মাটি দিয়ে ভারতের মানচিত্র গড়ে তুলতে চান তিনি। আর এভাবেই দেশের জন্য শহিদ হওয়া এই বীর সৈনিকদের শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করতে চান উমেশ গোপীনাথ যাদব।