ভাষা মানুষের আশ্রয়। ‘ভাষা এমন কথা বলে, বোঝে রে সকলে’… সেই ভাষা তৈরি হয় শব্দ দিয়ে, আর শব্দের সেতু গড়ে দেয় বর্ণমালা। নানা দেশের নানা ভাষার মতোই, ভিন্ন ভাষার ক্ষেত্রে বর্ণমালার সংখ্যাও আলাদা। কোনও ভাষার বর্ণমালা বেশ সমৃদ্ধ। আবার এমন অনেক ভাষা আছে যেখানে আছে অল্প কয়েকটা বর্ণ। জানেন কোন দেশের ভাষায় বর্ণের সংখ্যা সবথেকে বেশি? আর সবথেকে কম সংখ্যক বর্ণই বা আছে কোন দেশের ভাষায়? আসুন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আমরা সেই বর্ণমালাগুলির কথা শুনে নিই।
“আমাকে স্বপ্নের সেতু দিয়েছিলে গ’ড়ে পলে পলে,
তাইতো ত্রিলোক আজ সুনন্দ জাহাজ হয়ে ভেড়ে
আমারই বন্দরে।”
– বর্ণমালাকে নিয়ে এমন উচ্চারণই করেছিলেন কবি শামসুর রাহমান। সত্যিই তো, সেই কোন ছোটবেলায় বর্ণশিক্ষায় হাতেখড়ি হয়েছিল আমাদের, সেই বর্ণই তো সেতু গড়ে গড়ে দিয়ে চলেছে শব্দের। হয়ে উঠছে যোগাযোগের মাধ্যম। শুধু তো মুখের বুলি নয়, একটা গোটা দেশের সংস্কৃতি, সেই দেশটার চরিত্র হয়ে ওঠে তাদের ভাষা। তাই মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার দাবিতে বারবার ঝাঁপিয়ে পড়েছে মানুষ। বুঝে নিয়েছে ভাষার অধিকার। আর সমস্ত ভাষার ক্ষেত্রেই বুনিয়াদটাই হল বর্ণমালা।
বাংলা ভাষায় যেমন স্বরবর্ণ, ব্যাঞ্জনবর্ণ মিলিয়ে বর্ণের সংখ্যা মোট ৫০টি। ইংরেজিতে সেই বর্ণের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। ২৬টি। ঠিক তেমন করেই প্রত্যেকটি ভাষারই রয়েছে আলাদা আলাদা বর্ণমালা। কোনও ভাষার ক্ষেত্রে সেই বর্ণমালার সংখ্যা নেহাতই কম, কোনও কোনও ভাষার ক্ষেত্রে কিন্তু সে সব বেশ বেশি।
আরও শুনুন: অনন্য স্বীকৃতি, আফ্রিকার এক দেশেও সরকারি ভাষার মর্যাদা পেয়েছে বাংলা
কোন দেশের বর্ণমালায় সবথেকে বেশি সংখ্যক বর্ণ রয়েছে জানেন? কম্বোডিয়ার একটি অন্যতম ভাষা খামের। কম্বোডিয়ার সরকারি ভাষার হিসেবে স্বীকৃত এই ভাষাটিতে বর্ণের সংখ্যা সর্বাধিক। মোট ৭৩টি বর্ণ রয়েছে খামের ভাষার বর্ণমালায়। কম্বোডিয়া ছাড়াও দক্ষিণপূর্ব থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের বেশ কিছু জায়গাতেও প্রচলিত রয়েছে ভাষাটি। পৃথিবীর কঠিনতম ভাষাগুলির মধ্যেও এটিকে গণ্য করা হয়।
বর্ণের সংখ্যার নিরিখে তার পরেই রয়েছে নেপালি ভাষা। যেখানে মোট বর্ণমালার সংখ্যা ৬৪টি। আর তার পরেই রয়েছে হিন্দি বা বাংলার মতো ভাষা।
তা বেশি বর্ণসমৃদ্ধ ভাষা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে কম সংখ্যক বর্ণমালা-যুক্ত ভাষাও। ইংরেজি ভাষার ক্ষেত্রেই তো বর্ণ বা লেটারের সংখ্যা বেশ কম। তবে ইংরেজিকেও হার মানাবে পাপুয়া নিউ গিনির ভাষা। ‘রোটোকাস’ নামে এই ভাষা তৈরি হয়েছে মাত্র বারোটি বর্ণ নিয়ে। যদিও দেখতে একেবারেই ইংরেজির মতো এই বর্ণমালা। ইংরেজির বর্ণমালার পাঁচটি ভাওয়েল ছাড়া হাতে গোনা কয়েকটি বর্ণ রয়েছে এই ভাষায়। পৃথিবীর সবচেয়ে অল্প সংখ্যক বর্ণমালাযুক্ত ভাষা হিসাবে গিনেস বুক অব ওয়াল্ড রেকর্ডেও নাম রয়েছে এই ভাষাটির।
আরও শুনুন: পাখির ভাষায় কথা বলেন এই মানুষেরা, কোথায় শোনা যায় এমন ভাষা?
তবে সবচেয়ে কঠিন ভাষা নাকি চিনের মান্দারিন। এই ভাষার বর্ণমালায় বর্ণের থেকে চিহ্নের সংখ্যাই বেশি। সেখানে রয়েছে অন্তত আট হাজারেরও বেশি চিহ্ন। ওই ভাষাভাষী মানুষদের মনে রাখতে হয় সেই সবকটি চিহ্নই। মজার কথা, এই ভাষাটিই আবার পৃথিবীর সবথেকে বেশি সংখ্যক মানুষের মুখের ভাষা। প্রায় ১৩০ কোটির বেশি মানুষ কথা বলেন এই ভাষাটিতেই।
বর্ণমালার সংখ্যা কম হোক বা বেশি, ভাষা আসলে একটা দেশের সংস্কৃতির স্বতঃস্ফূর্ত উচ্চারণ। তাই মাতৃভাষাকে আগলে রাখার দায়িত্ব প্রত্যেক ভাষাভাষী মানুষেরই। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের সেই বার্তাই দেয়।