‘এ নদী এমন নদী.. জল চাই একটু যদি’। না, উষ্ণ বালি নয়, বরং একগাদা রংই আপনার চোখের সামনে তুলে আনবে এই নদী। একে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নদী বললেও যেন কম বলা হবে। জানেন কোথায় রয়েছে এমন রামধনু নদী। আসুন, শুনে নিই।
নদী মাত্রেই সুন্দর। তবে এ নদীর সৌন্দর্য টেক্কা দেবে অন্য সব নদীর রূপকে। আকাশে রামধনু তো দেখেইছেন। কিন্তু নদীতে রামধনু দেখেছেন কি আগে। এই নদীতে মিলবে তেমনই রং। না, আকাশের রংধনু মোটেই নদীর জলে প্রতিফলিত হয় না এখানে। বরং স্ফটিক জলের নিচেই যেন ঘটে যায় রঙের বিস্ফোরণ। ভাবছেন তো, কী ভাবে? তার জন্য যেতে হবে গভীরে।
আরও খবর: সবথেকে কম সময়ে বিশ্বপরিক্রমার রেকর্ড, গিনেস বুকে নাম ভারতীয় গিটারিস্টের
কলোম্বিয়ার এই ক্যানো ক্রিস্টালস নদী পৃথিবীর কাছে এক মহা আশ্চর্য। স্থানীয়দের বিশ্বাস, ৬২.১ মাইল লম্বা এই নদীর সঙ্গে নির্ঘাত যোগ রয়েছে স্বর্গের। না হলে এমন উপচে পড়া সৌন্দর্য হতে পারে নাকি কোনও নদীর! তবে বছরের যে কোনও সময়ই যে এ নদীর এমন রূপ থাকে তা কিন্তু নয়। বাকি সময় এ যেন অন্য যে কোনও নদী। শুধু জুলাই থেকে নভেম্বর, বছরের এই বিশেষ সময়টুকুতে নিজেকে বদলাতে শুরু করে ক্যানো ক্রিস্টালস। এই সময়টায় নদীর জল থাকে তুলনামূলক কম। কিন্তু নদীর বুকে চোখে রাখলেই দেখবেন রঙের মেলা। নদীর নিচে যেন ফুটে রয়েছে রংবেরঙের ফুল।
আরও খবর: একটাও রাস্তা নেই এ গ্রামে! জানেন কীভাবে যাতায়াত করেন এখানকার মানুষ?
না, ঠিক ফুল নয়। বরং এক ধরনের গুল্ম। ম্যাকারেনিয়া ক্লাভিগেরা নামক ওই গুল্মই নদীর ভিতরে অমন রঙের বিস্ফোরণ ঘটায়। লাল, নীল, সবুজ, কালো, হলুদ নানা রঙে ক্যালাইডোস্কোপের মতো দেখায় তখন নদীর বুক। তার উপর সূর্যের আলো এসে পড়ে সেই জলকে করে তোলে আরও স্ফটিক। অনেকে তাই এই নদীকে ‘তরল রামধনু’ বলে ডাকেন, অনেকে আবার বলেন ‘রিভার অব ফাইভ কালারস’।
তবে এই গুল্মটি কিন্তু বেশ স্পর্শকাতর। ঠিকঠাক আবহাওয়া ও পরিবেশ না পেলে রং খোলে না তারা। জলের নিচে ঘুমিয়ে রয়েছে কোটি কোটি বছর আগেকার পাথর। তার সঙ্গে যখন ওই গুল্মের রং মেশে, তখন তা জলের মধ্যে ম্যাজিক তৈরি করে। তবে অদ্ভুত ব্যাপার, এমন রঙিন স্ফটিক জলে কিন্তু একটিও মাছ বসবাস করে না।
আরও খবর: মাটির নিচে বাড়িঘর, রেস্তরাঁ, এমনকী ফুটবল ক্লাবও! কোথায় রয়েছে এমন পাতাল-শহর?
পর্যটকদের কাছেও ক্যানো ক্রিস্টালস নদীর আকর্ষণ ক্রমশ বাড়ছে। মাঝখানে দীর্ঘদিন পর্যটকদের জন্য বন্ধ ছিল এই জায়গাটি। তবে ২০০৯ সালের পরে তা ফের খুলে দেওয়া হয়। শুধু চোখে দেখাই নয়, এই নদীতে সাঁতারও কাটতে পারেন পর্যটকেরা। তবে একদিনে দুশোর বেশি পর্যটককে নামতে দেওয়া হয় না নদীতে। হাতে ওয়াটার প্রুফ ক্যামেরা থাকলে ফ্রেমবন্দি করেও আনতে পারবেন এমন রামধনু নদীর আশ্চর্য রূপ।