শিয়রে শমন! রাশিয়ার আগ্রাসন যে কোনও সময় আঘাত হানতে পারে ইউক্রেনের মাটিতে। এই যখন পরিস্থিতি, তখন দেশের প্রবীণরাই বা কেন হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন! না মোটেও হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি তাঁরা। বরং হাতে তুলে নিয়েছেন একে-৪৭ রাইফেল। শিখে নিচ্ছেন যুদ্ধ বাধলে পালটা প্রত্যাঘাত হানার প্রাথমিক কলাকৌশল। ইউক্রেনের এক ৭৯ বছরের বৃদ্ধার সেরকমই ছবি সম্প্রতি সামনে এসেছে। যা চমকে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে।
দেশরক্ষার দায় যতটা দেশের সেনার, ততটা নাগরিকদেরও। হ্যাঁ, সেনার মতো প্রশিক্ষিত কায়দায় হয়তো তাঁরা শত্রুকে প্রতিহত করতে পারবেন না। কিন্তু খানিকটা প্রশিক্ষণ পেলে যে আঘাতের প্রাথমিক অভিঘাত সামলে নেবেন, তা বলাই যায়। ঠিক সেই কাজটিই করতে তৈরি ইউক্রেনের প্রবীণারা। সম্প্রতি বিশ্বের সামনে এসেছে একটি ছবি। যেখানে দেখা যাচ্ছে এক বৃদ্ধাকে। বয়স তাঁর ৭৯ বছর। হাতে রাইফেল। ঠিক করে নিচ্ছেন নিশানা। এই ঠাকুমার ঝুলিতে রূপকথার গল্প আছে কিনা বলা মুশকিল, কিন্তু দেশরক্ষার জেদ যে আছে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
আরও শুনুন: রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের আঁচ পড়তে পারে ভারতীয়দের রান্নাঘরেও, কীভাবে জানেন?
রাশিয়া-ইউক্রেনের বিবাদ নতুন নয়। এই বিবাদের জল যে কোনোদিন যে যুদ্ধে গড়াতে পারে, সে বিষয়ে আগাগোড়া সতর্ক ইউক্রেন। তাই প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছিল দেশের নাগরিকদের। এমনকী ছোটদের এবং প্রবীণদেরও প্রাথমিক কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রবীণাদের নিয়ে তাই তৈরি করা হয়েছে ‘বাবুশকা ব্যাটালিয়ন’। ‘বাবুশকা’ শব্দের অর্থই প্রবীণা। তাঁদের আস্ত একটা বাহিনীই আছে, যাঁরা রাইফেল চালানো থেকে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে তৈরি। আরও নানা কঠিন কাজ করতেও তাঁরা সক্ষম যা যুদ্ধের সময় সাহায্য করতে পারে সেনাদের। এই প্রবীণাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার নেপথ্যে আছে ‘আজভ মুভমেন্ট’-এ অংশগ্রহণকারীরা। আজভদের আবার ‘নিও নাজি’ তকমা দিয়েছে আমেরিকানরা। অভিযোগ, উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং চরমপন্থায় বিশ্বাসী আন্দোলনকারীরা। নাজি কায়দাতেই তারা শ্বেতাঙ্গ গৌরব জাগিয়ে তুলে জনগণকে কাবু করে। এই আন্দোলনকারীরাই আবার রাশিয়া সমর্থিত বিদ্রোহীদের কবল থেকে মারিওপোল শহরটিকে মুক্ত করেছিল। সেটা ২০১৪ সাল। তারপর থেকেই তারা শহরের নাগরিকদের যুদ্ধ-প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেছে। ২০১৯ সালে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য ছড়ানোর অভিযোগে আজভ আন্দোলনকারীদের ফেসবুক থেকে ব্যান করা হয়। সম্প্রতি যে বৃদ্ধার ছবি সামনে এসেছে, তাতেও দেখা যাচ্ছে যে এই আন্দোলনকারীরাই প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বৃদ্ধাকে।
আরও শুনুন: সোনার হার তাঁর সিগনেচার, কেন হার এত পছন্দ করতেন বাপি লাহিড়ী?
এই নিয়ে সম্প্রতি বেশ বিতর্ক জমে উঠেছে। কেউ কেউ মন্তব্য করছেন, আপনার মা-ঠাকুমা নাজি আদর্শে উদ্বুদ্ধ কিনা, তা আপনি হয়তো জানেনও না। সেই কথা কানে গিয়েছে ৭৯ বছরের ওই বৃদ্ধারও। তিনি জানাচ্ছেন, আন্দোলনকারীদের আদর্শের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই। অন্য অনেকের মতোই তিনি এই ধরনের চরমপন্থার বিরোধী। তবে, তিনি যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে প্রশিক্ষণ্টুকু নিয়ে রাখতে চান, যাতে শত্রু আগ্রাসনকে প্রতিহত করা যায়।
বৃদ্ধার এই মন্তব্য যেন বুঝিয়ে দিচ্ছে, দেশ যখন সংকটে তখন সবিকিছু ছাপিয়ে দেরক্ষার তাগিদটাই বড় হয়ে ওঠে। আর কিছু নয়।