পেশায় তিনি বাদ্যযন্ত্রকার। কিন্তু গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম তুলেছেন পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে। সব চেয়ে কম সময়ে পৃথিবীর ২৪৫টি দেশ ঘুরেছেন ভারতীয় এই সঙ্গীতশিল্পী। তবে সবই সম্ভব করেছে ওই সঙ্গীত। কী ভাবে? শুনে নিন সেই গল্পই।
মা-বাবাকে প্রদক্ষিণ করেই বিশ্বপরিক্রমার সৌভাগ্যলাভ করেছিলেন সিদ্ধিদাতা গণেশ। তবে এই ব্যক্তিকে সিদ্ধিদান করেছেন স্বয়ং সরস্বতী। তাঁর হাতে বাদ্যযন্ত্র কথা বলে। ভারতের অন্যতম প্রসিদ্ধ গিটারশিল্পী তিনি। সরাসরি না হলেও সেই সঙ্গীতই তাঁকে এনে দিয়েছে অনোন্য সম্মান। তিনি গড়েছেন বিশ্বরেকর্ড। সবচেয়ে কম সময়ে বিশ্ব পরিক্রমা করার জন্য তিনি নাম তুলেছেন গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে।
৪৬ বছরের বেনি প্রসাদের পাসপোর্টের দিকে তাকালে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। নয় নয় করে তিনি এরই মধ্যে ঘুরে ফেলেছেন অন্তত ২৪৫টি দেশ। এমনকি সেই তালিকায় রয়েছে আন্টার্কটিকাও। সবই হয়েছে সঙ্গীতের হাত ধরে। বিভিন্ন দেশে ঘুরে ঘুরে কনসার্ট করে বেড়ান বেনি। প্রতি বছরই ৪০ থেকে ৫০টা দেশে যেতে হয় তাঁকে। আর সে ভাবেই মাত্র ৬ বছর ৬ মাস ২২ দিনে তিনি সেরে ফেলেছেন বিশ্বপরিক্রমা।
আরও শুনুন: ঝুলিতে রয়েছে ২০টি ডিগ্রি, ভারতের সবচেয়ে ‘শিক্ষিত’ ব্যক্তিকে চেনেন?
ব্যাঙ্গালোরের ছেলে বেনি। তিনি যে শুধুই গিটার বাজান, তা নয়। দু-দুটো বাদ্যযন্ত্র তৈরি হয়েছে তাঁর হাতেই। বঙ্গো গিটার এবং ৫৪টি তারযুক্ত গিটার বেন্টারের আবিষ্কর্তা বেনি প্রসাদ। ২০০৪ সাল থেকে কনসার্টের জন্য বিভিন্ন দেশে ঘুরতে শুরু করেন। ২০১১ সালের মধ্যেই তাঁর বিশ্ব পরিক্রমা শেষ। মাত্র সাড়ে ৬ বছরের মাথায় পৃথিবীর ২৪৫টি দেশ ঘুরে আসার জন্য গিনেস বুকে নাম ওঠে তাঁর। ২০০৮ সালে তাঁকে সাম্মানিক ডক্টোরেট দেয় দ্য ইউনিভার্সিটি অব নেশন।
ছোট থেকেই অ্যাজমায় কষ্ট পেতেন বেনি। পড়াশোনায় বিশেষ ভাল ছিলেন না। ভুগতেন ডিপ্রেশনে। বেশ কয়েকবার আত্মহননের কথাও ভেবেছেন। তবে ১৬ বছর বয়সে হঠাৎ করেই আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকতে থাকেন বেনি। তাঁর মনে হয়েছিল, বিশ্বভ্রমণ আর সঙ্গীত, এই দু-য়ের মধ্যে দিয়েই যা চাইছেন, তার কাছাকাছি পৌঁছতে পারবেন তিনি। সেই শুরু। ২০০৪ সালে জমানো অর্থে শ্রীলঙ্কার একটি কলেজে অনুষ্ঠান করতে যান বেনি। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০০৪ সালে গ্রিসে অলিম্পিকের মঞ্চে অনুষ্ঠান করেন বেনি। ২০০৬ সালে জার্মানিতে ফিফা বিশ্বকাপ এবং ২০০৭ সালে মিলিটারি ওয়ার্ল্ড গেমসের মঞ্চও মাতিয়েছিলেন। ২০০৯ সালে বিজ্ঞানীদের ডাকে আন্টার্কটিকায় অনুষ্ঠান করেন। একে ছোট থেকে অ্যাজমার সমস্যা, তার উপরে রয়েছে আর্থারাইটিস- সব মিলিয়ে আন্টার্কটিকা সফরটা খুব একটা সহজ ছিল না। তবে মনের জোরে জয় করেছিলেন সেটাও। বেনির জীবনে সব চেয়ে স্মরণীয় অনুষ্ঠান বোধহয় সেটাই।
আরও শুনুন: ‘হনুমান চালিশা’ গাওয়া থেকে শহর ঘোরা, চমকপ্রদ কারণে গিনেসে নাম বলিপাড়ার এই তারকাদের
সঙ্গীতের হাত ধরেই জীবনে এসেছে বিশেষ মানুষ। নাগাল্যান্ডের এক মিউজিশিয়ানের গলাতেই মালা দিয়েছেন বেনি। তাঁর জীবনে বিশ্বভ্রমণ আর সঙ্গীত যেন একেবারে মিলেমিশে গিয়েছে। আর জীবনে থাকার সেই বার্তাই দিয়ে যেতে চান তরুণ প্রজন্মকেও। নিজেকে খুঁজে পেতে ভ্রমণের বিকল্প নেই বলেই মত এই তরুণ সঙ্গীতকারের।