নিয়মিত প্যারাসিটামল খেয়ে থাকেন? দিনের পর দিন ধরে চালিয়ে যান ওষুধের কোর্স? কিন্তু জানেন কি, খাল কেটে কুমির ডেকে আনার মতো নিজেই বাড়িয়ে দিচ্ছেন হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনাকে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
গা-হাত-পায়ে ব্যথা, গা ম্যাজম্যাজ, জ্বর, যাই হোক না কেন, হাত এগিয়ে যায় ওষুধের বাক্সের দিকে। প্যারাসিটামল আছে তো? যেন সর্বরোগহর মিরাকিউরল। শরীর খারাপ লাগলে নিজেই ডাক্তারি করে মুখে ফেলে দেওয়া যায় টপাটপ। কেবল জ্বরের জন্যই নয়, প্যারাসিটামল অ্যানালজেসিক অর্থাৎ বেদনানাশকও বটে। সুতরাং পেনকিলার খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে যাঁদের, তাঁরাও নিশ্চিন্তে আস্থা রাখেন এই বিশেষ ওষুধটির উপরে। কিন্তু এতখানি আস্থা রাখার আগে জেনে নেওয়াও তো দরকার, সে ঠিক কতখানি বিশ্বাসযোগ্য?
আরও শুনুন: চোখ দেখলেই এবার ধরা পড়বে হার্টের সমস্যা, কোন উপায়ের খোঁজ দিলেন বিজ্ঞানীরা?
আর গোল বেধেছে সেখানেই। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, একটানা প্যারাসিটামলের ব্যবহার বাড়িয়ে দিতে পারে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা। মৌখিক কথা নয়, রীতিমতো তথ্য প্রমাণ হাতে নিয়েই এই দাবি করেছেন তাঁরা।
সম্প্রতি একটি সমীক্ষা চালিয়েছেন এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। ১১০ জনকে তাঁরা বেছে নিয়েছিলেন, যাঁদের প্রত্যেকেরই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। এই রোগীদের দুটি দলে ভাগ করেন তাঁরা। এক দলকে দেওয়া হয় প্যারাসিটামল। একজন রোগীর জন্য ওষুধটির এক গ্রাম করে দিনে চারবার বরাদ্দ করা হয়েছিল। আর অপর দলকে দেওয়া হয়েছিল প্লাসিবো। অর্থাৎ প্যারাসিটামল দেওয়া হয়নি তাঁদের, তবে তাঁদের সে কথা জানানো হয়নি। তাই মন রাখার জন্য একইরকম দেখতে লজেন্স জাতীয় কোনও জিনিস দেওয়া হয়েছিল। দু সপ্তাহ এই রুটিন অনুসরণ করার পর ছকটা উলটে দেওয়া হয়। অর্থাৎ প্যারাসিটামলের দল এবার প্লাসিবো পেতে শুরু করেন। আর যাঁরা এতদিন প্যারাসিটামল পাননি, এবার তাঁদের জন্য প্যারাসিটামল বরাদ্দ হয়। এই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্যারাসিটামল খেয়েছেন যাঁরা, মাত্র চারদিনের মধ্যেই চোখে পড়ার মতো বেড়ে গিয়েছে তাঁদের রক্তচাপের হার। আর তার ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে গিয়েছে অন্তত ২০ শতাংশ।
আরও শুনুন: বদহজমে বেসামাল! তুলসীপাতা কিংবা মৌরিই হতে পারে মহৌষধ
জ্বর কিংবা মাথাব্যথার জন্য প্যারাসিটামল ব্যবহার করা যেতেই পারে, তবে একটানা অনেকদিন এই ওষুধটি খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন ওই বিজ্ঞানীরা। অবশ্য সকলেই যে তাঁদের সঙ্গে একমত, এমনটাও নয়। যেহেতু এই সমীক্ষা হয়েছে একটি নির্দিষ্ট এলাকার অল্প লোকের মধ্যেই, এই সমীক্ষা থেকে কোনও স্থির সত্যে পৌঁছানো উচিত নয় বলে মনে করছেন একাধিক বিজ্ঞানী।
গবেষণা তো চলবেই। তবে যতদিন না কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মেলে, ততদিন সতর্ক হতে তো বাধা নেই। সেইদিকেই জোর ওয়াকিবহাল মহলের।