বিশ্ববিদ্যালয়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ। না, আঁকা, নাচ-গান কিংবা নাটকের নয়। এ প্রশিক্ষণ চলছে খোলা আকাশের নিচে। অধ্যাপক আর পড়ুয়ারা গোল করে বসেছেন মাঠে। আর সেখানেই চলছে ঘুঁটে বানানোর হাতে কলমে প্রশিক্ষণ। কোথায় ঘটেছে এই কাণ্ড? আসুন শুনে নিই।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকে যায় উচ্চশিক্ষার জন্য। তবে এখন বহু কলেজেই পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের কাজ হাতে কলমে শেখানো হয়। তাতে পড়াশোনার পাশাপাশি অন্যান্য সাংস্কৃতিক কাজকর্ম বা অন্যান্য দিকেও দক্ষ হয়ে ওঠেন পড়ুয়ারা। নাচ-গান-নাটক এসবের কর্মশালাও বহু কলেজেই হয়ে থাকে। তাই বলে ঘুঁটে! ঠিকই শুনেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়েই মিলছে এবার ঘুঁটে বানানোর প্রশিক্ষণ। সম্প্রতি এমনই ঘটনার সাক্ষী হয়েছে নেটদুনিয়া। ব্যপারটা দিব্যি ভাইরালও হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
কলেজ আর ঘুঁটে! দুটোকে ঠিক মেলাতে পারছেন না তো! আচ্ছা। ব্যাপারটা তবে খুলেই বলা যাক। ঘটনাটি ঘটেছে বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটিতে। ঘটনাক্রমে সেটা আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লোকসভা কেন্দ্র। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি একটি কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে আরও নানা কিছুর পাশাপাশি ছিল ‘উপালা’ তৈরির বিশেষ কর্মশালা। ঠিকই ধরেছেন, ঘুঁটেকে স্থানীয় ভাষায় ওই নামেই ডাকা হয়। সোশ্যাল সায়েন্স বিভাগের ডিন ও অধ্যাপক কৌশল কিশোর মিশ্রের উপরই দায়িত্ব পড়েছিল ওই বিশেষ কর্মশালার। তিনি রীতিমতো হাতে কলমে ঘুঁটে বানানো শিখিয়েছেন পড়ুয়াদের। পড়ুয়ারাও মনোযোগ দিয়ে শিখেছেন সেসব। অনেকে আবার দক্ষ ভাবে বানিয়েও ফেলেছেন ঘুঁটে। আর সেই ভিডিওই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
আরও শুনুন: জানলা ভেঙে অনুতপ্ত! ক্ষতিপূরণ দিয়ে গেল চোর
আর তা দেখেই হইচই পড়ে গিয়েছে নেটনাগরিকেদের মধ্যে। কলেজের পড়াশোনার সঙ্গে ঘুঁটে তৈরির সম্পর্কটা ঠিক কী, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তবে পরে টুইট করে ব্যপারটা পরিষ্কার করে দেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানান, একটি গ্রামন্নোয়নমূলক কর্মসূচী নেওয়া হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে, তার অঙ্গ হিসেবেই পড়ুয়াদের ঘুঁটে বানানোর শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
অধ্যাপক মিশ্রও জানিয়েছেন, বহু ধর্মীয় পুজোঅর্চনা বা যাগযজ্ঞে ব্যবহার করা হয় ঘুঁটে। রান্নার কাজে জ্বালানী হিসেবেও দরকারি এই জিনিসটি। সরকার যাতে গোবরজাত জ্বালানী বিক্রির জন্য আরও বেশি করে উদ্যোগী হয়, সে জন্য আবেদনও করেছেন তিনি। অধ্যাপকের দাবি, এর ফলে কৃষকদের আয় বাড়বে। শুধু হাতেকলমে ঘুঁটে বানানো শিখলেই হবে না, পড়ুয়াদের দিয়ে গ্রামের মানুষকে এই কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়ানোর উপরেও জোর দিয়েছেন তিনি।
আরও শুনুন: গল্পে নয়, বাস্তবেও ছিল ‘মোগলি’… জঙ্গলে থাকত নেকড়েদের সঙ্গে, ডাকত ঠিক পশুদের মতোই
তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপারটাকে বিশেষ ভাল ভাবে নেননি অনেকেই। উল্টে কড়া সমালোচনাই করেছেন তাঁরা। বেনারস ইউনিভার্সিটির মতো একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার বদলে ঘুঁটে বানানো শেখানো হচ্ছে, তা নিন্দাজনক বলেই টুইটারে ক্ষোভ উগরে দেন অনেকে। কেউ আবার বলেছেন, এ শিক্ষা তো গ্রামের মহিলারাই দিতে পারেন, তার জন্য এত টাকা বেতন দিয়ে অধ্যাপক নিয়োগের প্রয়োজনটা কোথায়!
তবে নিন্দুকেরা যাই বলুক, ঘুঁটের বাজার কিন্তু নেহাৎ মন্দ নয়। আজকাল তো অনলাইনে, বড় বড় ই-কমার্স সংস্থাতেও মেলে এই দ্রব্যটি। নেটনাগরিকেদের কেউ কেউ আবার মস্করা করে বলেছেন, এমনিও চাকরিবাকরির বাজার যা মন্দা! তাতে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই ঘুঁটে বানাতে শেখানোর বুদ্ধিটা কিন্তু খারাপ নয়। কে জানে, পড়ুয়াদের তা কবে কাজে লেগে যায়!