ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। বিধিসম্মত সতর্কীকরণ যতই থাক না কেন, মানুষ সে বিধি মানলে তবে তো! যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁরা নিজের ক্ষতির পাশাপাশি পরিবেশের বারোটাও বাজান নানাভাবে। এদিক ওদিক তাকালেই দেখা যাবে অসংখ্য পোড়া সিগারেটের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে রাস্তায়। কিন্ত কেমন হত, যদি সেই সব সিগারেটের টুকরো ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে যেত কাক! অবাক হচ্ছেন! বাস্তবে কিন্তু এমনটাই কাজে করে দেখিয়ে চমকে দিয়েছে একটি দেশ। আসুন শুনে নিই সেই গল্প।
বছর কয়েক আগে, রাস্তায় পড়ে থাকা একটা চড়াই পাখির ছবি নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। রাস্তায় পড়ে থাকা প্লাস্টিকের টুকরো, খাবার ভেবে খেতে গিয়ে দমবন্ধ হয়ে মারা গিয়েছিল সে। একই কথা প্রযোজ্য পোড়া সিগারেটের টুকরোর ক্ষেত্রেও। সেগুলোও কিন্তু বিপজ্জনক। যারা মনে করেন, সিগারেটের ফিল্টার পরিবেশে মিশে যায়, তাদের উদ্দেশে বলে রাখা ভাল – বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় প্লাস্টিক দূষণ ছড়ায় সিগারেট ফিল্টার। পরিবেশের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক রাসায়নিক থাকে ওই ফিল্টারে। সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ সাধারণত প্লাস্টিক ছাড়া আর কিছুই নয়। এক-এক বছরে ৪৫ লক্ষ কোটি পোড়া সিগারেটের অংশ রাস্তায় এসে পড়ে।
আরও শুনুন: ৪০ মিনিটে খেতে হবে ১০ ফুট লম্বা দোসা, আজব প্রতিযোগিতার আয়োজন রেস্তরাঁয়
এখন যদি এই সব ফিল্টার কুড়িয়ে নিয়ে যায় ঝাড়ুদার পাখি! তবে কেমন হয়! মন্দ তো হয় না। কিন্তু একটা আধটা ফিল্টার কাকেরা খেয়াল করে কুড়িয়ে নিয়ে যেতেই পারে। নিয়ম করে তারা এ কাজ করবেই বা কী করে!
এবার সেই ব্যবস্থাই করল সুইডেন। পরিবেশ রক্ষায় নাগরিকদের সচেতন করতে এবার সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের কাছাকাছি এক শহরের করভিড ক্লিনিং নামের একটি সংস্থা কাকেদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত করার কাজ শুরু করেছে।
প্রশ্ন হল, কাকেদের এমন বিপজ্জনক জিনিস ঠোঁটে করে তোলার ট্রেনিং দেওয়া কেন? যদি গিলে ফেলে! এক্ষেত্রেও করা হয়েছে সমীক্ষা। বিদ্যুতের তার হোক বা গাছের ডাল আটকে থাকা জিনিস – পেড়ে ফেলতে কাক কিন্তু ওস্তাদ। প্রয়োজন পড়লে ডেকে ডেকে সাহায্যে চাইবে আশপাশের কাকেদের থেকে। কাকেদের এই বৈশিষ্ট্যকেই কাজে লাগানো হয়েছে। আর একটি সমীক্ষা বলছে, কোনও কিছু শেখার ক্ষেত্রেও কাকেরা বেশ দড়। বাচ্চাদের মতোই সহজে শিখে ফেলে সবকিছু। আর ভুল করে বর্জ্য গিলে ফেলার সম্ভাবনাও কাকেদের ক্ষেত্রে অন্তত বেশ কম। উপরন্তু কাকেরা একে অন্যের কাজ দেখে অনুকরণও করে। তাতে আরও অনেক বেশি সংখ্যক সিগারেটের ফিল্টার রাস্তা থেকে তুলে আনা সম্ভব হবে। এই ভাবনা থেকেই ঝাড়ুদার পাখিকে লাগানো হয়েছে এই কাজে।
এর আগে ২০১৮ সালে ফ্রান্সের এক ঐতিহাসিক পার্ক থেকে সিগারেট ফিল্টার সাফ করার জন্যেও কাজে লাগানো হয়েছিল কাকেদের। দেখা গেছে বিষয়টা টুরিস্টদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বাড়াতে সহায়কই হয়েছিল।
আরও শুনুন: ম্যাজিক মিষ্টি হাওয়াই মিঠাই, ছোটদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন জনৈক দন্তচিকিৎসকই
কিন্তু তা বলে কাকেরাই বা কেন সারাদিন ঘুরে ঘুরে সিগারেট ফিল্টার জোগাড় করতে যাবে? খাটুনির কি দাম নেই! আছে বই কি! কাজের জন্য তাই তাদের পুরস্কার দেওয়া হবে তো। এক্ষেত্রে সিগারেট ফিল্টার তাদের কাছে টোকেনের কাজ করে। কাকেরা ফিল্টার এনে মেশিনে জমা দিলেই, তারা একটু করে খাবার পাবে সেখান থেকে। যতগুলো ফিল্টার তারা এনে জমা দেবে প্রতিটার বদলে পাবে একটু খাবার। এভাবে একাধারে পরিবেশের দুদিকেরই খেয়াল রেখেছে ওই সংস্থা।
তবে কাকেরা যতই পরিবেশকে সাফসুতরো রাখার কাজ করুক না কেন, সেটাই কিন্তু শেষ কথা নয়। দরকার মানুষের সচেতনতার। ধূমপান যখন ব্যক্তিমানুষ থেকে পরিবেশকে এতটা বিপন্ন করে, তখন তা যত কমিয়ে ফেলা যায়, ততই মঙ্গল মানুষের।