কৃষ্ণ নাকি যশোদার রান্নাঘর থেকে মাঝে মাঝেই ননী চুরি করতেন। এমনটাই বিশ্বাস ভক্তদের। কেবল বিশ্বাস নয়, বাস্তবেও নাকি সেই ননীর একটি তাল দেখা যায় এখনও। কোথায়? আসুন, শুনে নেওয়া যাক সে কথা।
এই বুঝি পড়ল! পড়েই গেল! উঁহু, আপনি যতই বলুন, তার পড়ার নাম নেই। মাধ্যাকর্ষণের যাবতীয় নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সে দাঁড়িয়ে আছে দিব্যি। একেই কৃষ্ণের ননীর তাল বলে ডাকেন সকলে। তবে আদতে ননীর মতো নরম জিনিস নয়, বরং বেশ রুক্ষ শুষ্কই। কারণ এটি আসলে তো আড়াইশো টন ওজনের এক বিরাট পাথর। আর সেই পাথর দেখতেই তামিলনাডুর মহাবলীপুরমে ভিড় জমান হাজার হাজার মানুষ। এমনকি দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী থেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কে নেই সেই তালিকায়!
আরও শুনুন: হ্রদের জল ছুঁলেই নেমে আসে অভিশাপ! পাথর হয়ে যায় জীবন্ত প্রাণীরা
এতখানি ওজন নিয়েও কীভাবে যে ঢালের সঙ্গে ৪৫ ডিগ্রি কোণ করে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়ে গেছে এই পাথর, তা বিশেষজ্ঞদের কাছে এক রহস্য। পাথরটি লম্বায় ৬ মিটার, চওড়ায় ৫ মিটার। আয়তন আগেই বলেছি, ২৫০ টন, অর্থাৎ আড়াই লক্ষ কেজি! এক-দুই বছর নয়, অন্তত ১৩০০ বছর ধরে এভাবেই রয়ে গিয়েছে এই আশ্চর্য পাথর, পরীক্ষানিরীক্ষা করে এমনটাই জানিয়েছেন গবেষকেরা।
বয়সে এত প্রাচীন বলেই নানারকম গল্পও জড়িয়ে গিয়েছে এই বিশেষ পাথরটির সঙ্গে। কেউ এর নামকরণ করেছেন শ্রীকৃষ্ণের প্রসঙ্গ টেনে। আবার স্থানীয় ভাষা তামিলে এই পাথরকে ডাকা হয় ভান ইরাই কাল বলে। যার তরজমা করলে দাঁড়ায় ‘আকাশের দেবতার পাথর’। এই পাথরের ভারসাম্যের খেলা থেকেই নৃত্যরত তাঞ্জাভার পুতুলের অনুপ্রেরণা এসেছিল বলেও মনে করা হয়।
আরও শুনুন: কাঁটাচামচ ব্যবহার করলে অভিশাপ দেবেন দেবতারা, কেন ছিল এমন বিশ্বাস?
এমনিতে এই পাথর সরানোর জন্য কম চেষ্টা করা হয়নি। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও চেষ্টাই সফল হয়নি। শোনা যায় সপ্তম শতকে পল্লব বংশের রাজা নরসিংহবর্মন এই পাথর সরাবার চেষ্টা করেছিলেন। বলাই বাহুল্য, ফল হয়নি। ব্রিটিশ শাসনে আবার এই পাথরটি আলোচনায় উঠে আসে। মানুষের নিরাপত্তার তাগিদেই ১৯০৮ সালে তৎকালীন বড়লাট হ্যাভেলক পাথরটি সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ নেন। কিন্তু সাতটি হাতি লাগিয়েও এই পাথরকে নড়ানো যায়নি। এখনও পর্যন্ত স্বস্থানে সগৌরবেই দাঁড়িয়ে আছে কৃষ্ণের ননীর তাল।