বিশ শতকের জাপানে রেলগাড়ির বাতিল কামরায় স্কুল বসিয়েছিলেন একজন মানুষ। সেইসব ক্লাসরুমে পড়তে বসার জন্য প্রবল উৎসাহ দেখা যেত স্কুলের পড়ুয়াদের মধ্যে। আচ্ছা, আপনার নাহয় স্কুলে পড়ার দিন শেষ, কিন্তু অমন একটা রেলগাড়িতে বসে খানিক অবসর সময় কাটাতে কেমন লাগবে আপনার? আপনাকে সেই সুযোগই এবার এনে দিতে চলেছে ভারতীয় রেল। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
গতির নেশায় মেতে উঠতে কার না ভাল লাগে! একটা লং ড্রাইভে মুখে মাথায় বুলিয়ে নেওয়া হাওয়ার আলতো আদর, কিংবা দূরপাল্লার ট্রেনের জানলা থেকে বাড়িঘর গাছপালা মানুষকে হুড়মুড়িয়ে পিছনে চলে যেতে দেখা, নিদেনপক্ষে এমনিই ট্রেনে চড়ে বসে চাকার দুলুনি উপভোগ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়া, এই সবকিছু, আমাদের অনেকেরই বড্ড প্রিয়। রেলগাড়ি মানেই যেন ছোটবেলার একটা রোমান্টিক নস্টালজিয়া এসে ঘিরে ধরে। আর সেই অনুভূতিকেই আপনি এবার ফিরে দেখতে পারেন অচেনা মোড়কে। সৌজন্যে ভারতীয় রেল। ভাবছেন, ব্যাপারটা কী? তবে খুলেই বলা যাক।
আরও শুনুন: কাঁটাচামচ ব্যবহার করলে অভিশাপ দেবেন দেবতারা, কেন ছিল এমন বিশ্বাস?
সুযোগ পেলেই তো রেস্তরাঁয় খেতে যান। এক-এক রেস্তরাঁর সাজসজ্জা এক-একরকম। আজকাল থিম রেস্তরাঁরও অভাব নেই। অনেকটা সেইরকমই এক রেস্তরাঁ খোলার কথা ভেবেছে ভারতীয় রেল বিভাগ, আর তার সঙ্গেই জুড়ে গিয়েছে পুরনো ট্রেনগুলি। হ্যাঁ, আয় বাড়ানোর তাগিদেই টিকিট বিক্রি ও পরিবহণ ছাড়া অন্যরকম নতুন পথে হাঁটার কথা ভেবেছিল রেল বিভাগ। আর সেই NFR পলিসি, অর্থাৎ নন-ফেয়ার রেভিনিউ পলিসির সূত্রেই এই রেস্তরাঁ খোলার উদ্যোগ নেয় তারা। অভাবনীয় সাড়াও মিলেছে খুব দ্রুত। রেল রেস্তরাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে একটি সংস্থাও। পুরনো দূরপাল্লার ট্রেনের বাতিল কোচগুলিকে সাজিয়ে গুছিয়ে সেখানেই এই রেস্তরাঁ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় রেল। যাতে মানুষ একইসঙ্গে রেস্তরাঁর মতো নানা স্বাদের খাবার চেখে দেখতে পারেন, আবার উপভোগ করতে পারেন ট্রেনের কামরায় বসে থাকার অনুভূতিও।
আরও শুনুন: সুখের খোঁজে গোটা একটা মিউজিয়াম! বিশ্বের কোথায় এমন সংগ্রহশালা আছে জানেন?
সত্যি বলতে, এমন উদ্যোগ কিন্তু এই প্রথম নেওয়া হয়নি। ২০২০ সালেই এই উদ্যোগ নিয়েছিল পূর্ব রেলওয়ে। একটি পুরনো রেলওয়ে কোচের ভিতর রেস্তরাঁ খোলা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল স্টেশনে। এবার সেই পরিকল্পনা পৌঁছে গেল ওয়েস্ট সেন্ট্রাল রেলওয়ে শাখাতেও। আপাতত মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুর স্টেশন থেকেই শুরু হচ্ছে ভারতীয় রেলের এই নয়া যাত্রা। তবে এই পরিকল্পনাতে উৎসাহী হয়ে একই পথে চলার কথা ভেবেছে পশ্চিম-মধ্য রেলওয়ের আরও ছটি স্টেশন। সাজানো ট্রেনের কামরায় ভোজের আসর জমে ওঠা এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।