একদিন দেবী পার্বতীর পাশা খেলার শখ হল। রাজি হলেন মহাদেব। খেলার আয়োজন সম্পূর্ণ, এমন সময় সেখানে মন্দিরের এক পুরোহিত এসে উপস্থিত হলেন। দেবী পার্বতী কৌতূহলে তাঁর কাছে জানতে চাইলেন, বলো তো কে জিতবে? দেবাদিদেব নাকি আমি? পূজারী তাঁদের আগেই চিনতে পেরেছিলেন। তাই বলে ফেললেন, স্বয়ং মহাদেবই বিজেতা হবেন। শুরু হল খেলা।
সোমবার হল শিব ঠাকুরের উপাসনার দিন। শিব ঠাকুরের মেজাজ-মর্জি এমনিতে শান্ত। অল্পেতেই তুষ্ট হন। আবার রেগে গেলে যে তিনি কেমন দক্ষযজ্ঞ বাঁধাতে পারেন, তা-ও আমরা জানি। তো এই শিব ঠাকুরের উপাসনার দিন হিসাবে ধার্য করা হয়েছে সোমবারটিকে। কথিত আছে, সোমবার নিষ্ঠাভরে শিবের উপাসনা করলে দেবাদিদেব তুষ্ট হন। শ্রাবণ মাসের সোমবারে শিবের মাথায় জল ঢালার প্রথা তো আছেই। সেই সঙ্গে ষোল সোমবার শিবের উপাসনার ব্রতও অনেকে পালন করে থাকেন। এই ব্রতের নেপথ্যে একটি কাহিনিও আছে।
আরও শুনুন – কেন স্বয়ং নারায়ণ জ্ঞানে পুজো করা হয় শালগ্রাম শিলা?
প্রচলিত এই কাহিনি অনুযায়ী, একদিন মহাদেব পার্বতীকে সঙ্গে করে ভূলোকে ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। অমরাবতীতে এসে একটি মন্দির দেখে তাঁর ভারী পছন্দ হল। আসলে সেখানকার রাজা মহাদেবের জন্যই এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। সেই মন্দির দেখে এত খুশি হলেন মহাদেব যে, পার্বতীকে নিয়ে ছদ্মবেশে সেই পবিত্র সুন্দর মন্দিরে বাস করতে শুরু করলেন। একদিন দেবী পার্বতীর পাশা খেলার শখ হল। রাজি হলেন মহাদেব। খেলার আয়োজন সম্পূর্ণ, এমন সময় সেখানে মন্দিরের এক পুরোহিত এসে উপস্থিত হলেন। দেবী পার্বতী কৌতূহলে তাঁর কাছে জানতে চাইলেন, বলো তো কে জিতবে? দেবাদিদেব নাকি আমি? পূজারী তাঁদের আগেই চিনতে পেরেছিলেন। তাই বলে ফেললেন, স্বয়ং মহাদেবই বিজেতা হবেন। শুরু হল খেলা। এবার ঘটল আশ্চর্য ঘটনা। অমিত শক্তিধর দেবাদিদেব সেদিন কিছুতেই হারাতে পারলেন না পার্বতীকে। দেবীই জয়লাভ করলেন। পার্বতী তখন সেই পুরোহিতকে বললেন, তুমি ব্রাহ্মণ হয়ে আগে মিথ্যা কথা বলেছিলে! এই বলে দেবী তাকে অভিশাপ দিলেন, আর দারুণ অসুখে আক্রান্ত হলেন সেই পুরোহিত।
আরও শুনুন – শ্রীরামকৃষ্ণের দাস (পর্ব ১৪): অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ, বুঝলেন নরেন্দ্রনাথ
এরপর অনেকদিন কেটে গিয়েছে। একদিন অপ্সরার সেই মন্দিরে এসে পুরোহিতকে আক্রান্ত অবস্থায় দেখতে পেলেন। তাঁরা ব্রাহ্মণকে জিজ্ঞেস করলেন, কেন তাঁর এই অবস্থা? তখন ব্রাহ্মণ দেবীর অভিশাপের কথা খুলে বললেন। অপ্সরার তখন তাঁকে শিবের উপাসনার পরামর্শ দেন। বলেন, ১৬টি সোমবার যদি নিষ্ঠাভরে মহাদেবের পূজা করেন, তবে এই অবস্থা থেকে তিনি মুক্তি পাবেন। পুরোহিত তাই-ই করলেন, আর অসুখ থেকে সেরে উঠলেন।
আরও শুনুন – শ্রীরামকৃষ্ণের দাস (পর্ব ১৩): ঠাকুরের স্পর্শে আচ্ছন্ন নরেন্দ্রনাথ… মা ভাবলেন, ছেলে বুঝি বাঁচবে না!
এরপর থেকেই সেই ব্রাহ্মণ নিয়মিত মহাদেব আর পার্বতীর উপাসনা করেন। আরও বেশ কিছুদিন পরে, একদিন তাঁকে দর্শন দেন পার্বতী এবং মহাদেব। দেবী তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, কী উপায়ে তিনি তাঁর শাপ থেকে মুক্ত হলেন। পুরোহিত জানান, ১৬ সোমবার মহাদেবের পূজার্চনার কথা। মহাদেবের ভজনার কথা শুনে দেবী তাঁকে আশীর্বাদ করেন প্রস্থান করেন।
আরও শুনুন: শ্রীরামকৃষ্ণের দাস (পর্ব ১২): ঠাকুরের সঙ্গেও তর্ক করতেও ছাড়তেন না যুবক নরেন্দ্রনাথ
এই হল ১৬ সোমবার ব্রতের গল্প। শোনা যায়, দেবী পার্বতী নিজেও নাকি একবার এই ব্রত পালন করেছিলেন। সেই থেকে সোমবার করে ব্রতপালনের প্রথা প্রচলিত হয়েছে। কথিত আছে, এই ব্রত পালনে সকল মনস্কামনা পূর্ণ হয়। আর যদিও শিবপূজা মূলত মহিলারাই করে থাকেন, তবে ১৬ সোমবারের এই ব্রত পালন করতে পারেন পুরুষরাও।