কোনও দেবদেবী নন, এই মন্দিরে পুজো হয় এক রাক্ষসের। বছরভর। না না, কোনও অচেনা সভ্যতার কথা বলছি না। বলছি না আদিম বিশ্বাস মেনে চলা কোনও প্রত্যন্ত গ্রামের কথাও। এমন মন্দির রয়েছে এই দেশেই। বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি? তবে শুনে নিন এই বিশেষ মন্দিরটির গল্প।
দেবী দুর্গার বিদায়ের দিনে কেবল দেবী বা তাঁর সন্তান সন্ততিই নন, মিষ্টিমুখ থেকে বাদ পড়ে না মহিষাসুরও। এমন মিলনের সংস্কৃতিই বয়ে নিয়ে চলেছে এ দেশ। তাই দেবতার পাশাপাশি এ দেশে পূজিত হতে পারেন কোনও রাক্ষসও। আর এমনটাই সম্ভব হয়েছে এই বিচিত্র দেশে। এ দেশে এক রাক্ষসীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে একটি মন্দির। সারাবছর পুজো হয় সেখানে। আর বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে এই মন্দিরকে ঘিরেই চলে উৎসব। জানেন কি, কোথায় রয়েছে এই মন্দির?
আরও শুনুন: জলে ডুবে থাকে গর্ভগৃহ, অহংকারেই নাকি হেলে পড়েছিল কাশীর এই মন্দিরের চূড়া
হিমাচলপ্রদেশের শহর মানালি। ছবির মতো সুন্দর শৈলশহরটিতে ছুটি কাটাতে যান অনেকেই। আসেন বিদেশিরাও। আর সেই শহরের একটু দূরেই রয়েছে হিড়িম্বা দেবী মন্দির। চারতলা এই মন্দিরটিকে দেখতে অনেকটা বৌদ্ধ প্যাগোডার মতো। উচ্চতা ২৪ মিটার। ১৫৫৩ সালে মহারাজা বাহাদুর সিং নির্মাণ করেছিলেন এই মন্দিরটি।
স্থানীয়রা যাঁরা মহাভারতের গল্প জানেন, তাঁদের কাছে অবশ্য হিড়িম্বা নামটি চেনা চেনা ঠেকার কথা। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। সেই হিড়িম্বা রাক্ষসীর কথাই হচ্ছে, যিনি বিয়ে করতে চেয়েছিলেন মধ্যম পাণ্ডব ভীমকে। বারণাবতের জতুগৃহ থেকে বেঁচে যাওয়ার পর পাণ্ডবরা যখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, সেই সময়েই তাঁরা এসে পৌঁছান এক বনে। এই বন ছিল হিড়িম্ব রাক্ষসের দখলে। পাণ্ডবদের ধরে আনার জন্য নিজের বোন হিড়িম্বাকে পাঠিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ফল হল বিপরীত। ভীমকে দেখে প্রেমে পড়ে গেলেন হিড়িম্বা। এদিকে হিড়িম্ব আর ভীমের যুদ্ধে নিহত হলেন হিড়িম্ব। কিন্তু হিড়িম্বার প্রেম নিবেদনে সাড়া দিলেন না। অবশেষে কুন্তীর হস্তক্ষেপে ভীম হিড়িম্বাকে বিয়ে করতে রাজি হন। ঘটোৎকচ তাঁদেরই পুত্র।
আরও শুনুন: চিতা বাঘকে দুধ খাওয়ান মন্দিরের পুরোহিত, অদ্ভুত এই গ্রামের গল্প জানেন?
এখনও হিড়িম্বা দেবী মন্দির ঘিরে রয়েছে অরণ্য। ধুনগিরি বনবিহার নামেই পরিচিত এই বন। মন্দিরের পাশে ভীম আর ঘটোৎকচের মন্দিরও রয়েছে। মন্দিরটিতে হিড়িম্বার পায়ের ছাপ রয়েছে বলে দাবি করেন ভক্তরা। নবরাত্রির সময় উত্তর ভারত যখন দেবী দুর্গার আরাধনায় মেতে ওঠে, তখনও হিড়িম্বা দেবীর মন্দিরেই সমাগত হন এই অঞ্চলের মানুষ।
ভক্তদের মতে, দীর্ঘ সাধনায় দেবীত্বে উন্নীত হয়েছিলেন হিড়িম্বা। ভারতবর্ষের পুরাণ তো বিশ্বামিত্রের কথাও বলে, যিনি ক্ষত্রিয় থেকে ব্রাহ্মণের গুণ অর্জন করেছিলেন সাধনার বলেই। দেব-ঋষি-রাক্ষসের কাহিনির বাইরে গিয়েও লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সাধনার কথা বলে এইসব আখ্যান। আর সেই আখ্যানের অংশ হয়ে থাকে হিড়িম্বা মন্দিরও।