তাঁদের প্রথমবার দেখে টেলিভিশনের দুঁদে সঞ্চালক কপিল শর্মা পর্যন্ত হকচকিয়ে গিয়েছিলেন। যমজ বোন। দেখতে যে প্রায় এক হবেন- সে তো স্বাভাবিক। দুজনের সাজ-পোশাক, চালচলনও হুবহু এক। তবে মজার বিষয় হল, তাঁরা দুজন একই কথা বলেন, আর বলেন একই লয়ে। ঠিকই ধরেছেন। টিভি এবং নেটদুনিয়ায় অত্যন্ত জনপ্রিয় এই দুই বোন হলেন চিঙ্কি আর মিঙ্কি। এ কিন্তু তাঁদের আসল নাম নয়। তাহলে কী তাঁদের পরিচয়? আসুন চিনে নেওয়া যাক দুই বোনকে।
ঠিক যেন কলের পুতুল। একই কথা বলে চলেছেন দুজনে। একই ছন্দে, একই লয়ে। একেবারে কাঁটায় কাঁটায় মিল। টেলিভিশনের পর্দায় যখন তাঁদের দেখা গেল, দর্শক তো হতবাক। এরকম আশ্চর্য টিউনিং আবার হয় নাকি! হয় যে, তা তো দুই বোন কাজে করে দেখিয়েই দিয়েছেন। তাঁদের এই ক্ষমতা মাথায় রেখেই লেখা হয়েছে স্কিট। আর তাতেই হেসে খুন দর্শকরা। যখন তাঁরা একে অন্যের দিকে আঙুল তুলে বলেন ‘ইসকি পাতা নেহি’, তখন যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়, সেটাই তাঁদের ইউএসপি। আর সন্দেহ নেই যে, তাঁরা দুরন্ত পারফর্মার। চিঙ্কি আর মিঙ্কি। দর্শক এখন এক ডাকেই চেনেন তাঁদের।
আরও শুনুন – বাজিরাও থেকে কপিল দেব – রণবীরই কি বলিউডের নতুন ‘মিঃ পারফেকশনিস্ট’?
এ অবশ্য তাঁদের আসল নাম নয়। তাঁদের একজনের নাম সৌরভি, অন্যজনের নাম সমৃদ্ধি। নয়ডার মেহরা পরিবারে এই দুই যমজ বোনের জন্ম হয় ১৯৯৮ সালে, ২৭ ডিসেম্বর। অর্থাৎ দুজনেই বছর ২৩-এর তরুণী এখন। তাঁদের উত্থান সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতেই। ছোট ছোট মজার কন্টেন্ট, কখনও বা জনপ্রিয় গানে নাচ। ভিডিও তৈরি করে তাঁরা তা পোস্ট করতেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। কন্টেন্ট মনে ধরে দর্শকের। রাতারাতি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন তাঁরা। দুই তরুণীর সৌন্দর্য শুধু নয়, এত অল্প বয়সে যেভাবে তাঁরা পারফর্ম করেন বিভিন্ন সাবজেক্টে, তা নেটদুনিয়ার দর্শককে চুম্বকের মতো টেনে রেখেছিল। এই জনপ্রিয়তাই তাঁদের একদিন টেনে আনে কপিল শর্মার শো-এ। ২০১৯-এর জুন মাস। বলা যায় দুই বোনের কেরিয়ারে একটা নতুন অধ্যায়ের দিন ছিল সেটি। একটি মজার স্কিট নিয়ে হাজির হন তাঁরা। সঞ্চালক কপিল শর্মার কাছে তাঁরা অভিযোগ জানাতে এসেছেন। কী ব্যাপারে? না, কপিলের বন্ধু চন্দু তাঁদের খুব জ্বালাতন করেছে। সে ব্যাপারে কপিল যেন ব্যবস্থা নেন। এটুকুই বিষয়। কিন্তু মজা হল, দুই বোন একই কথা বলেন একই সঙ্গে। কপিলের যে কোনও প্রশ্নের উত্তরে তাঁরা জানাতে থাকেন, আমি এটা করেছি বা আমি এটা বলেছি কিন্তু ওর ব্যাপারে জানি না। বলে পরস্পরের দিকে আঙুল দেখিয়ে দেন। উল্টোদিকের মানুষটা ফলে বুঝতে পারেন না, দুজনের মধ্যে কোনজনের কথা বলা হচ্ছে আর কোনজনের কথা বলা হচ্ছে না। এই গোলধাঁধাতেই মজে যান দর্শক। আর আবারও প্রায় রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন চিঙ্কি-মিঙ্কি। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। একাধিক ছোটপর্দার অনুষ্ঠান, রিয়ালিটি শো, অ্যাওয়ার্ড শো-এ দেখা যায় তাঁদের। এমনকী বরুণ ধাওয়ান যখন ‘জুড়ুয়া-২’ ছবির ট্রেলার লঞ্চ করলেন, তখনও ডাক পড়েছিল চিঙ্কি-মিঙ্কিরই।
আরও শুনুন – গ্রামের মানুষের চরিত্রে অভিনয়, গ্রামবাসীর তারিফ শুনে তবে ভরসা পেলেন অভিনেতা সৌমিত্র
স্ট্যান্ড আপ কমেডির ফর্ম্যাট এখন অনেকটাই বদলেছে। পুরুষ ও মহিলা পারফর্মররা অনেকটাই খোলা স্পেস পাচ্ছেন নিজেদের স্কিল প্রদর্শনের। কপিল কিংবা ভারতীরা স্টেজ মাতিয়ে দিচ্ছেন। সেই পরিসরকে চমৎকার কাজে লাগিয়েছেন এই দুই বোন। কন্টেন্ট, স্কিল, প্র্যাকটিস আর পারফরমেন্স – এই চার মন্ত্রেই যে সাফল্য ছিনিয়ে নেওয়া যায়, বয়স যে সেখানে ফ্যাক্টর নয়, তা প্রমাণ করে দিয়েছেন সৌরভি-সমৃদ্ধি ওরফে চিঙ্কি-মিঙ্কি।