ভারতের সর্বোচ্চ সেনা সম্মান পরমবীর চক্র। দেশরক্ষা যাঁদের ব্রত, তাঁদের সম্মান জানানো হয় এই পদকের মাধ্যমে। আর এই পদকটি রূপায়ণের নেপথ্যে ছিলেন একজন সুইস রমণী। জন্মসূত্রে বিদেশি হলেও, বলা যায়, ভারতীয় সংস্কৃতিকে তিনি যেন আপন করে নিয়েছিলেন ঠিক একজন ভারতবাসীর মতোই। তিনি সাবিত্রী খানোলকর। আসুন শুনে নিই সেই বিদেশিনীর গল্প।
দেশের সৈনিকদের সাহস, শৌর্য ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতি পরমবীর চক্র। এই পদকটির নকশা যার মস্তিষ্কপ্রসূত, তিনি কিন্তু ভারতীয় নন। তিনি সাবিত্রী খানোলকর। জন্মসূত্রে সুইস। অবশ্য কথাবার্তা থেকে শুরু করে পোশাকআশাক – কোনও কিছু দেখেই তা বোঝার উপায় ছিল না। ভারতীয় পুরাণ থেকে শুরু করে ধর্মগ্রন্থ – সবকিছুতেই তাঁর ছিল অসামান্য দখল।
আরও শুনুন: তাঁর মৃতদেহের উপরে পড়ুক মানুষের পায়ের ছাপ, চেয়েছিলেন বাংলার এই নবাব
তাঁর জন্ম সুইজারল্যান্ডের নুশাটেলে। বাবা-মা নাম রেখেছিলেন ইভ। বাবা জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, মা পড়াতেন একটি রুশ ইনস্টিটিউটে। অধ্যাপনার পাশাপাশি একটি লাইব্রেরিতে গ্রন্থাগারিকের কাজও করতেন তাঁর বাবা। স্কুলের ছুটিতে সেখান থেকে নানা ধরনের বইপত্র সংগ্রহ করে পড়তেন ইভ। সেই বই পড়ার নেশাতেই একদিন ভারতীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে পরিচয় ঘটে ইভের। সুইজারল্যান্ডে থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল ভারতীয় মেজর জেনারেল বিক্রম খানোলকরের সঙ্গে। তখনও অবশ্য তিনি মেজর জেনারেল হননি। প্রথম দর্শনেই পরস্পরের প্রেমে পড়েছিলেন তাঁরা। চিঠিপত্র চালাচালিও চলেছে দীর্ঘদিন। তবে ইভের বাবা চাননি যে মেয়ে ভারতে যাক। তাছাড়া বিক্রমের সঙ্গে ইভের বয়সের ব্যবধানও তো অনেকটাই। তবে সেসব ওজর-আপত্তি শেষমেশ টেকেনি। সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে একদিন ভারতে চলে এসেছিলেন দৃঢ়চেতা ইভ। মাত্র ১৯ বছর বয়স তখন তাঁর। লখনউতে হিন্দুরীতি মেনেই বিক্রম খানোলকারের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ইভের। গ্রহণ করেছিলেন হিন্দু ধর্ম, তাঁর নতুন নাম হল সাবিত্রী বাই খানোলকার। বিয়ের পর দ্রুত মারাঠি, সংস্কৃত ও হিন্দি শিখে ফেলতে শুরু করলেন সাবিত্রী। ক্যাপ্টেন বিক্রম ততদিনে মেজর হয়ে পাটনায় বদলি হয়েছেন। এই সময় পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত নাটক, বেদান্ত উপনিষদ ও হিন্দু ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলেন সাবিত্রী। আঁকতেও খুব ভালবাসতেন তিনি। পৌরাণিক বিষয়ই বারবার তাঁর আঁকার বিষয় হয়ে উঠত। পাশাপাশি পণ্ডিত উদয় শঙ্করের কাছে নাচও শিখেছেন তিনি। ক্রমশ ভারতীয় সংস্কৃতিকে আরও গভীর ভাবে আত্মস্থ করছিলেন সাবিত্রী।
আরও শুনুন: দক্ষিণেশ্বর থেকে এল মায়ের আশীর্বাদ, ব্রিটিশ গোয়েন্দার চোখে ধুলো দিয়ে দেশ ছাড়লেন সুভাষ
এই সাবিত্রী কী করে পরমবীর চক্রের রূপায়ণে ভূমিকা নিলেন এবার আসা যাক সে-গল্পেই। ব্রিটিশ জমানায় সামরিক ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সম্মান ছিল ভিক্টোরিয়া ক্রস। কিন্তু স্বাধীন ভারতে তো আর ভিক্টোরিয়া ক্রস দেওয়া চলে না। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করলেন। তিনি এই দায়িত্ব দিলেন হীরালাল অটলকে। এরকম একটা পদকের নকশা কে করতে পারেন? ভাবতে বসে হীরালালের প্রথমেই মনে হয়েছিল সাবিত্রীর কথা। পরমবীর চক্র পদকের নকশা তৈরি করার দায়িত্ব এবার এসে পড়ল তাঁর উপরেই।
বাকি অংশ শুনে নিন।