বইয়ের লাইব্রেরির কথা তো শুনেছেন! কিন্তু আমাদের দেশেই যে শাড়ির লাইব্রেরি আছে, সে কথা জানতেন কি! খুব সামান্য অর্থের বিনিময়ে সেখান থেকে ভাড়া নেওয়া যায় পছন্দের শাড়ি। আসুন, শুনে নেওয়া যাক এই অভিনব শাড়ি লাইব্রেরির কথা।
‘আস্থা সহেলি’। শাড়ির লাইব্রেরির এমনই নাম রেখেছেন গুজরাটের বাসিন্দা হেমা চৌহান। বয়স ষাটের কোঠায়। বছর দেড়েক আগে বন্ধুদের সঙ্গে মিলে খুলে ফেলেছেন অভিনব এক লাইব্রেরি। শুধু নামে নয়, মহিলাদের কাছে সত্যিই ‘সহেলি’ হয়ে উঠেছে হেমার এই লাইব্রেরি। বিয়েবাড়ি হোক বা অনুষ্ঠান, কী পরে যাবেন, এসব নিয়ে আর মাথা ঘামাতেই হয় না স্থানীয় মহিলাদের। তাঁরা জানেন, ‘সহেলি’ তো রয়েইছে তাঁদের পাশে।
আরও শুনুন – গল্পে নয়, বাস্তবেও ছিল ‘মোগলি’… জঙ্গলে থাকত নেকড়েদের সঙ্গে, ডাকত ঠিক পশুদের মতোই
বইয়ের লাইব্রেরির মতোই ব্যাপারটা অনেকটা। বইয়ের লাইব্রেরি থেকে রকমারি বই তুলে এনে পড়তে পারেন পাঠক। তার জন্য লাইব্রেরিকে দিতে হয় মাসিক বা বার্ষিক হারে কিছু দক্ষিণা। হেমার লাইব্রেরিও ঠিক তেমন ভাবেই শাড়ি ধার দেন মহিলাদের। তার জন্য দিতে হবে শাড়িপিছু মাত্র ২৫০ টাকা।
সর্বাধিক তিনটে পর্যন্ত শাড়ি লাইব্রেরি থেকে নেওয়া যায়। তবে পাঁচদিনের বেশি শাড়ি আটকে রাখার নিয়ম নেই। একেবারে প্রথমে পাঁচশো টাকা সিকিওরিটি মানি হিসেবে রাখেন হেমারা, যার থেকে ড্রাই ওয়াশের খরচটুকু বাদ দিয়ে শাড়ি ফেরত দেওয়ার সময় বাকিটা ফেরত পেয়ে যান গ্রাহকেরা। ব্যস, এই নিয়ম কটা মানলেই পছন্দসই শাড়ি বাড়ি নিয়ে আসতে পারবেন যে কেউ।
আরও শুনুন: বয়স ১০০ ছুঁই ছুঁই, পেশা জুতো সারাই, নেশা কাউন্সেলিং… এই বৃদ্ধকে দেখে বিস্মিত দেশবাসী
২০২০ সালের জুন মাসে আট বন্ধুকে নিয়ে একটি কোর কমিটি তৈরি করেন হেমা। প্রাথমিক ভাবে শুরুটা হয়েছিল ছোট করেই। বছর খানেক আগে হেমার পরিচারিকাকে ভাইয়ের বিয়েতে পরার জন্য শাড়ি ধার দিয়েছিলেন হেমা। সেই শাড়ির জন্য এত প্রশংসা পেয়েছিলেন যে, শাড়িটি পরিচারিকাকে উপহারই দিয়ে ফেলেছিলেন। তবে সেখান থেকেই তাঁর মাথায় এসেছিল অভিনব এই শাড়ির লাইব্রেরি খোলার বুদ্ধি।
২০২১ সালের অক্টোবরে আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মপ্রকাশ করে ‘আস্থা সহেলি’। নিজেদেরই একটি বাড়িকে শাড়ির লাইব্রেরি হিসেবে সাজিয়ে ফেলেছেন হেমারা। তার পরে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রায় চারশোরও বেশি শাড়ি রয়েছে হেমার লাইব্রেরিতে। না, বাইরে থেকে আলাদা করে কোনও কর্মী রাখেননি হেমারা। বন্ধুরা মিলেই বিভিন্ন শিফটে এসে এই শাড়ির লাইব্রেরির দেখাশোনা করেন। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ইতিমধ্যেই ব্যাপক প্রচার হয়েছে তাঁদের এই উদ্যোগের।
হেমারা সকলেই হোমমেকার। পছন্দের শাড়িই যে একদিন তাঁদের স্বনির্ভর হয়ে ওঠার পথ দেখাবে, তা ভাবেননি কেউই। সংসার সামলানোর হাজারটা দায়িত্বের মধ্যে তাদের কাছে এক অন্য ভুবন হয়ে উঠেছে ‘আস্থা সহেলি’।