ঠিকানা লিখতে গেলে কী কী কলাম থাকে? শহরের নাম, জেলার নাম, রাজ্যের নাম, দেশের নাম, এই তো? ভাবুন তো, শহরের নাম লিখলেন, অথচ দেশের নাম কী লিখবেন বুঝতে পারছেন না, তাহলে কেমন হবে ব্যাপারটা? একটা শহরের অধিবাসীদের ক্ষেত্রে কিন্তু সত্যি সত্যিই ঘটে এমনটা। কীভাবে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
আজগুবি নয়! এক্কেবারে সত্যিকারের কথা। দেশের নাম লিখতে গেলেই মুশকিলে পড়েন এই শহরের অধিবাসীরা। আর পড়বেন নাই বা কেন! একটা শূন্যস্থানে তো আর দুটো নাম লেখা চলে না। শহর একটাই। এদিকে তার মালিকানা দাবি করে নাকি দুটো আলাদা আলাদা দেশ। হ্যাঁ, ঠিক এমনটাই ঘটে চলে বাসিংজেন এম হকরহেইন, বা বাসিংজেন অন আপার রাইন শহরের বাসিন্দাদের জীবনে। রাইন নদীর তীরে গড়ে ওঠা এই শহরের চলতি নাম বাসিংজেন। শহরটি আসলে সুইটজারল্যান্ডের অন্তর্গত। কিন্তু এই শহরের মালিকানার অংশীদার জার্মানিও। আর এই দুই দেশের মালিকানা স্বীকার করেই দিব্যি রয়েছে এই শহরটি।
আরও শুনুন: তিনি মেয়র, তিনিই নাগরিক… আশ্চর্য এই শহরের বাসিন্দা মাত্র একজনই
আসলে অস্ট্রিয়ার আওতায় থাকা বাসিংজেনের লর্ড চোদ্দ শতকে এই শহরকে সমর্পণ করেন। তবে সুইটজারল্যান্ডের কাছে নয়, পড়শি দেশ জার্মানির কাছে। মানচিত্র অনুযায়ী, বাসিংজেন শহরের মূল ভূমিখণ্ড জার্মানি থেকে পৃথক। কিন্তু দুই ভূমিকে আলাদা করার কাজটি করেছে আরও একটি সরু জমি। এতটাই সরু যে, এক-এক জায়গায় তা ৭০০ মিটারেরও কম চওড়া। অর্থাৎ বিভেদের এই সীমারেখা আদতে না থাকারই মতো। ফলে সরকারিভাবেই জার্মানির নিয়ন্ত্রণেও রয়েছে ওই অঞ্চল। আর সুইটজারল্যান্ডে তো ভৌগোলিক ভাবেই এর অবস্থান পাকা। সুতরাং একটাই শহর, কিন্তু তার মালিকানা সত্যি সত্যিই বর্তেছে দুই রাষ্ট্রের উপর।
আরও শুনুন: গল্পে নয়, বাস্তবেও ছিল ‘মোগলি’… জঙ্গলে থাকত নেকড়েদের সঙ্গে, ডাকত ঠিক পশুদের মতোই
তবে, এই অধিকার নিয়ে টানাপোড়েন নেই কিন্তু। বরং এর বিনিময়ে ওই শহরটি সুবিধা পায় উভয় রাষ্ট্রের কাছ থেকেই। জার্মানি এবং সুইটজারল্যান্ড, দুই দেশেরই পোস্টাল কোড নির্ধারণ করা হয়েছে এই শহরের জন্য। একই নিয়ম জারি টেলিফোন কোডের ক্ষেত্রেও। অর্থাৎ প্রশাসনিক খাতাপত্তরে শহরের মালিকানা নিয়ে যে কোনও গোল নেই, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। আমরা যারা কাশ্মীর সমস্যার কথা জানি, তাদের কাছে অবশ্য আশ্চর্য লাগারই কথা। কিন্তু বাসিংজেন শহরের বাসিন্দাদের কাছে এমনটাই সত্যি, এটাই স্বাভাবিকও। মজার কথা হল, কোনও সমস্যায় যদি পুলিশকে ডাকার প্রয়োজন পড়ে, দুটি দেশের মধ্যে যে কোনোটির পুলিশকেই ডেকে নিতে বাধা নেই শহরের অধিবাসীদের। তবে বেশি তাড়াতাড়ি অকুস্থলে পৌঁছতে পারে সুইস পুলিশই। আর এইভাবেই, সম্প্রীতির এক অভিনব নজির জারি রেখেছে বাসিংজেন শহর।