দেশ জুড়ে এসে গিয়েছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। প্রায় প্রত্যেক ঘরে জ্বর-সর্দি-কাশি লেগেই রয়েছে। কেউ টেস্ট করাচ্ছেন, কেউ করাচ্ছেন না। টেস্ট করিয়ে রিপোর্ট পজিটিভ এলে কী ওষুধ খাবেন,কী ভাবে চিকিৎসা করাবেন, কতটা অসুস্থতা বাড়লে হাসপাতালের দ্বারস্থ হবেন, তা নিয়েও রয়েছে একগুচ্ছ বিভ্রান্তি। সেই ধোঁয়াশা কাটাতেই এবার কোভিড চিকিৎসার নয়া গাইডলাইন ঘোষণা করল কেন্দ্র। শুধু কোভিড-রোগীদের জন্যই নয়, চিকিৎসকদের জন্যও প্রকাশ করা হয়েছে একগুচ্ছ নয়া নিয়ম। কী রয়েছে সেই নয়া নির্দেশিকায়, শুনে নিন।
দাপট দেখাচ্ছে করোনা। আক্রান্তদের সকলেই যে কোভিডের নয়া স্ট্রেন ওমিক্রনের শিকার, তা নয়। রয়েছেন ডেল্টা আক্রান্তরাও। মারাত্মক সংক্রামক ওমিক্রন ছড়াচ্ছে ঝড়ের বেগে। আগের স্ট্রেনগুলোর চেয়ে উপসর্গের দিক দিয়ে অনেকখানিই আলাদা ওমিক্রন। সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশির মতোই হালকা উপসর্গ, স্বাদ-গন্ধ যাওয়ার সমস্যা নেই বললেই চলে। নেই শ্বাসকষ্টের সমস্যাও। অনেকেই সাধারণ জ্বর ভেবে টেস্ট পর্যন্ত করাচ্ছেন না। আর যাঁরা পরীক্ষা করিয়ে পজিটিভ রিপোর্ট পাচ্ছেন, তাঁরা অনেক সময়ই চিকিৎসা নিয়ে ধন্দে পড়ে যাচ্ছেন। কী ওষুধ খাবেন, চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন কিনা, কতটা অসুস্থতায় হাসপাতালে যাওয়া উচিত, সবেতেই রয়েছে অস্পষ্টতা। করোনার আগের ঢেউগুলিতে যেসব ওষুধ ব্যবহার হয়েছে, তৃতীয় ঢেউয়ের ক্ষেত্রেও কি ব্যবহার করা হবে একই রকম ওষুধ! সে সব নিয়েও রয়েছে একরাশ জিজ্ঞাসা। এই পরিস্থিতিতে ধোঁয়াশা কাটাতে কোভিড চিকিৎসা নিয়ে নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ করছে কেন্দ্র।
আরও শুনুন: ওমিক্রনকে সাধারণ জ্বর ভেবে নিজেই নিজের ডাক্তারি করছেন! বড় কোনও ভুল করছেন না তো?
দিন কয়েক আগেই একটি সাংবাদিক বৈঠকে কোভিড চিকিৎসায় স্টেরয়েডের অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ে সতর্ক করেছিলেন নীতি আয়োগের সদস্য ও কেন্দ্রীয় কোভিড টাস্ক ফোর্সের প্রধান ভি কে পাল। নয়া নির্দেশিকায় কেন্দ্রের তরফে সাফ জানানো হয়েছে মধ্যম ও মৃদু উপসর্গের রোগীদের ক্ষেত্রে স্টেরয়েড ব্যবহারের কোনও প্রয়োজন নেই।
কোভিড চিকিৎসায় এর আগের ঢেউগুলিতে স্টেরয়েড ব্যবহারের বেশ চল ছিল। বিশেষজ্ঞদের মত, স্টেরয়েডের মতো ওষুধ বেশিদিন ব্যবহার হলে দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে অনেকেই কোভিড থেকে সেরে উঠে আক্রান্ত হয়েছিলেন মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে। এই ধরনের ওষুধ ব্যবহারের ফলে বাড়ে সেই আশঙ্কা।
পাশাপাশি রেমডিসিভার ওষুধটি প্রয়োগেও লাগাম টানার কথা জানানো হয়েছে নয়া নির্দেশিকায়। সেখানে বলা হয়েছে, দশদিন ধরে উপসর্গ রয়েছে এবং অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে, এমন রোগীকেই শুধু রেমডিসিভার দেওয়া যাবে। ভেন্টিলেটর বা একমোতে থাকা রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না এই ওষুধ।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, কোভিড থেকে সেরে ওঠার পরেও দু-তিন সপ্তাহ পর্যন্ত কাশির সমস্যায় ভুগছেন অনেকেই। সে সব ক্ষেত্রে টিউবারকিউলোসিস বা টিবি-র পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে নয়া নির্দেশিকায়।
আরও শুনুন: ওমিক্রনের ঠেলায় কোমরে-পিঠে ভয়ানক ব্যথা! কী করলে মিলবে উপশম?
নতুন এই নির্দেশিকায় কোভিড রোগীদের সংক্রমণকে মাইল্ড, মডারেট ও সিভিয়ার – এই তিন ভাগে ভাগ করার কথা বলা হয়েছে।
যাঁদের আপার রেসপিরেটরি ট্যাক্টের সমস্যা অর্থাৎ নাক বন্ধ, গলায় ব্যথা বা জ্বালার মতো অসুবিধায় ভুগছেন, সঙ্গে রয়েছে সামান্য শ্বাসকষ্ট বা হাইপক্সিয়ার সমস্যা, তাঁদের সংক্রমণ মাইল্ড বলে জানানো হয়েছে নয়া নির্দেশিকায়। সেক্ষেত্রে তাঁদের বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা করালেই হবে।
কিন্তু যাঁদের চার-পাঁচ দিন ধরে জ্বর থাকছে, তার সঙ্গে রয়েছে শ্বাস ও কফের সমস্যা, তাঁদের সংক্রমণ মডারেট। সেক্ষেত্রে তাঁদের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। শ্বাসের সমস্যা, অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০-৯৩ এর মধ্যে ঘোরাফেরা করলে সেক্ষেত্রে অক্সিজেন সাপোর্টেরও প্রয়োজন হতে পারে।
তবে অক্সিজেন স্যাচুরেশন নব্বইয়ের নিচে নেমে গেলে বা রেসপিরেটরি রেট প্রতি মিনিটে তিরিশের উপরে উঠে গেলে তাঁর সংক্রমণ সিভিয়ার তথা মারাত্মক বলে ধরে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে তাঁদের তৎক্ষনাৎ হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নির্দেশিকায়। বাইরে থেকে রেসপিরেটরি সাপোর্টের প্রয়োজন রয়েছে তাঁদের। দরকার পড়লে রাখতে হতে পারে আইসিইউ-তেও।