ওমিক্রন আমাদের বেশ ভালমতোই কাবু করে ফেলেছে। কেউ কেউ ইতিমধ্যেই ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁরা নিভৃতবাস শেষে পরীক্ষা করে দেখে নিচ্ছেন শরীর থেকে ভাইরাস গেল কি-না। কেউবা আবার আক্রান্ত হয়েছেন কিনা তা পরখ করে নিচ্ছেন। মোদ্দা কথা, অনেকেই কিট এনে নিজেই টেস্ট করিয়ে নিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে দু-একটা জরুরি বিষয় খেয়াল রাখা উচিত। আসুন বিশদে শুনে নেওয়া যাক।
করোনার যে কোনও ভ্যারিয়েন্টে একজন ব্যক্তি আক্রান্ত কি না জানতে মূলত দুরকমের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নাজাল স্যোয়াব আর মুখের ভিতরকার নমুনা অর্থাৎ সালাইভা। ওমিক্রনের ক্ষেত্রেও সেই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক্ষেত্রে নাকের থেকেও মুখ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ সালাইভা পরীক্ষার মাধ্যমেই ওমিক্রনের হদিশ মিলবে নিখুঁত ভাবে।
আরও শুনুন: ওমিক্রনকে সাধারণ জ্বর ভেবে নিজেই নিজের ডাক্তারি করছেন! বড় কোনও ভুল করছেন না তো?
শ্বাসযন্ত্রের যে কোনও সংক্রমণের ক্ষেত্রে বরাবর নাককেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে যখন গোটা বিশ্বে দ্রুত ছেয়ে গেল, তখন বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই একটা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তা হল, নাকের থেকেও কি এক্ষেত্রে মুখ বেশি গুরুত্বপূর্ণ? চিকিৎসকরা বলছেন, ভাইরাসটিকে প্রথমে গলার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে অর্থাৎ শরীরের ওই অংশেই তার প্রথম আক্রমণ। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ওমিক্রন নাকে পৌঁছানোর আগে বা শ্বাসযন্ত্রের ওই অংশে ঘাঁটি গেড়ে বসার আগে গলার মধ্যেই থাকছে বহাল তবিয়তে। চলছে তার যাওবতীয় কারিকুরি। সেক্ষেত্রে নাজাল স্যোয়াবের পরিবর্তে সালাইভা পরীক্ষা করলেই নিখুঁত ফল পাওয়া সম্ভব বলে মত বিশেষজ্ঞদের। শরীরে ওমিক্রনের আক্রমণ হয়েছে কি-না তা সালাইভা পরীক্ষায় আগে চিহ্নিত করা সম্ভব, নাজাল স্যোয়াবের ক্ষেত্রে তা গোড়াতে ধরা নাও পড়তে পারে।
আরও শুনুন: কবে থামবে ওমিক্রন ঝড়! তৃতীয় ঢেউ শেষের সময় জানালেন বিশেষজ্ঞরা
তা ছাড়া নাজাল সোয়্যাব সংগ্রহ করার কাজটিও সহজ নয়। এ ব্যাপারে প্রশিক্ষিত না হলে অনেক সময়ই পরীক্ষার ফলাফল ভুল হয়ে যায়। ল্যাবে যাঁরা কাজ করেন, যাঁরা নমুনা সংগ্রহ করেন, তাঁরা জানেন এই পদ্ধতির খুঁটিনাটি। কিন্তু হোম-কিটে যাঁরা বাড়িতেই পরীক্ষা করছেন, তাঁরা এ ব্যাপারে ততটা দড় না-ও হতে পারেন। নমুনা সংগ্রহের ভুলে যদি ভুল ফলাফল হাতে আসে তবে চিকিৎসা ব্যাহত হবে। সেই নিরিখে বরং মুখের ভিতরকার লালা সংগ্রহ অনেকটাই সহজ। এবং তাতে ভাইরাসের উপস্থিতি খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। এইদিক থেকে নাক নয়, অন্তত ওমিক্রনের ক্ষেত্রে মুখকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এ ব্যাপারে এটিই যে শেষ কথা এমনটা বলা যায় না। কেননা অতিমারী পর্বে আমাদের বিজ্ঞানীরা ক্রমাগত কাজ করে চলেছেন। ওষুধ, ভ্যাকসিন থেকে শুরু করে মানুষের জন্য সবথেকে সুবিধাজনক টেস্টিং-এর ব্যবস্থাও তাঁরা করছেন। সেই গবেষণা বা পর্যবেক্ষণের ফলেই এই নতুন সিদ্ধান্তের দিকে এগোনো। এতদিন পর্যন্ত সালাইভা বা মুখের ভিতরকার নমুনাকে তেমন প্রামান্য বলে গণ্য করা হত না। যদিও তা পরীক্ষা করা হত, তবু নাজাল সোয়াবের উপর জোরটাই ছিল বেশি। কিন্তু ওমিক্রনের ধর্ম সেই বিশ্বাসে এনেছে বদল। অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের থেকে এর ক্ষমতা এতটা আলাদা যে, বিজ্ঞানীদের নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। মুখ এবং গলার মধ্যে ওমিক্রনের দ্রুত রেপ্লিকেট করার ক্ষমতার প্রমাণ ইতিমধ্যেই মিলছে। শ্বাসযন্ত্রের অন্যান্য অংশে পৌঁছানোর আগেই সে যে এখানে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করছে, তাও দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। তাই এই মুহূর্তে সালাইভা পরীক্ষার উপর জোর দিতে বলছেন তাঁরা। বলা যায়, নাক না মুখ – এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যেও চলছে নিরন্তর আলোচনা। তবে এক্ষেত্রে মুখের পাল্লাই খানিকটা ভারী। তাই যাঁরা হোম কিট এনে বাড়িতে পরীক্ষা করছেন, তাঁরা অবশ্যই জরুরি এই বিষয়টা মাথায় রাখুন। তাতে আরও নিখুঁত ফল পাবার সম্ভাবনা বাড়বে।