চুয়াত্তর বছর পরে আবার দেখা! ততদিনে বদলে গিয়েছে অনেক কিছুই। দু-জনের দুটো দেশ, কাঁটাতার। বয়স আশি পেরিয়েছে দুজনেই। চুলে ধরেছে পাক, বয়সের ভারে ন্যুব্জ শরীর। কোনও দিনও যে ফের দুজনের দেখা হতে পারে, তা-ই এতদিন ছিল ভাবনার বাইরে। তবু সেও সম্ভব হল একদিন। এতদিন পরে একে অপরকে দেখে চোখের জল সামলাতে পারলেন না দুজনের কেউই। আবেগে ভাসল কর্তারপুর করিডর। হারিয়ে যাওয়া সেই দুই ভাইয়ের গল্প… চলুন, শুনে নিই।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন দুই ভাই। একজন ছিটকে গিয়েছিলেন পাকিস্তানে, আর এক জনের ঠাঁই হয় এ দেশে। সেসব দিনগুলোর কথা ভেবে আজও শিউড়ে ওঠেন অশীতিপর বৃদ্ধ। পাকিস্তানের ফয়জলাবাদের বাসিন্দা মহম্মদ সিদ্দিক তখন একেবারে ছোট। দেশভাগের ওই সময়টায় কীভাবে যেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল পরিবারটা। দাদা হাবিব রয়ে গেলেন পঞ্জাবেই। আর সিদ্দিক পাকিস্তানে। ব্যাস, ওই শেষ। তার পর দু-ভাইয়ের আর দেখা হয়নি কোনওদিন।
আরও শুনুন: শীতে যেন কেউ কষ্ট না পায়! চিপসের প্যাকেট দিয়েই গরিবদের জন্য কম্বল বানাল খুদে
দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে চুয়াত্তরটা বছর। দু-জনেরই নিজস্ব নিজস্ব পরিবার হয়েছে, ঘরবাড়ি, সংসার সব কিছুর মধ্যেই সেই স্মৃতি সময়ে-অসময়ে ভারী করে দিত বুক। অবশ্য হাবিব বিয়ে-থা করেননি। মায়ের সেবা করেই কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনটা। দু-ভাইয়ের কোনও দিনও আর দেখা হতে পারে, তা ভাবেননি কেউই। সম্প্রতি সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করে দিল কর্তারপুর করিডর।
সম্প্রতি সেখানেই দেখা হল দুই ভাইয়ের। দেখা হতে আবেগ সামলে রাখতে পারলেন না কেউই। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন দুই বৃদ্ধ। মনে পড়ে গেল অবিভক্ত দেশের বাড়ি, পরিবার আর ছোটবেলার হাজারটা স্মৃতি। সব ভুলে সেসব আলোচনাতেই ব্যস্ত রইলেন দুই ভাই।
আরও শুনুন: প্রেরক ও প্রাপক দুজনেই মৃত, ৭৬ বছর পর ঠিকানায় গিয়ে পৌঁছল চিঠি
পঞ্জাবের ডেরা বাবা নানক শিরিন ও পাকিস্তানের দরবার শিরিনকে জুড়েছে ৬ কিলোমিটার লম্বা এই কর্তারপুর করিডোর। কথিত আছে, জীবনের শেষ আঠারোটা বছর পাকিস্তানের এই গুরুদ্বারেই কাটিয়েছিলেন গুরু নানক। তাই শিখ তীর্থযাত্রীদের জন্য এই স্থান খুবই পবিত্র। ২০১৯ সালে তীর্থযাত্রীদের জন্য এই করিডোর খুলে দেয় দু-দেশের সরকার। কোনও রকম ভিসা ছাড়াই ওই ধর্মস্থানে ভ্রমণ করতে পারেন ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা।
আর সেই করিডোরই জীবনের শেষ বয়সে এনে দেখা করিয়ে দিল দুই ভাইয়ের। তার জন্য দু-দেশের সরকারকেই কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন অশীতিপর দুই বৃদ্ধ। তাঁদের সেই ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা দেখে আবেগে ভেসেছে নেটবিশ্ব।
বাকি অংশ শুনে নিন।