পাখির ডাক থেকে নদীর কলকল, সমুদ্রের ঢেউ থেকে ঝরনার ঝরঝর, এমনকি পাতা পড়ার শব্দ- প্রকৃতির মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে সঙ্গীতের সাত সুর। এমনটাই মনে করেন বড় বড় সঙ্গীতকারেরা। তবে এমন পাথরের কথা শুনেছেন কি, যাতে হাত দিলেই বেজে ওঠে সুর। আমাদের দেশেই রয়েছে এমন পাথর। কোথায় জানেন?
পাথরের গান শুনেছেন কখনও। অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই ভেবে, পাথর আবার গান গায় নাকি! কিন্তু এই পাথর গায়। তার গায়ে হাত দিলেই বেজে ওঠে আশ্তর্য সব সুর। আড়াই হাজার বছর ধরে আমাদেরই দেশে লুকিয়ে রয়েছে এমন পাথর। বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, এই ধরনের বেজে ওঠা পাথরকে বলা হয় লিথোফোন।
আরও শুনুন: প্রেরক ও প্রাপক দুজনেই মৃত, ৭৬ বছর পর ঠিকানায় গিয়ে পৌঁছল চিঠি
তামিলনাড়ুর কৃষ্ণগিরির কাছে দেনকানাইকোত্তাই তালুকের ছোট্ট একটি গ্রাম আনজেত্তি। সেখান থেকেই এমন পাথর খুঁজে পেয়েছিলেন কয়েক জন গবেষক। সেই অ্যাকুইস্টিক পাথরটি ছিল সাড়ে তিন ফুট লম্বা, চওড়ায় তা ৪ ফুট, আর উচ্চতায় আড়াই ফুট তো হবেই।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, লিথোফোন নামে একটি বাদ্যযন্ত্র রয়েছে যা আদতে তৈরি হয় পাথর দিয়েই। সেখানে এক বা একাধিক পাথর মিলেমিশে তৈরি করে বিশেষ এক ধরনের সুর। খুঁজে পাওয়া সেই পাথরের গায়ে অন্তত ৯৮টি কিউপিউলস খুঁজে পেয়েছেন গবেষকেরা। ভাবছেন তো, কিউপিউলস-টা আবার কী? কৃত্রিম ভাবে পাথরের গায়ে ছোট ছোট গর্ত তৈরি করাকে বলে কিউপিউলস। মনে করা হচ্ছে, প্রাচীন কোনও মানুষ ওই পাথরের গায়ে ওই গর্ত করে ছিলেন।
এক দল বিশেষজ্ঞের মতে, প্রাচীন কোনও দেবদেবীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে পারে ওই পাথরের। কোনও মনোলিথিক মন্দির বা স্মৃতিসৌধরও অংশ হতে পারে ওই পাথর। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, লৌহ বা তাম্রযুগের নিদর্শন ওই পাথর।
সিমেন্ট বা লোহা বা অন্য কোনও রকম উপাদান ব্যবহার না করে শুধুমাত্র পাথর দিয়েই এক রকম স্থাপত্য বানানোর চল ছিল প্রাচীন যুগে। তাকে মনোলিথিক বা মেগালিথিক স্থাপত্য বলা হয়। সেই সময়কার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার এই পাথর। এমনটাই মনে করছেন বেঙ্গালুরুর ন্যাশলাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের এক দল বিজ্ঞানী। পাথর নিয়ে আরও জানার চেষ্টা করছেন তাঁরা।
আরও শুনুন: কেবল শাহজাহান নন, প্রিয়জনের স্মৃতিসৌধ গড়েছিলেন ভারতের এই রানিরাও
প্রাচীন ভারতীয় সঙ্গীতজ্ঞরা নাকি পাথর দিয়ে এমন বাদ্য়যন্ত্র তৈরি করতেন। দক্ষিণ ভারতের বেশ কিছু মন্দিরে এমন পাথরের তৈরি বাদ্যযন্ত্র রয়েছে, যাতে হাত দিলেই বেজে ওঠে সুর। তিরুনেলভেলির নেল্লাইআপ্পার মন্দির, হাম্পির বিজয় ভিট্টালা মন্দির, মাদুরাইয়ের মীনাক্ষী মন্দির-সহ বেশ কিছু জায়গায় রয়েছে এমনই সুরেলা পিলার। তবে উদ্ধার হওয়া এই পাথরটি এদের সবার থেকে পুরনো। মনে করা হচ্ছে, প্রায় ৩৫ কোটি বছর আগেকার নিদর্শন এটি। ডেভোনিয়ান যুগের কোনও আদিম মানুষের হাতে তৈরি হয়েছিল এই সুরেলা পাথর।