করোনার দাপটে দুবছর ধরে গোটা বিশ্বে ত্রাহি ত্রাহি রব। ২০১৯ সালের শেষ দিকে পৃথিবীতে আছড়ে পড়েছিল মারণ ভাইরাস নোভেল করোনা। এখনও তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় প্রহর গুনছি আমরা। কিন্তু জানেন কি, পৃথিবীতে ঘটা প্রথম অতিমারি নয় করোনা। মানবসভ্যতার ইতিহাস জানায়, বারবার বিভিন্ন অতিমারির হানা সহ্য করেছে পৃথিবী। কিন্তু হার মানেনি কখনোই।
একই ঘরে পড়ে রয়েছে এক পুরুষের মৃতদেহ। রিগর মর্টিস সম্পূর্ণ অধিকার করেছে সেই দেহ। বলাই বাহুল্য, মৃত্যু হওয়ার পর গোটা একটা দিন অন্তত পেরিয়ে গিয়েছে। অথচ সৎকার হয়নি। কে করবে! ঘরের আরেক প্রান্তেই পড়ে রয়েছে এক মহিলার দেহও। অনামিকার ওয়েডিং রিং দেখে আন্দাজ করা যায়, ওই পুরুষের স্ত্রী। দুটি মৃতদেহ ছাড়াও ঘরে রয়েছে দুটি জীবন্ত প্রাণী। মহিলার পাশে, তার সদ্যোজাত দুই যমজ শিশু। অর্থাৎ মৃত্যু এবং জন্ম, দুই-ই ঘটে গিয়েছে গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে।
আরও শুনুন: রোগ হবার আগেই সারাও… মহামারী ছড়িয়ে পড়ার আগেই এসেছিল কোন ভ্যাকসিন?
গল্প নয়। এই আদ্যন্ত সত্যি ঘটনার বিবরণ দিয়েছিলেন ইতিহাসবিদ আলফ্রেড ডাবলু ক্রসবি, তাঁর ‘আমেরিকা’স ফরগটেন প্যানডেমিক’ বইতে। লিখেছিলেন এক অতিমারীর কথা, আজকের পৃথিবী যে অতিমারীকে চেনে স্প্যানিশ ফ্লু নামে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে এই সংক্রমণ দেখা দেওয়ার কারণে সেনা ছাউনিতে দ্রুত রোগ ছড়িয়ে পড়েছিল, ছড়িয়ে গিয়েছিল এক দেশ থেকে আরেক দেশেও। আমেরিকায় প্রথম রুগির দেখা পাওয়া গিয়েছিল বিশ্বযুদ্ধের শেষ বছরে, ১৯১৮ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। পরের দিনই আক্রান্ত হয় আরও ১২ জন। আর ২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেখা যায় ওই ব্যারাকের মোট ৪৫,০০০ সেনার মধ্যে অসুস্থ ১১,৬০৪ জন। আক্রান্তদের অবস্থার অবনতি হত খুব দ্রুত। মৃত্যু হলে তা ঘটে যেত সংক্রমণের মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই। ১৯২০ সাল পর্যন্ত পৃথিবী জুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছিল স্প্যানিশ ফ্লু। সংক্রমিত হয়েছিলেন বিশ্বের প্রায় ৫০ কোটি মানুষ। মৃত্যু হয় পাঁচ কোটি মানুষের, মোট জনসংখ্যার নিরিখে হিসেব করলে যা এখনকার ২০ কোটির সমান। করোনা আসার আগে অব্দি তাই স্প্যানিশ ফ্লু-র শিরোপা ছিল ‘দ্য মাদার অব অল প্যানডেমিক্স’।
আরও শুনুন: যোদ্ধার বেশ, হাতে রাইফেল, চলেছেন যুদ্ধে… সেকালের সাহসী এই দুই রমণী কারা?
করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার দিনগুলিতে সারা বিশ্ব থেকেই ভয়াবহ মৃত্যুমিছিলের খবর এসেছে বারবার। গণকবরের ছবি দেখে আতঙ্কিত হয়েছে পৃথিবীর মানুষ। কিন্তু করোনা অতিমারির আগেও পৃথিবীকে বারবার নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে এক-একটি ভয়ংকর অতিমারি।
শুনে নিন বাকি অংশ।