২০২১ – এমন একটা বছর, যা একই সঙ্গে হতাশা আবার আশাবাদেরও। করোনা মহামারীর ভয়বহতা দিয়ে শুরু হয়েছিল বছর। সারা বছর জুড়েই করোনার ভয় থেকেই গিয়েছে। আবার খানিকটা আতঙ্ক কাটিয়েও ওঠা গেছে। আর সেই সঙ্গে এই একটা বছর আমাদের জীবনধারাকে বদলে দিয়েছে অনেকখানি। বছর যখন শেষ হতে চলল, আসুন একবার ফিরে তাকাই ২০২১-এর দিকে, দেখে নিই এই বছর আমাদের জীবনের কী পরিবর্তন আনল।
ব্যক্তিগত পৃথিবীটা এতখানি ছোট হয়ে এসেছে গত ১২ মাসে, যা আগে কখনও ভাবা যায়নি। ২০২১-এর শেষলগ্নে দাঁড়িয়ে এরকমই উপলব্ধি বিল গেটসের। শুধু তিনি একা নন, পিছু ফিরে দেখলে আজ মনে হয়, সত্যিই ২০২১ আমাদের একই সঙ্গে একটা ছোট পৃথিবীর ভিতর ঢুকিয়ে দিয়েছে। আবার খুলে দিয়েছে অনেকগুলো দরজাও। এমন একটা মিশ্র অনুভবের বছর সচরাচর আসে না।
আরও শুনুন: মানুষের রক্তই তার প্রিয় খাদ্য! আসলে কে এই কাউন্ট ড্রাকুলা?
ঘটনাবহুল বছর যে ক্যালেন্ডারে থাকে না, তা তো নয়। বছরশেষের সালতামামি করতে বসে দেখা যায়, এক একটা বছরের দস্তানায় থাকে ঘটনার ঘনঘটা। তাহলে কোথায় ২০২১ আলাদা? বছরটার শুরু হয়েছিল ভয়-ভয় আবহে। করোনার আতঙ্ক তখন কুরে কুরে খাচ্ছে মানবসভ্যতাকে। বছরটা যখন শেষ হতে চলেছে, তখন নতুন করে শঙ্কা জাগাচ্ছে করোনার নিউ ভ্যারিয়েন্ট। করোনাই যে শুধু রূপ বদলেছে তা নয়, বদলে দিয়েছে আমাদেরও। এই বছরের গোড়া থেকেই তো আমাদের জীবনে ‘নিউ নর্ম্যাল’ আর বিচ্ছিন্ন নতুন কোনও শব্দ নয়। বরং তাই-ই হয়ে উঠেছে স্বাভাবিক। বাড়ি থেকে কাজ করা, বাড়ি বসে পঠনপাঠনের যে অভ্যাস শুরু হয়েছিল তা ক্রমশ সহজ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। অনলাইনে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া – কাজের খাতে বা কাজের বাইরে দুই ক্ষেত্রেই, আর বাধ্যবাধকতা শুধু নয়। তা ঢুকে পড়েছে মানুষের দৈনন্দিনে। রুটিন গিয়েছে বদলে। ব্যক্তিগত দেখাসাক্ষাতের পরিধি গিয়েছে ছোট হয়ে। যেমনটা বলছিলেন বিল গেটস। পরিবর্তে পৃথিবীটা অনেক একলা হয়ে গিয়েছে।
আরও শুনুন: বাজিরাও থেকে কপিল দেব – রণবীরই কি বলিউডের নতুন ‘মিঃ পারফেকশনিস্ট’?
কিন্তু শুধু কি তাই? বরং এই একলার পৃথিবীই আমাদের এই উপলব্ধিতে টেনে এনেছে যে, আমাদের আরও বেঁধে বেঁধে থাকার প্রয়োজন। এমন এমন বিপর্যয়ের মুখোমুখি আমাদের দাঁড়াতে হচ্ছে, যেখানে মানুষের সঙ্গে মানুষের পারস্পরিক বন্ধন অটুট থাকা খুব জরুরি। ২০২১-এ প্রাকৃতিক বিপর্যয় বারংবার আমাদের বিধ্বস্ত করেছে। একদিকে করোনা আতঙ্ক, অন্যদিকে এই ধরনের বিপর্যয় আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে একক মানুষ কত সামান্য এবং অসহায়। আত্মকেন্দ্রিকতার দায়ে অভিযুক্ত মানুষ বুঝেছে, নিজের গণ্ডি ভেঙে বেরনো কত জরুরি। আর সেই সঙ্গে এও শিখেছে, প্রকৃতির যত্ন নিতে হবে। যে প্রকৃতি আমাদের লালন করে চলে, প্রগতির দোহাই দিয়ে তাকে যদি ক্রমাগত ধ্বংস করতে থাকি, তবে একদিন আমরাই অস্তিত্বের সংকটে পড়ব। নীতিকথার মতো এই সত্যি আমরা বহুবার বলেছি বটে, কিন্তু ২০২১ আমাদের সেই সত্যির একেবারে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
আরও শুনুন: বাঙালি খানসামার সঙ্গে মহারানির ‘বিশেষ’ সম্পর্ক, তোলপাড় পড়েছিল বিশ্বে
ভ্যাকসিনের বরাভয় এসেছে এই ২০২১-এই। বদ্ধ জীবন খানিকটা মুক্তির শ্বাস নিতে পেরেছে। তবে এর ভিতর বেশ কিছু বদলও আছে। একটা বড় পরিবর্তন এসেছে খাওয়াদাওয়ায়। বাহারি লোভনীয় মুখরোচক খাবার থেকে বেশ খানিকটা দূরে সরে গিয়েছে মানুষ। জোর দিয়েছে ঘরোয়া খাবারের উপর। ঘরোয়া পদ্ধতিতে ঘরোয়া উপকরণে বানানো খাবার কেনার দিকে ঝোঁক বেরেছে। এই যে পরিবর্তন, তা কি আমাদের আর-একটু ঐতিহ্যের প্রতি সচেতন করে তুলল? সম্ভবত তাই-ই। এই প্রবণতারই প্রতিফলন দেখা যায়, যখন চোখে পড়ে ছোট ছোট একক উদ্যোগে শুরু হওয়া ব্যবসাগুলির দিকে ক্রমশ নজর দিচ্ছেন ভোক্তারা। নিজের ব্যবহার্য জিনিস কেনাকাটার করতে গিয়ে যদি পাশের আর-একজনের খানিক উপকার হয়, তবে মন্দ কী! এই সেদিনও হয়তো এতটা ভাবনা ছিল না মানুষের। ঝোঁক ছিল বড় বড় ব্র্যান্ডের প্রতি। ২০২১ আমাদের সেই দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই বদলে দিয়েছে।
বাকি অংশ শুনে নিন।