দেখতে দেখতে কলকাতাতেও ঢুকে পড়েছে ওমিক্রন। দেশে ইতিমধ্যে দুশো পেরিয়ে গিয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। ভয়ঙ্কর রকমের সংক্রামক এই করোনা স্ট্রেন নিয়ে উদ্বেগে আপামর বিশ্ব। ভ্যাকসিনের দুটো ডোজ-ও যে ওমিক্রন ঠেকাতে পারবে, তেমন নিশ্চ্যতা নেই। ফলে আপাতত উপায় বলতে কেবল সতর্কতা। স্যানিটাইজার ও মাস্ক যে বাধ্যতামূলক, তা তো করোনার দু-দুটো ঢেউ আমাদের শিখিয়েই দিয়েছে। মাস্ক তো পরছেন। তবে তা ওমিক্রনের সঙ্গে লড়ার জন্য যথেষ্ট তো? নাকি নানা রঙের বাহারি কাপড়ের মাস্কে কি কেবল সাজটুকুই হচ্ছে! কাজের বেলা ফাঁকি! কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা? আসুন শুনে নিন।
অতিমারির ঢেউয়ের ধাক্কায় কেটে গিয়েছে দু-দুটো বছর! মাস্ক আর স্যানিটাইজার সেই থেকে আমাদের নিত্যসঙ্গী। নানা বাহারি রংচঙে মাস্ককে রীতিমতো ফ্যাশনের অঙ্গ করে নিয়েছি আমরা। দেখতে দেখতে
২০২১ সালও শেষের মুখে। তবে মাস্কের মায়াজাল থেকে এখনই মুক্তি নেই আমাদের। এরই মধ্যে লাল চোখ দেখাতে শুরু করেছে করোনার নয়া স্ট্রেন ওমিক্রন। ভারতে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা দুশো ছাড়িয়েছে। কলকাতাতেও ধরা পড়েছে দুই ওমিক্রন রোগী। নতুন বছরে আছড়ে পড়তে পারে করোনার তৃতীয় ঢেউ, সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরাই। ইতিমধ্যেই ওমিক্রনকে বিপজ্জনক ভ্যারিয়েন্ট বলে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নেওয়া থাকলেও ছোবল বসাতে পারে ওমিক্রন, নয়া রিপোর্টে ধরা পড়েছে এমনই তথ্য।
আরও শুনুন: পোষ্যদের থেকেও কি সম্ভাবনা আছে করোনা সংক্রমণের? বিশেষজ্ঞরা বলছেন…
করোনা বিশেষত এই ওমিক্রন আটকাতে মাস্ক ব্যবহার করছেন নিশ্চয়ই। তবে আপনার মাস্ক ওমিক্রন আটকাতে সক্ষম কিনা সে খবর রেখেছেন? আরামদায়ক বলেই হোক বা ফ্যাশন, সুতির মাস্কের জনপ্রিয়তা কিন্তু বাজারে তুঙ্গে। তবে ওমিক্রন আটকাতে কিন্তু একেবারেই কাজের নয় এই সুতির মাস্ক, বিশেষত যদি তা হয় একস্তরীয়। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
করোনার ফাঁড়া একটু কাটতে না কাটতেই আঁটোসাঁটো মাস্কের দড়ি ঢিলে হয়েছে। নাক-মুখ ছাড়িয়ে মাস্ক নেমে এসেছে গলায়। অনেকে তো আবার একস্তরের একটা পাতলা মাস্ক ঝুলিয়েই দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আপনি হয়তো ভাবছেন, মাস্ক যখন পরেইছেন, আপনি নিশ্চিত বিপদ থেকে মুক্ত। ওমিক্রন কিন্তু তেমনটা ভাবছে না। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ওই ধরনের মাস্ক নিতান্ত সাজের জিনিস ছাড়া আর কিছুই নয়।
তাঁদের মতে, আপনার মুখ ও নাক ঠিকমতো ঢাকা না পড়লে কোনও মাস্কই কোনও কাজের নয়। পাশাপাশি খেয়াল রাখা প্রয়োজন, মাস্ক পরেও আপনি ঠিক মতো শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারছেন কিনা! বিশেজ্ঞরা বলছেন, কাপড়ের মাস্কের তুলনায় বরং দ্বিস্তরীয় বা ত্রিস্তরীয় মাস্ক অনেক বেশি কার্যকর। মাস্ক পাতলা সুতির কাপড়ে তৈরি না হয়ে যদি মিক্সড মেটিরিয়ালসে তৈরি হয়, তবে সংক্রমণ আটকানোর সম্ভাবনা খানিকটা বাড়ে বইকি।
আরও শুনুন: শিশুদের জন্য কতখানি বিপজ্জনক ওমিক্রন?
আসলে কাপড়ের মাস্ক যাঁরা তৈরি করছেন, তাঁরা যতটা ফ্যাশন বা স্টাইলের দিকে নজর দিচ্ছেন, ততটা নজর সম্ভবত স্বাস্থ্যক্ষেত্রে দিচ্ছেন না। মাস্ক তৈরির যে সাধারণ নির্দেশিকা আছে, তা এক্ষেত্রে অনুসরণ করা হচ্ছে না। ফলে মাস্ক তৈরি হচ্ছে, আপনি তা পরে বেরোচ্ছেনও বটে, কিন্তু নিরাপত্তার দিকটিতে যা ফাঁকি থাকার তা থেকেই যাচ্ছে। অন্যদিকে এন-৯৫ মাস্ক প্রস্তুতকারী সংস্থারা এই নির্দেশিকা মেনে চলে বলেই, এই ধরনের মাস্কের ব্যবহার অনেক বেশি নিরাপদ।
করোনার নয়া স্ট্রেন ওমিক্রমনের সংক্রমণ ক্ষমতা যে বেশি, তা সকলেই স্বীকার করেছেন। সেই ওমিক্রন যখন থাবা বসাতে শুরু করেছে, তখন সতর্কতার বর্মটাও আঁটসাট হওয়াই জরুরি। তাই এই সময়টায় বরং ফ্যাশনের কথা ভুলে কাপড়ের মাস্ক তুলে রাখাই ভালো। এমনকী বহুস্তরীয় কাপড়ের মাস্ক হিসাবেও যা বিক্রি হয়, তাও সেভাবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে পারে না। একান্তই যদি কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করতে হয়, তবে তার সঙ্গে অবশ্যই একটি সার্জিক্যাল মাস্ক রাখতে হবে। অন্যথায় কোনও ভাবেই কোনও কাপড়ের মাস্ক আপনাকে সঠিক নিরাপত্তা দেবে না। তাই ওমিক্রনের এই বাড়বাড়ন্তের সময়, কাপড়ের মাস্ক যাঁরা ব্যবহার করছেন তাঁরা এই বিপদের দিকগুলি কিন্তু অবশ্যই মাথায় রাখবেন।