‘থাপ্পড়’ সিনেমায় দেখা যায়, তাপসী পান্নু অভিনীত অমৃতা চরিত্রটি একেবারে ভোর থাকতেই ঘুম থেকে উঠে পড়ে। বাকি বাড়ি তখনও ডুবে রয়েছে ঘুমের অতলে। চায়ের কাপ হাতে অমৃতা এসে দাঁড়ায় বারান্দায়। ব্যাস, ওইটুকুই। তারপর থেকে তার বাকি সারাটা দিনই কাটে হাজার রকমের ঘরের কাজ নিয়ে ব্যস্ততায়। যে সামান্য সময়টুকু বরাদ্দ হয় অমৃতার বারান্দায় দাঁড়ানোর জন্য, তাতেই যেন স্পষ্ট হয়ে ওঠে বেশিরভাগ ভারতীয় গৃহবধূর অবস্থান।
ভারতীয় গৃহবধূদের প্রতিটা দিনই মোটামোটি গতে-বাঁধা নিয়ম মেনে চলে। সকাল শুরু হয় পরিবারের অন্যান্যদের চাইতে অনেক আগে। রাত শেষ হয় সব্বাই ঘুমাতে যাওয়ার পর। সারাদিনের অসংখ্য কাজের মাঝে শ্বাস নেওয়াও দায় হয়ে যায় মাঝে মাঝে। তারপরেও হয়তো শুনতে হয়, কিছুতেই বাকিদের মন জুগিয়ে চলতে পারছেন না তিনি! এতসবের মাঝে তাই খড়কুটোর মতো তাঁরা আঁকড়ে ধরেন বাড়ির বারান্দাখানি (Balcony)। ওইটুকু খোলা হাওয়ায় আপ্রাণ মুক্তি খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
এ কোনও গল্পকথা নয়, মনোবিদরাই জানাচ্ছেন এমনটা। বাড়ির মধ্যে সবথেকে প্রিয় অংশ কোনটা জানতে চাইলে, বেশিরভাগ মহিলাই নাকি একযোগে বারান্দার (Balcony) কথা বলেন। বাড়ির চৌহদ্দির নিরাপদ গণ্ডির ভিতরে দাঁড়িয়েও, বাইরের পৃথিবীকে দেখার সুযোগ কেবল বারান্দাই দিতে পারে তাঁদের। পথঘাট দেখতে পাওয়া যায়, প্রতিবেশীদের সঙ্গে গল্পগুজবও করা যায় কখনও। নাহলে তো তাঁদের কাছে সারাদিনের বেশিরভাগটাই কেটে যায় বাড়ির ভিতর বন্দি অবস্থায়। ২০১৯ সালের এক সমীক্ষা জানায়, ভারতের মফঃস্বল এলাকার গৃহবধূদের (Housewife) প্রায় ৫০ শতাংশই সারাদিনে একটিবারের জন্যও বাড়ির বাইরে পা রাখেন না! কখনও রান্না, কখনও অন্যান্য ফাইফরমাশ খাটা, কখনও বা বাচ্চাদের পড়াশুনোর পিছনে সারাদিনটাই পেরিয়ে যায়। কাপড় মেলার জন্য ছাদে যেতে না হলে বুঝি সূর্যের আলোটুকুও দেখতে মেলে না তাদের!
‘থাপ্পড়’ সিনেমায় দেখা যায়, তাপসী পান্নু অভিনীত অমৃতা চরিত্রটি একেবারে ভোর থাকতেই ঘুম থেকে উঠে পড়ে। বাকি বাড়ি তখনও ডুবে রয়েছে ঘুমের অতলে। চায়ের কাপ হাতে অমৃতা এসে দাঁড়ায় বারান্দায়। ব্যাস, ওইটুকুই। তারপর থেকে তার বাকি সারাটা দিনই কাটে হাজার রকমের ঘরের কাজ নিয়ে ব্যস্ততায়। যে সামান্য সময়টুকু বরাদ্দ হয় অমৃতার বারান্দায় দাঁড়ানোর জন্য, তাতেই যেন স্পষ্ট হয়ে ওঠে বেশিরভাগ ভারতীয় গৃহবধূর অবস্থান। বিভিন্ন সমীক্ষাতেও দেখা গিয়েছে, চাকুরিরতা মহিলাদেরও অনেকেই এ কথা মনে করেন যে, আর্থিক স্বাধীনতাই তাদের একমাত্র চাহিদা নয়। চাকরি করার সুযোগ তাদের কাছে বাড়ির বাইরে পা রাখার লাইসেন্সও বটে!
আপাতভাবে হয়তো মনে হবে যে সময়ের সঙ্গে ভারতীয় মেয়েদের স্বাধীনতা অনেক বেড়ে গিয়েছে। আগের চাইতে অনেক বেশিই অবাধে ঘোরাফেরা করতে পারে তারা। কিন্তু ভালো করে ভাবতে গেলেই বোঝা যায়, সাধারণ ঘরোয়া মেয়ে-বৌদের ক্ষেত্রে ছবিটা একেবারেই আলাদা। কোভিড-পরবর্তী পৃথিবীতে অনলাইন ডেলিভারি সার্ভিসগুলোর প্রায় অপরিহার্য হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের জীবনে। পছন্দের খাবার থেকে শুরু করে জামাকাপড় হোক বা আসবাবপত্র, ছোট বড় যে কোনও পরিষেবা এখন বাড়ি বসেই পাওয়া যেতে পারে। এছাড়া, অন্য নানান রকমের সাংসারিক প্রয়োজন, যেমন কোনও বিল জমা দেওয়া বা ব্যাঙ্কের কাজ, অনেকখানি করে ফেলা যায় ঘরের পরিসর থেকেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে আরও বেশি ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে সাধারণ গৃহবধূরা (Housewife)। কারণ সত্যি বলতে, বাজার করতে যাওয়া কিংবা ব্যাঙ্কে যাওয়ার মতো ছোটখাটো কাজও বাড়ি থেকে বাইরে পা রাখার সুযোগ করে দিত তাকে। অনলাইন মাধ্যমগুলো বাড়ির দরজায় পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার বদলে সেটুকু স্বাধীনতাও কেড়ে নিয়েছে তাদের থেকে!
আর তাই সাধারণ নারীদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে বাড়ি লাগোয়া একফালি বারান্দাখানি। খোলা রাস্তার মধ্যে যে বেপরোয়া স্বাধীনতা থাকে, বারান্দার কাছে তা নেই। বরং নির্ধারিত গণ্ডির মধ্যেই বিচরণ করার সুবিধে করে দেয় বারান্দা। রোজকার একঘেয়ে কর্মব্যস্ত জীবনে, এটুকু মুক্তির চেয়ে বেশি কী-ই বা চেয়েছে মেয়েরা?