সদ্য টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন বিরাট কোহলি। তার কিছুদিন আগে একই ঘোষণা করেছেন রোহিত শর্মা। যে দুজনকে একসময় প্রতিপক্ষ ভাবতেন ফ্যানরা, সেই বিরাট-রোহিত যেন এভাবেই শিখিয়ে গেলেন বন্ধুত্বের মন্ত্র। দুই মহারথীর উদ্দেশে খোলাচিঠি লিখলেন সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়।
বন্ধুত্বের নিজস্ব একটা দেশ আছে। কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে সেখানে যুদ্ধের সলতে পাকানো হয় না। বরং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকে বেঁচে থাকার শ্বাস। এমনটা সবাই জানে। কিন্তু সেই দেশের ঠিকানা সবাই জানে না। কিন্তু বিরাট (Virat Kohli), আপনি তো জানেন! রোহিত, আপনিও তো চেনেন সেই দেশে যাওয়ার রাস্তা!
আচ্ছা, আমাদের সেই দেশের সন্ধান দিতে পারেন বিরাট(Virat Kohli)? রোহিত, আপনি? একথা কে না জানে, আপনাদের দু’জনের কাছেই সেই দেশের ঠিকানা রয়েছে। যেখানে বন্ধুত্বের দিনলিপি গড়ে ওঠে বাইশ গজের রোজনামচায়। আপনারাই তো শিখিয়েছেন, ত্যাগের পথ কতটা সহজ, আঁকড়ে ধরে রাখার চেয়ে।
টেস্ট ক্রিকেটে আপনারা এখন ‘প্রাক্তন’। দিনকয়েক আগে, যখন অশান্ত হয়েছিল দেশের সীমানা। যুদ্ধের বিষবাষ্পে একটু একটু করে ভারী হচ্ছিল আকাশ-বাতাস। আচমকাই টেস্ট ক্রিকেট থেকে নিজেকে অবসরের গ্রহে ঠেলে দিলেন রোহিত। আমরা জানতাম, বেলা ফুরিয়ে আসছে। কিন্তু বিরাট, আপনার কী এত তাড়া ছিল? নাকি বন্ধুত্বের শপথে এটাই প্রধান শর্ত, আসার মতো যাওয়াটাও হবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে? তবেই না ‘ইয়ে দোস্তি, হাম নেহি তোড়েঙ্গে’!
আমরা, আপনাদের কাছে রানের ফুলঝুরি চেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম হিটম্যানের ব্যাটে রানের ফুলকি ঝরে পড়ুক। বিরাটের (Virat Kohli)রানতাড়ায় আমরা নিজেরাই হয়ে উঠতাম ‘চেজমাস্টার’, প্রতিপক্ষ নয়, মনকেই আমরা বলতাম ‘রোক সাকো তো রোক লো’। রোহিত, আপনার ক্যাপ্টেন্সি লাভের সময় আমরা ধরে নিয়েছিলাম, বিরাট আপনার সতীর্থ নন, প্রতিপক্ষ। টিম ইন্ডিয়া ‘মিলে সুর মেরা তুমহারা’ নয়, তা রোহিত আর কোহলির (Virat Kohli)দুই পক্ষ-বিপক্ষ। সেই খোয়াবে বুঁদ আমরা বুঝিনি, প্রতিদ্বন্দ্বিতার পৃথিবীতে আপনারা বন্ধুত্বের শ্রেষ্ঠ গল্প লিখতে বসেছেন।
একবার নয় সে প্রমাণ মিলেছে বারবার। ক্যামেরাবন্দি হয়েছে মুহূর্ত। বিশ্বকাপ ফাইনালের কথাই ধরা যাক। দলের হার রোহিতের চোখের জল হয়ে নেমে এসেছে। সেই জল মাটিতে পড়তে দেননি কোহলি। বাড়িয়ে দিয়েছেন কাঁধ, বন্ধুত্বের। আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর সে কী নাচ দুজনের! যাঁদের প্রতিপক্ষ ভাবতাম, সেই রোহিত-কোহলি (Virat Kohli)ভাংড়া দেখে হাততালি দিয়েছিলাম সবাই। আমরা ভুলতে পারি না, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের সেই রাত। উইকেট হাতে আপনাদের ডান্ডিয়া। আসলে ভারতীয় ক্রিকেট, কাঁটায় মোড়া ঊষর প্রান্তর, আপনারা সেই রুক্ষ্ণমাটিতে ভোরের তাজা ফুল।
আপনাদের ক্রিকেটগাথায় আজ বেলাশেষের গান। সেখানেও আপনাদের অটুট পার্টনারশিপ। রোহিত আপনার টেস্ট গ্রহ থেকে বিদায়ের পর বিরাট (Virat Kohli) সময় নিয়েছেন পাঁচটা দিন, যতটা সময় লাগে একটা টেস্ট শেষ হতে, সেই সময়ের ব্যবধানে কোহলিও আপনার সঙ্গী, বরাবরের মতো ক্রিকেট অভিযানে।
আমাদের অবুঝ মন, ‘যেতে নাহি দিব’ বলে আপনাদের পথ আগলে দাঁড়াতে চায়, কিন্তু তবু যেতে দিতে হয়। সেই ছেড়ে যাওয়া শূন্য আসনে একরাশ মনখারাপ লেগে থাকে, তবু পড়ন্ত বিকেলে মিঠে রোদের মতো আমাদের আশ্রয় হয় আপনাদের বন্ধুত্বের গল্প। যে গল্প আঁকাবাঁকা পথে মিশে গেছে সুদূর এক দেশে। যেখানে বারুদের গন্ধ নেই। রক্তচক্ষু নেই। মৃত্যু নেই। শুধু আছে বন্ধুত্ব। একটা বন্ধুত্বের দেশ।
আমাদের সেই দেশে নিয়ে যাবেন রোহিত? বিরাট… প্লিজ?