খেলার খোশগল্প জুড়ে মাঠ ও খেলোয়াড়দের অচেনা-অজানা তথ্য। কলম ধরলেন বোরিয়া মজুমদার। চলতি আইপিএল মরশুমে থাকল বিহাইন্ড দ্য বাইশ গজের কিছু আনকোরা ইতিউতি।
আজ ডেভিড ওয়ার্নারের গল্পও আপনাদের বলব। আমার খুব প্রিয় বন্ধুদের একজন। একটা সময় ছিল, যখন ওয়ার্নার এক বছরের সাসপেনশনে ছিল। সে এক মর্মান্তিক মানসিক চাপ! তখন, ভারত খেলছে অস্ট্রেলিয়ায়। আমারও অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কথা মেলবোর্ন টেস্ট ম্যাচের জন্য। যদিও আমি সেটা মিস করে গিয়েছিলাম। কারণ, আমার মেয়ের শরীর তখন ভাল ছিল না একেবারেই। তাই মেলবোর্ন না গিয়ে, সরাসরি সিডনিতে যাই। মানসিকভাবে মোটেই ভাল অবস্থায় ছিলাম না। কারণ, অসুস্থ মেয়েকে রেখে যাচ্ছি দেশে। ডেভিড সেটা জানত। ও আবার তখন সাসপেনশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই কারও সঙ্গে দেখা করত না।
শুনেছিলাম, ও বাংলাদেশ যাবে। ‘বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ’ খেলতে। তা, আমি সিডনি যাচ্ছি শুনে ওয়ার্নার বলল, ‘বেশ, আমি তোমাকে নিতে আসছি এয়ারপোর্টে।’ আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘কী!’ বলল, ‘হ্যাঁ। ঠিকই শুনেছ। আমি যাব এয়ারপোর্টে। তোমাকে রিসিভ করব। তারপর একসঙ্গে ডিনার করব। তারপর তুমি যেখানে আছ, সেখানে তোমাকে নামিয়ে দেব।’ আমি খানিকটা স্তম্ভিত! বললাম, ‘তোমার কিন্তু সত্যিই এসব করার কোনও প্রয়োজন নেই।’ ওয়ার্নার বলল, ‘কী বলছ! কতকাল আমাদের দেখা হয়নি।’ আমি তখন বললাম, ‘আমার দু’-তিনজন বন্ধুও যে সঙ্গে রয়েছে!’ শুনে ওয়ার্নার বলল, ‘তাতে কিচ্ছু যায়-আসে না, আমরা সবাই ডিনারে যাব।’
সিডনিতে নেমে টার্মিনালে দেখি, সত্যিই ডেভিড ওয়ার্নার হাজির! এয়ারপোর্টের পিৎজা জয়েন্টের বহু ভারতীয় ডেলিভারি বয়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছে। হিন্দিতে কথা বলছে। অভাবনীয় ব্যাপার! একগাদা সেলফি-টেলফি তুলে ওয়ার্নার আমাদের ডিনারে নিয়ে গেল। একটা ভারতীয় রেস্তোরাঁয়। তারপর আমাদের হোটেলেও নামিয়ে দিয়ে গেল। এমনকী, আমার বন্ধুদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবিও তুলল। ডেভিড ওয়ার্নার আদতে কেমন মানুষ সেটা বোঝা যায় এই ঘটনা থেকে। তামাম দুনিয়া ওকে সেই সময় ভুল বুঝে থাকতে পারে। কিন্তু আমি আপনাদের বলছি, ওয়ার্নার খেলার প্রতি নিবেদিতপ্রাণ এক ক্রিকেটার।
লেখা: বোরিয়া মজুমদার
পাঠ: কোরক সামন্ত
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস