“আর ভাবিসনে ব্রহ্মচারী। এবার তোর আর মরা হবে না। বেঁচে উঠবি। কিন্তু শিগগির জায়গা ত্যাগ কর।”
মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এই দৈববাণীই শুনেছিলেন বালানন্দ। কিন্তু জায়গা ত্যাগ করবেন কীভাবে? ভয়ংকর কলেরার ছোবলে নড়াচড়ার ক্ষমতা হারিয়েছেন। কামাখ্যার পাহাড়ের ভাঁজে টানা ভেদবমি করছেন। বাঁচার আর কোনও আশা নেই। বাহ্যজ্ঞানশূণ্য সন্ন্যাসীকে এই সময়ই স্বপ্নে দেখা দিয়েছেন নর্মদা মা। দিয়েছেন বেঁচে ওঠার অভয়বানী। ঘুম ভেঙে এরপর গড়াতে গড়াতে একটি কূপের সামনে এসে পড়েন বালানন্দ। গ্রামের মেয়েদের মাথায় জল ঢালতে বলেন। শরীর এতটাই অশক্ত যে দাঁড়াতেও পারছিলেন না। স্নান হওয়ার পরই প্রবল খিদে পেয়ে যায়। কিন্তু স্বপাক খাদ্য ছাড়া যে ব্রহ্মচারী আহার্য গ্রহণ করতে পারবেন না। এই সময় গ্রামের এক সহৃদয় ব্যক্তি মাটির উনুন বানিয়ে তাতে খিচুড়ি চাপিয়ে দিলেন। নিজের হাতে তা নামিয়ে ভক্ষণ করলেন বালানন্দ। তারপর দেবীর স্বপ্নাদেশ মতো দ্রুত কামাখ্যা ছাড়েন।
নর্মদা মায়ের কৃপা এর আগেও বর্ষিত হয়েছে বালানন্দের উপর। একবার কিছু সাধু—সন্ত নিয়ে নর্মদা পরিক্রমা করছিলেন তিনি। অমাবস্যা। সূর্য অস্ত যেতেই দ্রুত অন্ধকার নামতে শুরু করে নদীতটে। জঙ্গলপথে খিদেয় কাহিল বালানন্দরা। পথ চলার ক্ষমতা হারিয়েছেন সবাই। এই সময় বালানন্দ দেখেন, একটি গাছের নিচে এক ভিল রমণী একটি গরু নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ওই রমণীর কাছে গিয়ে যোগীবর বললেন, “তোমার দর্শন পেয়ে বড় ভাল হল মা। আজ রাতে এই গাছের নিচে আশ্রয় নেব বলে মনস্থির করেছি। কিন্তু আমরা সবাই ক্ষুধা—তৃষ্ণায় কাতর। নড়াচড়ার শক্তিও হারিয়েছি। আমাদের জন্য শিগগির তুমি তোমার গ্রাম থেকে কিছু খাবার—দাবার নিয়ে এসো। আমাদের প্রাণ বাঁচাও।”
ভিল রমণীর চোখে—মুখে রহস্যময় হাসি। বললেন, “তোমাদের চিন্তার কিছু নেই বাছা। আমার এই গরুর দুধ থেকেই তোমাদের ক্ষুধা—তৃষ্ণা মিটবে। তোমরা তোমাদের লোটা নিয়ে এসো।” লাউয়ের তুম্বায় ভরে সবাই আকন্ঠ দুগ্ধপান করল। তারপরই সবাইকে অবাক করে গরু—সহ অদৃশ্য হয়ে যান সেই ভিল রমনী। বালানন্দ পরে শিষ্যদের জানিয়েছিলেন, ওই ভিল রমনীর ছদ্মবেশে নর্মদা মাঈ স্বয়ং তাঁদের সেবা করেছিলেন।
শুনুন…
লেখা: গৌতম ব্রহ্ম
পাঠ: গৌতম ব্রহ্ম
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস