কেউ তালাবন্ধ হাজত থেকে বেরিয়ে এসেছেন অবলীলায়। অন্যের রোগ টেনে এনেছেন নিজের শরীরে। কেউ নিমেষে তালুবন্দি করেছেন কাঙ্খিত বস্তু। কেউ আবার একই সময়ে একাধিক জায়গায় থেকেছেন। বুদ্ধিতে এসবের ব্যাখ্যা মেলে না। অথচ বুজরুকি বললে ইতিহাসকে অপমান করা হয়। অণিমা, লঘিমা, গরিমা, প্রাপ্তি, প্রাকাম্য, মহিমা, ঈশিতা, বশিতা।
অষ্টসিদ্ধি করায়ত্ত করা সাধকদের খুঁজেছেন গৌতম ব্রহ্ম।
‘He displayed miraculous power that cannot be dismissed as myth.’
ত্রৈলঙ্গস্বামী সম্বন্ধে এমন কথাই লিখেছেন ‘ইন্ডিয়া আনভেইলড’ বইয়ের লেখক রবার্ট আরনেট। মেধসানন্দ, শিবানন্দ––– সবাই একবাক্যে মেনে নিয়েছেন কাশীর চলমান শিবের সিদ্ধাইয়ের কথা। শুধু বন্ধ কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেটকে চমকে দেওয়া নয়, আরও অনেক অলৌকিক ঘটনা জড়িয়ে রয়েছে স্বামীজির জীবনের পরতে পরতে। কীরকম?
জানা যায়, সাধকের সিদ্ধাই পরখ করতে কাশীর এক স্বঘোষিত গুরুর চ্যালা তাঁকে ক্ষীর বলে আফিম মেশানো চুনগোলা জল খাইয়ে দিয়েছিল। চুন ও আফিম দু’কান দিয়ে আলাদাভাবে বের করে দেন। এমন নাকি অনেকবারই হয়েছে। কথিত, বহুবার ত্রৈলঙ্গস্বামী বিষ খেয়ে হজম করে ফেলেছেন। স্বল্পহারী হয়েও বিশাল বপুর অধিকারী ছিলেন। কদাচিৎ খাদ্যদ্রব্য মুখে তুলতেন। কিন্তু ওজন ছিল ১৪০ কেজি!
নিজের অলৌকিক ক্ষমতার গুণে একবার এক রাজাকে উচিত শিক্ষা দিয়েছিলেন স্বামীজি। রাজা সদলবলে নৌকাবিহারে বেরিয়ে কাশীতে এসে উপস্থিত। ত্রৈলঙ্গস্বামী তখন গঙ্গায় মরার মতো ভাসছেন। রাজা ভাবলেন জলসমাধি হওয়া কোনও মৃতদেহ। পার্শ্বচররা ভুল ভাঙিয়ে জানায়, উনি এক শক্তিধর সন্ন্যাসী। দিনমান জলে এভাবে ভেসে থাকেন। রাজার কৌতূহল নিবারণে সন্ন্যাসীকে বজরায় হাজির করানো হয়। স্বামীজি রাজার তরবারি দেখতে চান। চোখে–মুখে প্রবল অহমিকার বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে রাজা জানান, যুদ্ধে প্রভূত পরাক্রমের জন্য ইংরেজরা তাঁকে এই তরবারি উপঢৌকন দিয়েছে। ত্রৈলঙ্গস্বামী সেই তরবারি হাতে নিয়ে কী এক অদ্ভুত কাণ্ড করে বসেন। ছুড়ে ফেলেন গঙ্গায়। কপাল চাপড়ে হায় হায় করে ওঠেন রাজা। সাধুকে তীব্রভাষায় তিরস্কার করেন। স্বামীজি তখন জলে নেমে পড়েন। গঙ্গার অতল থেকে তুলে আনেন একইরকম দেখতে দুই তরবারি। রাজাকে জিজ্ঞেস করেন: কোনটা তোমার তরবারি? চিনতে পারছ? স্বভাবতই রাজার তখন ভিরমি খাওয়ার দশা!
ত্রৈলঙ্গস্বামী একবার কাশীর রানিমাকেও উচিতশিক্ষা দিয়েছিলেন।
শুধু তাই নয়, নিজের মৃত্যুর দিনক্ষণ নাকি আগে থেকেই বলে দিয়েছিলেন তিনি। এবং তা ছিল একেবারে নির্ভুল!
লেখা: গৌতম ব্রহ্ম
পাঠ: গৌতম ব্রহ্ম
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস