এই চিত্রনাট্যের কাহিনি ও সব চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবের কোনও ঘটনা বা চরিত্রের সঙ্গে কোনও মিল খুঁজে পাওয়া গেলে, সেটি অনিচ্ছাকৃত ও কাকতালীয়।
এবার আপনাদের সামনে কথা বলতে আসছেন, আমাদেরকে দিশা দেখাতে আসছেন, বক্তৃতা দিতে আসছেন, মাননীয় মন্ত্রী শ্রী ঢোলগোবিন্দ গড়গড়ি।
(জনতার সমবেত উচ্ছ্বাস ও হাততালি)
মন্ত্রীমশাই: নমস্কার, নমস্কার। বড়দের প্রণাম, ছোটদের ভালবাসা। আবার চলে এসছি আমি, আপনাদের কাছের মানুষ, আপনাদের কাছেই চলে এসেছি। এই যে আমার সামনে এত লোক এত লোক! কিলবিল কিলবিল করছে। তার মানেটা কী! তার মানে হল একটাই। জনগণ আমাদের সাথে ছিল, আছে আর থাকবে। তার কারণটা কী? কি কারণটা কী? কারণ হল, একটাই, জোয়ার, জোয়ার। উন্নয়নের জোয়ার।
কারণ, আমি কথা পছন্দ করিনা মোটে। সে যারই হোক। আমার, আপনার, বিরোধী পক্ষের। এই যে সব এত কথা বলে, এত সমালোচনা, আমার আসলে এসব একদম ভাল্লাগেনা। আমি ছোটবেলা থেকে একটাই জিনিস পছন্দ করেছি, ‘কথা কম, কাজ বেশি’। কাজ, কাজ আর কাজ।
(জনতার উদ্বেলিত উচ্ছ্বাস ও আরও হাততালি)
এত হাততালি দেখে, আমার আবার লজ্জা করে।
আসলে, আমি ছোটবেলা থেকেই খুব প্রচার-বিমুখ। এই যে আমি, এই এলাকার দায়িত্বে ছিলাম। কী করিনি? কী করিনি! সবই করেছি (মৃদু কাশির শব্দ)। বাপরে বাপ। আজ তো শরীর খারাপ নিয়ে কথা বলতে এসেছি। কারণ, আমি আপনাদের ভালবাসি। সেই ভালবাসা থেকে এসেছি। এবং আমার কাজের নেশাটাই কিন্তু এই জায়গা থেকেই। এই এলাকায়, হ্যাঁ, এই এলাকায় বারো লক্ষ টিউবওয়েল বসিয়েছি। মুখের কথা! কেউ কি জানে!
(পাশ থেকে কেউ অস্ফুটে মন্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করেন)
জনৈক কর্মী: ও স্যার ওটা হাজার হবে। হাজার।
মন্ত্রীমশাই: আহা একই হল। (মাইক থেকে মুখ সরিয়ে)
(আবার মাইকে ফিরে এসে) ওই যে দূরে দেখতে পাচ্ছেন, ওই যে খালটা। কি সুন্দর জল। অ্যাঁ। আমিও দেখতে পাচ্ছি, আপনারাও দেখতে পাচ্ছেন।
(পাশ থেকে আবার সেই কথার মাঝেই মন্ত্রীকে কিছু বলার চেষ্টা করেন)
জনৈক কর্মী: ও স্যার, ও স্যার।
মন্ত্রীমশাই: আহা! (বিরক্তি নিয়ে) আবার কি হল! কথা বলতে দাও তো।
(মন্ত্রীমশাই পুনরায় মাইকে বীরবিক্রমে শুরু করেন)
মন্ত্রীমশাই: যেটা বলছিলাম, ওই যে সুন্দর খালটা। কে তৈরি করেছে ওই খাল! আমরা তৈরি করেছি। কারণ, আমরা জানি ভারত একটি কৃষিপ্রধান দেশ। আমি জানি ভূমিসংস্কার-এর গুরুত্ব কি। আমরা জানি, কৃষকরা ভালো না থাকলে, চাষবাস ভালো করে না হলে, দেশের উন্নতি হবেনা। আমরা জানি। আমি কৃষকদের কথাও ভেবেছি। অ্যাঁ। কারণ, আমি তো আন্দোলন করে গ্রাসরুট লেবেল থেকে উঠে আসা একটা মানুষ। আমি জানি কৃষকদের দুর্দশার কথা। তাই ওই খালের ব্যবস্থা। যাতে কৃষকরা। অ্যাঁ। মানে চাষ করার জন্য কোনও অসুবিধে না হয়। এরজন্য একটা প্ল্যান লাগে। এসব কি একদিনে হয়! আমরা করেছি। কিন্তু আমরা প্রচার করিনি, এটা নিয়ে। আজকে বলতে বাধ্য হচ্ছি। কি করব বলুন! বিরোধী দলের লোকেরা, সারাদিন, মিথ্যে প্রচার করে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা! কাজ করে যাচ্ছি। এখন মাঝে মাঝে বলতেও হয়। আর মিডিয়াগুলো হয়েছে সেরকম। অ্যাঁ। সবকথা সবাই বলেও না। এইজন্যেই তো আমাদের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগটা রাখতে হবে।
(পাশ থেকে আবার সেই কর্মী। কথার মাঝে, এইবার মরিয়া চেষ্টা করে, বিরাট একটা গলদ হয়ে চলেছে ক্রমাগত। মন্ত্রীমশাইকে, সে বোঝাতেও পারছেনা, থামাতেও পারছেনা। কিন্তু গাড্ডায় পড়ার আগে, অন্তত শেষবার চেষ্টা করে দেখে, যদি বলা যায়)
জনৈক কর্মী: ও স্যার (অত্যন্ত অসহায় ও কাঁদোকাঁদো হয়ে)
মন্ত্রীমশাই: আহা! কি হল কি?
জনৈক কর্মী: আপনি ভুল করছেন তো
(মন্ত্রী বারবার এই বাঁধা পেয়ে অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে)
মন্ত্রীমশাই: তুমি থাম তো। যত্তসব।
কি ভুল বলছেন মন্ত্রীমশাই! আর কিই বা জানানোর জন্য কর্মীটির এই ব্যাকুল চেষ্টা!
শুনুন…
লেখা: সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়
পাঠ: সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায় ও শঙ্খ বিশ্বাস
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস