৮৫ বছরের জীবনে কখনও আত্মজীবনী লেখেননি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। খুবই বিস্ময়কর ব্যাপার। এইরকম একজন মানুষ যিনি জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এত সফল, যিনি এত নাটক লিখেছেন, এত গল্প লিখেছেন, নিয়মিত কবিতা লিখতেন, তিনি আত্মজীবনী কখনও লেখেননি। কারণ, তাঁর মনে হত, আমাদের যে সামাজিক পরিবেশ তাতে সত্যি কথাগুলো বলা যাবে না। সেজন্যই জীবনের একেবারে প্রায়াহ্নে এসে তিনি যখন ‘সংবাদ প্রতিদিন’–এর জন্য আত্মজীবনী লিখতে রাজি হলেন, সেটা কিন্তু একটা বিস্ময়কর ঘটনা হল। কারণ তিনি আত্মজীবনী লেখেননি কখনও। এটাও যে পূর্ণাঙ্গ আত্মজীবনী, তা নয়। কিছুটা ‘মিনিয়েচার আত্মজীবনী’ বলা যায়। এবং তাঁকে তিনটি হেডলাইন আমরা সাজেস্ট করেছিলাম ‘সংবাদ প্রতিদিন’–এর সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলার পর। একটা হেডলাইন ছিল: ‘জীবনে কী পাব না’। একটা ছিল: সৌমিত্তিরের ডায়রি। আর থার্ড ছিল: দিনের শেষে। সৌমিত্রদা কিছুক্ষণ ভেবে ‘দিনের শেষে’টা পছন্দ করেছিলেন। তখন আমি ওঁকে জিজ্ঞেস করি যে, ‘দিনের শেষে’টা কেন বাছছেন? উনি বললেন, ‘আসলে আমার তো দিনের শেষে চলেই এসেছি।’ আমি বললাম, “আপনি যদি অনেক এমন কথা বলেন যেগুলো আগে কখনও বলেননি, তাহলে কি ‘জীবনে কী পাব না’ হলেই ভাল হয় না?” উনি বললেন, “না, ‘দিনের শেষে’টাই আমার পছন্দ হচ্ছে।”
তিনি যে–কথাগুলো জীবনে কখনও বলেননি, এটা সরাসরি শোনার সৌভাগ্য হচ্ছে ‘সংবাদ প্রতিদিন শোনো’র শ্রোতাদের। এর আগে কখনও সৌমিত্র কোনও ফর্মে এই জাতীয় কথা বলেননি। একেকটা দিন তাঁর কলাম নিতে গিয়ে সত্যিই খুব আশ্চর্য লেগেছে এটা ভেবে যে, জীবনের এতগুলো বছর অবধি তিনি কী করে এইসব কথা না বলে, লোককে না জানিয়ে নিজের মধ্যে আগলে রেখেছিলেন! কিছু কথা আবার এমন আছে, এই এপিসোডগুলোতে যেগুলো আমরা শেয়ার করতে চলেছি, যেগুলো বলার পর তিনি বলেছিলেন না–লিখতে। কারণ তাঁর মনে হয়েছিল যে বিতর্ক হতে পারে।
যেমন সুপ্রিয়াদেবীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে, যেমন উত্তম কুমারের সঙ্গে তাঁর কোনও কোনও ব্যক্তিগত কথা। একজন মানুষ, যাঁর অভিজ্ঞতা এত বিশাল, এতজন মানুষের সঙ্গে তিনি সময় কাটিয়েছেন––– শিশির ভাদুড়ী, সত্যজিৎ রায়, ছবি বিশ্বাস, বিকাশ রায়, উত্তম কুমার, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়––– এঁদের গল্পগুলো যখন বলতেন, তখন সত্যিই অবাক লাগত। মনে হত, ওঁর মনটা বুঝি একটা সাতমহলা বাড়ির মতো। যার মধ্যে এতসব রত্নভাণ্ডার আছে যে ভাবাই যায় না! সেগুলো ওঁর নিজের গলায় ‘সংবাদ প্রতিদিন শোনো’–র শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে যেতে চলেছে এবার। শুনুন ‘সৌমিত্র রেট্রোস্পেক্টিভ’।
লেখা: গৌতম ভট্টাচার্য
পাঠ: গৌতম ভট্টাচার্য
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস