আতঙ্কের নাম করোনা। বছর দুয়েক আগেও এমন শিরোনাম চোখে পড়ত। ধীরে ধীরে সেই আতঙ্ক মুছে সুস্থ হয়েছে পৃথিবী। অনেকেই নিউ নরম্যালকে আপন করে নিয়েছেন। তবে ভয় এখনও কাটেনি। বিষয়টা স্পষ্ট হল এক দম্পতির কাণ্ড দেখে। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ফিরছে অতিমারীর আতঙ্ক। এশিয়ার দুই বৃহত্তম শহরে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। ব্লুমবার্গের দাবি অনুযায়ী হংকং ও সিঙ্গাপুরে নতুন করে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে। তাতেই শুরু হয়েছে উদ্বেগ। বছর দুই আগে অবধি যে উদ্বেগ ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী, নতুন করে তা ফিরছে।
মানবসভ্যতার ইতিহাসে ২০২০ অভিশপ্ত সাল হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে। তার কারনটা অবশ্য কোভিড অতিমারী। কয়েক লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। কার্যত ওলটপালট হয়েছিল গোটা বিশ্বের জীবনযাপন। সেই প্রভাব কাটতে সময় লেগেছে বেশ কয়েক বছর। তাও যে পুরোপুরি কেটেছে বলা যায় না। মাঝেমধ্যেই শোনা গিয়েছে, নতুন ভ্যারিয়েন্ট ভয় ধরাতে আসছে আবার। মৃত্যুমিছিল বন্ধ হতেও সময় লেগেছে। বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশেই ছড়িয়েছিল ভাইরাসের আতঙ্ক। সংক্রমণ রুখতে শুরু হয় লকডাউন। ব্যতিক্রম ছিল না ভারতও। ২০২০ সালের মার্চ মাসে অন্যান্য দেশের মতো ভারতে জারি হয় সম্পূর্ণ লকডাউন। একইসঙ্গে, বহু প্রিয় মানুষের মৃত্যু আর অতিমারীর ভয়ঙ্কর রূপ দেখে সকলের মনেই জন্ম নিয়েছিল এক অজানা আতঙ্ক। নিজেদের সুরক্ষিত রাখার জন্য কঠিন থেকে কঠিনতর কাজ করতেও কসুর করেননি দেশবাসী। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে দীর্ঘদিন নিজেদের গৃহবন্দি করে রেখেছিলেন অনেকেই। মাস্ক ছাড়া বাড়ির বাইরে পা রাখার কথাও ভাবতে পারতেন না কেউ কেউ। সরকারি নিষেধাজ্ঞা তো বটেই, নিজেদের মনেও ভয় ছিল বিস্তর। তবে সময়ের সঙ্গে তা কেটেছে। মাস্ক খুলে বাড়ির বাইরে পা রেখেছেন অনেকে। বর্তমানে সেটাই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সকলের ক্ষেত্রে কি ব্যাপারটা স্বাভাবিক হয়েছে?
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা কিন্তু সেকথা বলছে না। এর আগে দেখা গিয়েছে করোনা আতঙ্কে প্রায় তিন বছর ধরে মেয়েকে নিয়ে গৃহবন্দি ছিলেন অন্ধপ্রদেশের কুয়েরু গ্রামের বাসিন্দা মানি। এতগুলো দিনে এক মুহূর্তের জন্যও নিজের ঘর ছেড়ে বেরোননি তিনি। এমনকি নিজের স্বামীকেও ঘরে ঢুকতে দিতেন না ওই মহিলা। অবশেষে পুলিশের সহযোগিতায় দরজা ভেঙে তাদের উদ্ধার করা হয়। প্রায় একইরকম ঘটনার সাক্ষী স্পেনের দুই খুদে। এক্ষেত্রে অপেক্ষার সময়টা চার বছর। মানে সেই ২০২১ সালে করোনা আতঙ্কে ঘরবন্দী হতে হয়েছিল তাদের, মুক্তি মিলেছে সদ্য। জানা গিয়েছে, তাদের বাবা-মা একপ্রকার জোর করে ঘরে আটকে রেখেছিলেন এতদিন। সূর্যের আলো অবধি দেখেনি দু’জন। বিষয়টা কোনওভাবে জানাজানি হতে পুলিশের সহযোগিতায় উদ্ধার হয়েছে দুই খুদে।
করোনা সংক্রমণ রুখতে দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা হয়েছিল ২০২০ সালে। সরকারের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ঘরে থেকে না বেরোলে কিংবা অন্যান্য মানুষের সঙ্গে না মিশলে এই অতিমারী ছড়িয়ে পড়া আটকানো সম্ভব। সেই আদেশ মেনেছিলেন প্রায় সকলেই। কিন্তু তারপর যে পৃথিবী আবার স্বাভাবিক হয়েছে সেই খোঁজ রাখেননি কেউ কেউ। তাই কেউ তিন বছর কেউ চার বছর নিজেদের বা সন্তানদের ঘরবন্দী করে রেখেছেন। বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, এ হল প্যান্ডেমিক প্যানিক। যা এক ধরনের মনোরোগ বলা যায়। বাকীরা স্বাভাবিক হলেও মনে মনে সেই অবস্থাকে মেনে নিতে না পারাই এই সমস্যার কারন। ঘরে আটকে থাকাও স্রেফ ভয় থেকেই। নতুন করে করোনা আতঙ্ক মাথা চাড়া দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই ধরনের বিষয়গুলো চর্চায় ফিরছে। নতুন করে অতিমারী শুরু হলে তা উদ্বেগের বলাই বাহুল্য, বিষয়টা নিয়ে আতঙ্কের যথেষ্ট কারন রয়েছে। তবে আতঙ্ক যে কোন মাত্রায় পৌঁছাতে পারে, এই ঘটনা সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।