অধিকার বুঝে নেওয়ার নাগরিক দাবিতে যদি শিশুপুষ্টির মতো বিষয় না থেকে থাকে, তাহলে অপুষ্টিই দীর্ঘমেয়াদি হয়ে দাঁড়াবে। সেই ক্ষতি ও ক্ষত কি কোনও ভাবেই দূর করা সম্ভব? এ প্রশ্নই আজ বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে।
মেধাশক্তির বিকাশ যদি দেশের লক্ষ্য হয়, তাহলে শিশুদের উপর জোর দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। শিশুদের পুষ্টি যথাযথ হলে, তবেই মেধার বিকাশ। শিক্ষার বিকাশ। প্রকারন্তরে যা দেশের শ্রমশক্তিকেই বাড়িয়ে তুলবে আগামীতে। কিন্তু তা নিয়ে দেশের সরকরারের ভাবনাটা ঠিক কেমন? পিএম-পোষণ প্রকল্পের বরাদ্দ বৃদ্ধির অঙ্ক দেখলে সে-আঁচ মিলবে। এই প্রকল্প এর আগে মিড-ডে মিল প্রকল্প হিসাবেই পরিচিত ছিল। তা সেখানে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ ছিল ৬ টাকা ১৯ পয়সা, প্রস্তাবমতো যা বেড়ে হবে ৬ টাকা ৭৮ পয়সা। অর্থাৎ খরচ বেড়েছে ৫৯ পয়সা। উচ্চ প্রাথমিকের ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধি ৮৮ পয়সা। আগে ছিল ৯ টাকা ২৯ পয়সা, বাড়ার ফলে হবে ১০ টাকা ১৭ পয়সা।
প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের পুষ্টির জন্য কী কী দরকার তার বাঁধা তালিকা আছে। তা দেখলে অবশ্য অবাকই হতে হয়। কেননা ক্যালরির সেই তালিকা আর বরাদ্দ অঙ্ক মোটেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বাংলার কোনও কোনও শিক্ষক সংগঠনের মতে, পুষ্টিতালিকা যদি ঠিক রাখতে হয়, তাহলে এই অঙ্ক হওয়া উচিত অন্তত যথাক্রমে ২০ টাকা ও ২৫ টাকা। সরকারের বরাদ্দ অঙ্কে কিনতে হয় সবজি, তেল, মশলা ও অন্য়ান্য সামগ্রী। ভারত সরকারের মতে, মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মেলাতেই এই বরাদ্দ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু তা যে যথেষ্ট নয়, তা তো শিক্ষক সংগঠনের দাবিতেই স্পষ্ট। এ ছাড়া, বছরভর পাকাপাকি রান্নার লোক ও তাঁদের ন্যূনতম বেতনেরও দরকার আছে। প্রকল্প ঠিকঠাক চালাতে গেলে জরুরি অনেক পদক্ষেপ। তবে কেন্দ্র সরকারের হিসাব কষে যা বরাদ্দ বাড়িয়েছে, আক্ষরিক অর্থেই তা কয়েক পয়সা মাত্র।
উন্নত দেশ হয়ে ওঠার প্রাথমিক শর্তই হল, দেশের মেধাকে লালন করা। আর তার শুরুটা হওয়া উচিত একেবারে বুনিয়াদি স্তর থেকে। আমাদের মতো দেশে প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের খাবারের ব্য়বস্থা করা যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা সকলেই জানেন। স্কুলছুটের সংখ্যা কমাতেও এ প্রকল্প সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সরকার যদি তা বুঝেই থাক, তাহলে বরাদ্দের অঙ্ক বাড়ানোর ক্ষেত্রে এই অঙ্ক কেন নির্ধারণ করা হল, তার হিসাব মেলে না। বরাদ্দ যে বাড়ানো হয়েছে, তা ভালো কথা। কিন্তু যা বাড়ানো হয়েছে, তাতে অবস্থার বিশেষ কিছু বদল হবে বলে তো মনে হয় না। আর এখানেই উদ্বেগ শিক্ষক সংগঠনের। তবে কি যাঁরা স্কুল চালান, এ প্রশ্ন তাঁদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে? তা তো হওয়া উচিত নয়। কেননা এ-প্রশ্ন সামগ্রিক সমাজব্যবস্থার। সাধারণ নাগরিকদেরও মধ্যে থেকেও এ-প্রশ্ন ওঠা জরুরি। কেননা দেশের মেধার বিকাশ না হলে, সত্তর ঘণ্টা কাজ কিংবা রবিবারেও শ্রম দেওয়ার অযৌক্তিক নিদানই শুধু ঘোরফেরা করবে। আদতে এ দেশ লাভবান হবে না। অতএব মেধাশক্তি বিকাশের স্বার্থেই শিশুপুষ্টির উপর আরও জোর দেওয়া উচিত ছিল। বরাদ্দের অঙ্ক যেন বলছে, পুরো বিষয়টিই ধরি মাছ না ছুঁই পানি।
অধিকার বুঝে নেওয়ার নাগরিক দাবিতে যদি শিশুপুষ্টির মতো বিষয় না থেকে থাকে, তাহলে অপুষ্টিই দীর্ঘমেয়াদি হয়ে দাঁড়াবে। সেই ক্ষতি ও ক্ষত কি কোনও ভাবেই দূর করা সম্ভব? এ প্রশ্নই আজ বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে।