ঘোষণা না হলেও, ভারত-পাকিস্তান অশান্তিকে যুদ্ধের সঙ্গেই তুলনা করা হচ্ছে। সেই নিয়ে চর্চায় বুঁদ সোশাল মিডিয়া। ভুয়ো খবরের ছড়াছড়ি। সঠিক তথ্য না পেলে মনের মাধুরী মিশিয় সংঘর্ষের গল্প ফাঁদছেন অনেকে। আর এসবের আড়ালেই যেন আরও এক যুদ্ধের দামামা বেজেছে। ঠিক কেমন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ভারত-পাক অশান্তির আবহে শুরু হয়েছে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ। তবে এক্ষেত্রে আকাশ বা জলপথে নয়, সোশাল মিডিয়ায়। পোশাকি নাম ‘ট্রোল যুদ্ধ’। তাতে ছাড় পাচ্ছেন না বিদেশ সচিবও। কে বা কারা দায়ী, সে প্রশ্ন বৃথা। আলাদা করে কোনও একজনকে চিহ্নিত করা সম্ভবও না। তবে বিষয়টা মারাত্মক আকার নিয়েছে তা প্রমাণ করেছে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা।
করাচি বেকারিতে হামলার কথাই ধরা যাক। এই ঘটনা প্রমাণ করেছে, নামেই যত যায় আসে! অর্থাৎ এই বেকারি সংস্থার নাম প্রতিবেশী দেশের জনপ্রিয় শহরের নামে হওয়ার কারণেই হামলা। ভারতের পতাকা কাঁধে দেশাত্মবোধের পালে হাওয়া তুলে এই কাজ সেরেছেন দেশভক্তরা। ঘটনার নেপথ্যে রাজনৈতিক মদত খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে। তবে সে প্রসঙ্গে না গিয়ে, করাচি বেকারিতে কেন হামলা হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন। প্রাথমিক কারণ, নাম নিয়ে সমস্যা। অথচ সংস্থার তরফে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছিল, পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই। বেকারি সংস্থার যাবতীয় ইতিহাস নেট ঘাঁটলেই বোঝা যায়। সেসব ফুরসত কোথায় ওই দেশভক্তদের! তাদের দাবি নাম বদলের। তা হয়নি, তাই হামলা হয়েছে। একথা বলাই বাহুল্য, এমন জনপ্রিয় সংস্থা চাইলেই নাম বদলাতে পারে না। আর যেখানে পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই, সেখানে নাম বদলের প্রশ্ন আসছেই বা কোথা থেকে? বিষয়টা নিইয়ে প্রশাসনের তেমন সমস্যা নেই। কারণ হামলা হলেও, তাতে কারও প্রাণ যায়নি। এমনকি ক্ষয়ক্ষতির পরিমানও এমন কিছু বেশি নয় বলেই দাবি পুলিশ আধিকারিকদের। আর তাই, এই নিয়ে তেমন কোনও তদন্তের প্রয়োজন মনে করেননি তাঁরা। স্বাভাবিক ভাবেই আড়ালে চলে গিয়েছে, কেন হামলা সেই প্রশ্ন। সোশাল মিডিয়া অবশ্য পিছিয়ে নেই! বিষয়টা জানাজানি হতে, সেখানেও শুরু হয়েছে শোরগোল। কেউ পক্ষে, কেউ বিপক্ষে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন। ব্যাস এতটুকুই। তবে এই হামলার নেপথ্যে যে সোশাল দুনিয়ার বড় ভূমিকা রয়েছে তা অস্বীকার করা যায় না।
যে কোনও যুদ্ধেই শত্রুদেশটিকে বয়কটের ডাক ওঠে। ভারত-পাক অশান্তির আবহেও ব্যতিক্রম হয়নি। নেটদুনিয়ায় উঠে এসেছে এমন অনেক সংস্থার নাম যার সঙ্গে পাকিস্তানের যোগ রয়েছে। আবার এমন সংস্থার নামও এসেছে যার সঙ্গে পাকিস্তানের যোগ নেই। আর সেখানেই যত সমস্যা। কোনটা ঠিক কোনটা ভুল বিচার না করেই বয়কটের যুদ্ধে নেমেছেন অনেকে। করাচি বেকারিতে হামলা তারই ফলাফল মাত্র। কেউ যুদ্ধবিরোধী কথা বললে, বা শান্তি বাণী আওড়ালে কটাক্ষের শিকার হচ্ছেন। সবার মনে প্রতিশোধের আগুন জ্বলতে হবে, এবং গড় দাবি হতে হবে যুদ্ধ, না হলেই সমস্যা। প্রাথমিকভাবে মনে হতে পারে, বিষয়টা আর পাঁচটা সোশাল মিডিয়া ইস্যুর মতোই। অর্থাৎ আজ আছে কাল নেই। কিন্তু ভারত-পাক অশান্তির আবহ সেই ধারণা বদলেছে। বিষয়টা মারাত্মক আকার নিয়েছে বলাই যায়। আর সেক্ষেত্রে উঠে আসে বিদেশসচিবকে কটাক্ষের বিষয়টা।
ভারত-পাক অশান্তির আবহে এও এক অবাক করার মতো ঘটনা বটে। দেশের বিদেশ সচিব কটাক্ষের শিকার হয়েছেন! কেননা তিনি যুদ্ধবিরতির কথা ঘোষণা করেছেন। যারা দুদিন আগেও অপারেশন সিঁদুরের মতো অভিযানের জন্য বিদেশসচিবকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন, সেই তাদেরই অনেকে এই কটাক্ষের নেপথ্য নায়ক। শুধু বিদেশ সচিব নন, কটাক্ষের শিকার তাঁর পরিবারও। সোশাল মিডিয়ায় তাদের নামে কুৎসা ছড়ানো হয়েছে। এমনকি শোনা যাচ্ছে, বিদেশসচিবের মেয়ের ফোন নাম্বার অবধি বিনা অনুমতিতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ‘কেন’-র উত্তর নেই। নেপথ্যে কারা, এও অধরা। স্রেফ ট্রোলিং সত্য। তাতে কারও সমস্যা হল কি না, দেখার প্রয়োজন নেই। নিজেদের স্বার্থের কথা ভেবে ট্রোল যুদ্ধের শরিক হওয়াই দস্তুর। আগামীতে হয়তো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কিন্তু নেটদুনিয়ার এই নিজস্ব সমস্যা এত সহজে হয়তো মিটবে না। ভয়ঙ্কর থেকে আরও ভয়ঙ্কর আকার নেবে এই ট্রোলের লড়াই।