দিন কয়েক আগেই দেশবিরোধী কার্যকলাপে ইন্ধন জোগানোর অভিযোগে অসমে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে একটি মাদ্রাসা। সেই ঘটনার পর থেকেই নড়চড়ে বসেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। রাজ্যের মাদ্রাসাগুলিতে সমীক্ষা চালানোরও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এ বার সে নিয়েই ক্ষোভ প্রকাশ করল ইসলামিক পড়ুয়া ও গবেষকদের সংগঠন জামাইয়াত উলেমা-ই হিন্দ। ঠিক কী বলছে তারা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
যোগী সরকারের ব়্যাডারে রাজ্যের একাধিক মাদ্রাসা। উত্তরপ্রদেশের অস্বীকৃত মাদ্রাসাগুলি নিয়ে খোঁজখবর করার নির্দেশ দিয়েছে খোদ প্রশাসন। সেসব স্কুলের পড়ুয়া থেকে শুরু করে শিক্ষকসংখ্যা, সিলেবাস , এমনকী পড়ুয়ারা সমস্ত সুযোগসুবিধা পাচ্ছে কিনা, সে সংক্রান্ত সমস্ত তথ্যই জানতে চেয়েছে সরকার। আর সে নিয়েই এবার ক্ষোভপ্রকাশ করল ইসলামিক পড়ুয়া ও গবেষকদের সংগঠন জামাইয়াত উলেমা-ই হিন্দ।
আরও শুনুন: হিন্দু গণহত্যা নিয়ে তৈরি ছবিতে সেন্সরের কোপ, ফুঁসে উঠল আরএসএস
জঙ্গিযোগের সন্দেহে অসমে মাদ্রাসা উড়িয়ে দেওয়ার পর থেকেই নড়েচড়ে বসেছে যোগী সরকারও। বেআইনি কিছু দেখলে অসমের মতোই বুলডোজার নীতির প্রয়োগ করতেও পিছু হঠবে না প্রশাসন। এই মর্মে হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছিল যোগী সরকারের তরফে। আর সরকারের এই নির্দেশিকার পর থেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে একাধিক মুসলিম সংগঠন। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের পর এবার যোগী সরকারের উপর ক্ষোভ উগরে দিল জামাইয়াত উলেমা-ই হিন্দ। তাঁদের বক্তব্য, আদতে তাদের শিক্ষাব্যবস্থাকেই কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছে যোগী সরকার।
সম্প্রতি ‘মাদ্রাসা বাঁচাও’ কর্মসূচীও নেওয়া হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে। ইতিমধ্যেই জামাইয়াত উলেমা-ই হিন্দের তরফে একটি হেল্পলাইন নম্বরও খোলা হয়েছে। যেখানে যে কোনও পরিস্থিতিতে অভিযোগ জানাতে পারবে মাদ্রাসাগুলি। এ নিয়ে কিছু দিন আগেই একটি বৈঠকের আয়োজন করেছিল তারা, যেখানে উপস্থিত ছিলেন অন্তত দু’শোটি মাদ্রাসার প্রতিনিধি। লখনউ, শাহরনপুর-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিনিধিরা যোগ দেন ওই বৈঠকে।
উত্তরপ্রদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করা হয়েছে বৈঠকে। শুধু তাই নয়, যোগী সরকারের এই পিছিয়ে পড়া মানসিকতা আসলে সমাজে বিভাজন ও সমস্যা তৈরি করছে বলেও মন্তব্য করা হয় সংগঠনের তরফে। কোনও ভাবেই প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত সমর্থনযোগ্য নয় বলেও জানানো হয়েছে বৈঠকে। আসলে সংখ্যালঘু ও মুসলিম তরুণপ্রজন্মের ভবিষ্যৎকে ক্ষতি করার চেষ্টা চলছে বলেও দাবি তাদের।
আরও শুনুন: ইসলামি ছোঁয়ায় আপত্তি! যোগীরাজ্যের ওয়ার্ডে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নামও বাতিলের সুপারিশ
যোগী সরকারের এই সাম্প্রদায়িক অবস্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রয়োজন বলেই সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট মৌলানা মাহমুদ আসাদ মাদানি। সমাজে মাদ্রাসার গুরুত্বের কথাও উঠে আসে সেই বৈঠকে। উঠে এসেছে মাদ্রাসা থেকে পাশ করে বেরোনো পড়ুয়াদের সাফল্যের গল্পও। এই মাদ্রাসাগুলি শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই নয়। পূর্বপুরুষের কাছ থেকে পাওয়া উপহারও বটে। সে কথাই ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন মাদানি। ফলে যে কোনও কিছুর বিনিময়েই মাদ্রাসাগুলিকে রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর জামাইয়াত উলেমা-ই হিন্দ। আর সে কথাই পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে ওই বৈঠকে।