এই অ্যাপের সাহায্যে কেবলমাত্র হিন্দু বিক্রেতাদের কাছ থেকেই জিনিস কেনা অথবা পরিষেবা পাওয়া যাবে। হিন্দু তীর্থস্থানে বেড়াতে যাওয়া যাবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারদর্শী হিন্দু কর্মীদের নামের তালিকা দেওয়া থাকবে এখানে। এমনকি নিত্যনৈমিত্তিক মুদি বাজারের জন্যও এখানে পাওয়া যাবে হিন্দু ব্যবসায়ীদের খোঁজ। ‘সম্প্রদায় সচেতন’ হিন্দু-বিবাহ পরিচালনায় সাহায্য করবে এই অ্যাপ। সর্বোপরি, নানা ধরনের জাতীয়তাবাদী ক্যাম্পেন, দেশাত্মবোধক বা ধর্মরক্ষামূলক প্রচারে যোগও দেওয়া যাবে এই অ্যাপ ব্যবহার করেই।
হিন্দু হলে তবেই পরিষেবা পাওয়া যাবে। যাঁরা পরিষেবা দিতে আসবেন, তাঁরাও হিন্দুই হবেন। আর তাতেই নাকি খুলে যাবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের গৌরব পুনরুদ্ধারের পথ। বিশাল দুরাফে-র ‘কল হিন্দু জবস্’ (Call Hindu Jobs) নামের অ্যাপটির দাবি ঠিক এমনটাই। আপাতদৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে, বাজারচলতি আর দশটা চাকরি খোঁজার প্ল্যাটফর্মের থেকে সেটির বিশেষ কিছু পার্থক্য নেই। তবে তফাৎ এই হিন্দুতেই।
অ্যাপ খুললেই চোখে পড়ে, ব্যাগ হাতে চাকরি করতে যাওয়া একজন মানুষের ইলাস্ট্রেশন। যেমনটা আর দশটা এমপ্লয়মেন্ট প্ল্যাটফর্মে থাকে। কিন্তু তারপরেই খেয়াল হয়,অ্যাপের ইন্টারফেস জুড়ে গেরুয়া রঙের ছড়াছড়ি। তাছাড়া, ‘অর্গানাইজড্ হিন্দু’, ‘এম্পাওয়ার্ড হিন্দু’-র মতো স্লোগান চোখে পড়ে বারে বারেই। তখন অবাক হতে হয় বইকি। বয়স, লিঙ্গ কিংবা স্কিলের ভিত্তিতে কর্মী খুঁজছে কোনও কোম্পানি, এমন দেখা যায় প্রায়শই। সেক্ষেত্রে যদি কোনও সংস্থা ধর্মীয় পরিচয়কে গুরুত্ব দেয়, তাও বুঝি অস্বাভাবিক লাগে না। কিন্তু ‘কল হিন্দু জবস্’ (Call Hindu Jobs) কোনও নির্দিষ্ট সংস্থা নয়, বরং বিশ্বস্তরে সামগ্রিকভাবে হিন্দু ক্ষমতায়নের কথা বলে। ওয়েবসাইটটির দাবি, সেটি এমন এক ধর্মীয়-সামাজিক-ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, যা সনাতন ধর্মের সমৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নিবেদিত।
এই অ্যাপের সাহায্যে কেবলমাত্র হিন্দু বিক্রেতাদের কাছ থেকেই জিনিস কেনা অথবা পরিষেবা পাওয়া যাবে। হিন্দু তীর্থস্থানে বেড়াতে যাওয়া যাবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারদর্শী হিন্দু কর্মীদের নামের তালিকা দেওয়া থাকবে এখানে। এমনকি নিত্যনৈমিত্তিক মুদি বাজারের জন্যও এখানে পাওয়া যাবে হিন্দু ব্যবসায়ীদের খোঁজ। ‘সম্প্রদায় সচেতন’ হিন্দু-বিবাহ পরিচালনায় সাহায্য করবে এই অ্যাপ। সর্বোপরি, নানা ধরনের জাতীয়তাবাদী ক্যাম্পেন, দেশাত্মবোধক বা ধর্মরক্ষামূলক প্রচারে যোগও দেওয়া যাবে এই অ্যাপ ব্যবহার করেই।
হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সদস্য বিশাল দুরাফে এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে, এই অ্যাপের উদ্দেশ্য অন্য কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ সৃষ্টি নয়। বরং প্রত্যেক হিন্দুর যাতে কর্মসংস্থান হয়, তারই প্রচেষ্টামাত্র। কিন্তু পাশাপাশি এ কথাও বলেন তিনি যে, “হিন্দু ভাইদের উচিত যে কোনও কাজের জন্য সবার আগে হিন্দু কর্মীদেরই ডাকা। তা যদি একান্ত সম্ভব না হয়, তখন নাহয় অন্য ধর্মের মানুষদের ডাকা যেতে পারে! তাঁর এমন মন্তব্য শুনে স্বাভাবিক ভাবেই দ্বিধাবিভক্ত নেটনাগরিকেরা। বিরোধীরা বলেন, বিজেপি সরকারের উত্থানের পর থেকেই খানিক ইউটোপিয়ান এক হিন্দুরাষ্ট্রের ধারণা ছড়িয়ে পড়েছে জনমানসে। পহেলগাঁও কাণ্ডের পর আবারও নতুন করে উঠে এসেছে সে প্রসঙ্গ। এমন অবস্থায় একদিকে যেখানে কর্নেল সোফিয়া কুরেশির ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মুখ হয়ে ওঠা কিছুটা হলেও সাম্প্রদায়িক বিভেদ রোধ করছে, সেখানেই অন্যদিকে যেন সাম্প্রদায়িক বিভাজনকেই নতুন করে উসকে দিচ্ছে ‘কল হিন্দু জবস্’ (Call Hindu Jobs) -এর মতো অ্যাপ।
সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের বিজেপি মন্ত্রী মঙ্গল প্রভাত লোধার হাতে আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছে অ্যাপটির। তিনি সংবাদমাধ্যমক জানান যে, কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের জন্য যদি কেউ ইতিবাচক কাজ করতে চায়, তবে তাতে ভুল কিছু নেই। যদি অন্য কোনও সম্প্রদায়ও এমন কাজ করতে এগিয়ে আসে, তবে তারাও সরকারি সাহায্য পাবে, এমনটা তিনি মনে করেন।
এর আগেও ‘হিন্দু লিঙ্কস্’ ও ‘শূরবীর প্রোগ্রাম’-এর মতো একাধিক হিন্দুত্ববাদী পোর্টালের সাক্ষী থেকেছে ভারত। তবে ‘কল হিন্দু জবস্’ (Call Hindu Jobs) বাজারে আসার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই যেভাবে জিতে নিয়েছে কয়েকশো সাবস্ক্রাইবারের মন, তা নতুন করে ভাবনা জাগায়। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের উন্নয়নের চেষ্টা ভুল নয়, তবে ভারতের মতো ধর্মীয় সংবেদনশীল দেশে কেবল ধর্মের ভিত্তিতে কর্মী বা পরিষেবা বেছে নেওয়া আদতে সাম্প্রদায়িক বিভাজনকেই পথ দেখায়। আর্থিক প্রয়োজনীয়তাকে তো আর ধর্মের হিসেবে ভাগ করা সম্ভব নয়। তাই প্রশ্ন জাগে, সত্যিই কি আপামর হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষদের জন্য চাকরিক্ষেত্রে শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে? নাকি, অর্থনৈতিক পরিসরে মুসলিমদের কোণঠাসা করতেই এ জাতীয় অ্যাপ? এ প্রশ্নগুলো কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।