আশঙ্খা হয় যে, আগামী দিনে কি বাংলা ভাষায় লিখবার কাজও সহজ হয়ে যেতে পারে এআই-এর কাছে? এআই-এর সাহায্যে ইংরেজি ভাষায় লেখা প্রচুর বই কিন্তু ইতিমধ্যেই ভরে গিয়েছে বাজারে। বিশেষত নন-ফিকশন জঁর-এর ক্ষেত্রে চাইলেও এআই-এর ব্যবহার ঠেকিয়ে রাখা খুব একটা সহজ কাজ হবে না।
বছরভর কতই তো বই প্রকাশ পায়। বই পড়া সময়ের সঙ্গে কমে যাচ্ছে কিনা তাই নিয়ে যতই বিতর্ক হোক না কেন, কলকাতা বইমেলা, কলেজস্ট্রিট আর অনলাইন বুক স্টোর-গুলিতে মানুষের ভিড়ই জানান দেয় যে আছে! আছে! সত্যিকারের বইপ্রেমীরা আজও আছে! আগামীতেও থাকবে। তবে লেখকেরা থাকবেন কি? আদিকাল থেকে এখনও অবধি বইয়ের যে বিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে মানবসমাজ, তাতে দেখা গিয়েছে যে একসময় কেবলমাত্র পাতার উপর ছাপার অক্ষরে লেখা বইই গ্রহণ করত পাঠককূল। এরপর পাঠক আধুনিক হয়েছেন। অনলাইন পিডিএফ কিংবা ই-বুককেও তাই পাকাপাকি জায়গা দিয়েছেন হৃদয়ে। কিন্তু ভবিষ্যতে যদি সম্পূর্ণ এআই-এর ব্যবহার করে কোনও বই লেখা হয়, তাহলে তার প্রতি কেমন মানসিকতা থাকবে পাঠকদের? সেক্ষেত্রেও কি প্রাথমিক দ্বিধা, সাদর অভ্যর্থনায় পরিণত হবে একটা সময়ের পর?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যে খুব দ্রুত গতিতে মানুষের মতন সৃজনশীলতা আয়ত্ত করছে, তার সাক্ষী আমরা সকলেই। এমনকি প্রাথমিকভাবে যদি কোনও নির্দিষ্ট ধরণের অসঙ্গতি থাকছে বট-গুলির কাজে, দেখা যাচ্ছে কিছুদিনের মধ্যেই সেটাকে শুধরে ফেলে আরও উন্নতমানের সৃষ্টিতে সক্ষম হচ্ছে এআই। তা সে আঁকা হোক বা লেখা। শুধু যে সে নিজস্ব শিল্পশৈলী সৃষ্টি করছে তাই নয়, পর্যাপ্ত প্রম্পট দিলে বিখ্যাত কোনও লেখক, কবি বা শিল্পীর ধারাও নকল করতে পারছে হুবোহু। সাম্প্রতিক সময়ে এর অন্যতম উদাহরণ হায়াও মিয়াজাকি-র স্টুডিও জিবিলি আর্টফর্ম। পরের দিকের রেপ্লিকাগুলি সহজেই ধরে ফেলা গেলেও, ট্রেন্ড-এর শুরুতে কিন্তু সাধারণ মানুষের বুঝতে রীতিমত সময় লেগে গিয়েছিল যে সে কাজ কোনও মানুষের নয়, বরং এআই-এর!
বাংলা কিংবা অন্যান্য কোনও আঞ্চলিক ভাষার চাইতে অনেক বেশি ব্যপ্তি ইংরেজি ভাষার। আর তাই ইতিমধ্যেই ইংরেজি ভাষায় গল্প-কবিতা লিখবার দক্ষতা যথেষ্ট করায়ত্ত করে ফেলেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এমনকি একটি সার্ভে-তে একদল পাঠককে এআই ব্যবহার করে লেখা গল্প পড়তে দিয়ে দেখা গিয়েছে যে, মাত্র চল্লিশ শতাংশ মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করলেও, বাকিরা কিন্তু বুঝতেই পারেননি লেখকের আসল পরিচয়। যারা বুঝতে পেরেছেন যে বইটির লেখক কোনও মানুষ নন, তাঁরা অবশ্য তখনই আর পড়তে চাননি বইটি। কারণ পাঠকেরা সকলেই এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে মানুষের হাতে লেখা না হলে সে লেখায় কখনওই প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় না। এআই লেখক যে এত সহজে প্রকৃত পাঠকদের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারবে না, তা স্পষ্টতই বোঝা গিয়েছে এ থেকে।
তবে এ থেকে আশঙ্খা হয় যে আগামী দিনে কি বাংলা ভাষায় লিখবার কাজও সহজ হয়ে যেতে পারে এআই-এর কাছে? এআই-এর সাহায্যে ইংরেজি ভাষায় লেখা প্রচুর বই কিন্তু ইতিমধ্যেই ভরে গিয়েছে বাজারে। বিশেষত নন-ফিকশন জঁর-এর ক্ষেত্রে চাইলেও এআই-এর ব্যবহার ঠেকিয়ে রাখা খুব একটা সহজ কাজ হবে না।
তবে এআই কোনও শিল্পসৃষ্টি করলে তা নিয়ে নানান প্রশ্ন থেকে যায়। যেমন, সেই সৃষ্টির আসল মালিক কাকে বলা চলে? যিনি সেই অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছেন, নাকি যিনি প্রম্পট দিচ্ছেন? নাকি যার শিল্পধারা নকল করে সেটি কর্মসম্পাদন করছে? আর এইখানে উঠে আসে নতুন আরেকটি প্রশ্ন। সত্যিই কি সমস্ত লেখক চাইছেন যে এআই-এর ব্যবহার না হোক লেখার ক্ষেত্রে? ধরা যাক এমন কোনও ব্যক্তি, যিনি কল্পনা করেন যে একদিন তাঁর লেখা বই পৌঁছে যাবে অসংখ্য পাঠকের কাছে, অথচ চেয়েও ঠিক মনের মতন লিখে উঠতে পারছেন না, তিনিও কি এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করবেন না? এ প্রশ্নটা রয়ে যাক বরং।