বিবাহ ইতিহাসবিদ সুজান ওয়াগগনের ‘হানিমুন’ শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়ে বলেছেন– যেদিন বা যখন বিয়ে হয়, কনেকে নিয়ে বর কোনও একটা গোপন আস্তানা খুঁজে নেয়। যেখানে তাঁদের দু’তরফের নারাজ রাগী আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ নেই। সেখানেই সে কনেকে নিয়ে থাকে; যদ্দিনে না দু’তরফের পরিবার কনেকে হন্যে হয়ে খোঁজা বন্ধ করে। কিংবা যদ্দিন না কনে গর্ভধারণ করে ফেলে যাতে দু’তরফের পরিবারের আপত্তির সমস্ত কারণ এবং দাবিদাওয়া একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।
১৫০০ সালে ‘হানিমুন’ শব্দকে ‘সাবধানবাণী’ হিসেবে ধরা হত। শব্দের ব্যাখা খুবই পরিষ্কার, ‘যেভাবে চাঁদ ক্ষয়ে যায়, সেভাবেই তোমাদের ভালবাসাও ক্ষয়ে যাবে একদিন, অতএব ভ্যানিশ হওয়ার আগে অন্তত উদযাপন করে নাও’। ‘হানিমুন’ শব্দটির প্রথম রেকর্ডেড ভার্সন মেলে ১৫৪২ খ্রিস্টাব্দে। স্যামুয়েল জনসন লিখেছিলেন– বিয়ের প্রথম মাস, যেখানে আবেগ আর আনন্দধারা ছাড়া আর অন্য কিছুর স্থান নেই সেইটিই ‘হানিমুন’ উদ্যাপনের মাস। মাসের কোন সময়ে সে বিষয়ে বিষদ কোনও তথ্য মেলে না। তবে চাঁদ যখন গোল থালার মতো আকার ধারণ করে, তখনই। কারণ, ক্ষয়িষ্ণু চাঁদের সঙ্গে সৌভাগ্যের সম্পর্ক ক্ষীণ। অতএব পূর্ণচন্দ্রের মায়া এই উদ্যাপনের জন্য জরুরি। ১৫৪৬ সালে কবি-নাট্যকার জন হেইউড, অক্সফোর্ড ইংরেজি অভিধানে একটি ফ্রেজে শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেন, ‘it was yet but hony moone’. এই শব্দের ব্যবহার ‘হানি’ বা মধু বিশেষ মিষ্টি সময়ের পরিচায়ক। আর ‘মুন’ বা চাঁদ, মাসের সমার্থক যেভাবে চাঁদ বাড়ে কমে সেরকমই। ফলে হানিমুনের আভিধানিক অর্থ বলা যায়: বিয়ের পরবর্তী আনন্দদায়ক সময়, যদ্দিন না সম্পর্কটা গেঁজতে শুরু করছে, তার আগে পর্যন্ত।
অনেকেই শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়ে বলেছেন, ‘হানিমুন’ শব্দটি এসেছে নরডিক শব্দ ‘hjunottsmanathr’ থেকে। যার অর্থ: একটি নির্দিষ্ট সময়পর্ব– কনেকে অপহরণ করে বরের লুকিয়ে রাখার কালসীমা যদ্দিন না তার বাড়ির লোক তাকে খোঁজাখুঁজি বিষয়ে একেবারে হাল ছেড়ে দিচ্ছে।
লেখা: সুশোভন প্রামাণিক
পাঠ: শ্যামশ্রী সাহা, শঙ্খ বিশ্বাস
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস