‘বরফের শিফন চাদরে মোড়া বা সবুজ গার্নেট জড়ানো এতসব পর্বতের মধ্যে এটাই একমাত্র, যা অন্যরকম। গ্রানাইটের মতো। গহিন, কালো, গভীর খাঁজকাটা, মেঘে মোড়া, সর্বোপরি নিষিদ্ধ… কী অদ্ভুত এর দাঁড়ানো! আমাদের ধূসর জানলার ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা কোনও পোস্টকার্ড যেন… যা মনে করাচ্ছে, হ্যাঁ, আমরা এখানে এসেছিলাম! মেরু, সম্ভল, আকাশের স্তম্ভ, শিবলিঙ্গ– যে–নামেই ডাকা হোক না কেন, আমি এত জানি না। স্রেফ এটুকু জানি যে, কৈলাসের অস্তিত্ব আছে। কারণ এই মুহূর্তে তা আমাদের চোখের সামনে দাঁড়িয়ে!’
লিখছেন অরুন্ধতী সুব্রহ্মণ্যম; একাধিক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পুরষ্কারপ্রাপ্ত লেখক–সাংবাদিক–সমালোচক। সদগুরুর সঙ্গে কৈলাস পর্বতের এক তীর্থযাত্রায় বেরিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেন অরুন্ধতী। “জাস্ট আ স্ট্র্যান্ড ইন শিভা’স হেয়ার: ফেস টু ফেস উইথ দ্য অ্যাক্সিস অফ দ্য ওয়ার্ল্ড” প্রবন্ধে মেলে সেই অভিজ্ঞতার একঝলক। কৈলাস–যাপনের প্রতিটা মুহূর্ত তাঁর কাছে ছিল রোমহর্ষক। ব্যাখ্যার অতীত। কল্পনারও।
হতেই হত। কৈলাস পর্বতই এরকম। রোমাঞ্চ ও অধ্যাত্মবাদের ককটেলে চোবানো এই পর্বত বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় পর্বত বলে পরিচিত। ‘দ্য মিস্টিক মোস্ট মাউন্টেন এক্সিসটিং অন আর্থ’। আজ পর্যন্ত কোনও পর্বতারোহী কৈলাস জয় করতে পারেননি। চেষ্টায় খামতি ছিল না। হয় মাঝপথে আটকে যান, বা শিখরে পৌঁছনোর আগেই রহস্যমৃত্যু ঘটে তাঁদের। কথিত, সাইবেরীয় পর্বাতারোহীর একটি দল কৈলাসের নিষিদ্ধ অঞ্চলে আরোহণের চেষ্টা করে। প্রতিকূল জলবায়ু তাদের উঠতে দেয়নি। তবে নামার কয়েক ঘণ্টা পর অদ্ভুতভাবে তাদের হাত–পায়ের নখ বাড়তে ও বুড়োতে শুরু করে। প্রত্যেকেই লক্ষ করেন, পাকতে শুরু করেছে দু’–চারটে মাথার চুলও। একবছরের মধ্যে বয়স অনুপাতে শারীরিকভাবে বৃদ্ধ হয়ে যান সবাই। বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু হয় প্রত্যেকের। ও হ্যাঁ, একবছরের মধ্যেই।
১৯২৬–এ পর্বতারোহী হিউ রাটলেজ কৈলাসের নর্থ ফেস পরিমাপ করেন। আবিষ্কার করেন, নর্থ ফেস খাড়াইয়ে ১৮০০ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট। ‘আটারলি আনক্লাইম্বেবল’। কোনওভাবেই আরোহণযোগ্য নয়। উল্টো ফেসে ছিলেন কর্নেল আর.সি. উইলসন। সঙ্গে শেরপা ৎসেতেন। তিনি চিৎকার করে উইলসন ও রাটলেজকে জানান: কষ্টসাধ্য, তবে এই ফেস–টায় ওঠা যাবে। ‘সাহিব… উই ক্যান ক্লাইম্ব দ্যাট!’ সেই মোতাবেক প্রস্তুতিও নেন উইলসন। দুর্লঙ্ঘ্য, অজেয় কৈলাস বলে কথা বাওয়া! কেষ্ট মেলার আশায় এটুকু কষ্ট করা যাবে না? একশোবার যাবে। আলবাত যাবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ইকুইপমেন্ট নিয়ে প্রস্তুত রাটলেজ ও ৎসেতেন। নির্ধারিত দিনে যেই না যাত্রা শুরু করেছেন, তুষারঝড় উড়িয়ে নিয়ে দূরে ফেলে দিল তাদের! তারপর? শুনুন…
লেখা: সোহিনী সেন
পাঠ: শঙ্খ বিশ্বাস
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস