জোরে হ্যাঁচকা টান মারুন, না হয়ে অনেকে মিলেই উপড়ে টেনে তোলার চেষ্টা করুন, পারলে একটা ক্রেন জোগাড় করুন উপড়তে, বা একটা হাতি, উঠবে না। কিছুতেই উঠবে না। অথচ কড়ে আঙুল ছুঁয়ে দেখুন একবার, কাঁপতে লাগবে পুরো!
কথা বলছি চামোলির গোপীনাথ মন্দিরের ত্রিশূলের। দেবভূম উত্তরাখণ্ডের এই মন্দিরে রয়েছে এমনই অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ত্রিশূলটি। কথিত, স্বয়ং মহাদেবের ত্রিশূল এটি। আজ, এই কলিযুগেও দেবাদিদেব এটিকে ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন! তাই এটিকে সামান্য নড়ানোও, এজন্মে অন্তত, অসম্ভব! অথচ, শুদ্ধ মনে ভক্তি ভরে কনিষ্ঠ আঙুল দিয়ে স্পর্শ করা হলে কিন্তু কাঁপতে থাকবে ত্রিশূলটি! সেই কম্পন আপনার হাত বয়ে এসে অনুভূত হবে শরীরেও!
সত্যিই কি মহাদেব আজও এটিকে ধরে দাঁড়িয়ে? এই কলিযুগেও এমন অপরিবর্তিতভাবে কী করে দাঁড়িয়ে রয়েছে তা? এমন কোন রহস্য লুকিয়ে অলৌকিক এই ত্রিশূলটির মধ্যে যা আজও দুর্ভেদ্য?
এই মুহূর্তে তুষারধস ও হড়পা বানে বিধ্বস্ত চামোলি। শেষ পাওয়া খবরে নিখোঁজ দুই শতাধিক। মৃত ২৬ জন। মৃতের সংখ্যা ৫০ ছাড়াতে পারে বলে অনুমান। তপোবন টানেলের মধ্যে এখনও আটকে ৩৫ জন। উদ্ধারকার্য অব্যাহত। ইন্দো–টিবেটান বর্ডার পুলিশ, ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং জাতীয় ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী দল গত ৩৬ ঘণ্টা ধরে একনাগাড়ে উদ্ধারের কাজে ব্যাপৃত। একপ্রকার ধ্বংসস্তূপে পরিণত এই চামোলির বুকে এখনও সদর্পে জেগে গোপেশ্বরের গোপীনাথ মন্দিরটি। মন্দির প্রাঙ্গণে উন্নত শিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে অলৌকিক ত্রিশূলটিও।
দেবভূম উত্তরাখণ্ড জুড়ে পুরাণ ও লোকগাথার নির্যাস। এরকমই একজাায়গা চামোলিও। জেলাটির ছোট্ট একটি জায়গা গোপেশ্বর। তারই বুকে উন্নতশির অবস্থান গোপীনাথ মন্দিরটির। গোপীরূপধারী শিব তথা ‘কামিনী’কে রাসলীলায় চিনতে পেরে যান ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। চিনতে পেরে অচিরেই তাঁর নাম রাখেন: ‘গোপীনাথ’। শিবের সেই কামিনী তথা গোপীনাথরূপের স্মরণেই সংশ্লিষ্ট মন্দিরটির নামকরণ। তবে শুধু গোপীনাথ নয়, বাবা রুদ্রনাথের মন্দির নামেও পরিচিত তীর্থস্থানটি। দেরাদুন থেকে ২৬০ কিলোমিটার দূরে। যে–রাস্তা হৃষীকেশ, শ্রীনগর, রুদ্রপ্রয়াগ হয়ে যায়, সেই রাস্তা ধরে গোপেশ্বরের এই মন্দিরে পৌঁছতে হয়। কেদারনাথ মন্দিরের আদলে তৈরি গোপীনাথ মন্দির গাঢ়ওয়াল হিমালয় অঞ্চলের উচ্চতম মন্দিরগুলির একটি। পশুরাম, যিনি মতান্তরে পশুপতি এবং ভৈরবের মূর্তি স্থাপিত এখানে। মন্দিরের গর্ভগৃহে রয়েছে একটি শিবলিঙ্গও। অদূরে বৈতণ্ডী নাগের কুণ্ড। এখানকার পবিত্র জলে স্নানের বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। তবে এই সবকিছু ছাড়িয়ে বিশ্বাসীদের সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করে যা, তা হল ওই ত্রিশূল।
ওজন আনুমানিক ১০০০ টন! অষ্টধাতুতে তৈরি ত্রিশূলটির কোনও পরিবর্তন নেই শীত–গ্রীষ্ম–বর্ষা কোনও ঋতুতেই। বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, কিছুই মরচে ফেলতে পারেনি এর শরীরে। ক্ষয়নি একচুলও। পাঁচ ফুট লম্বা। মাটির তলায় প্রোথিত প্রায় আড়াই ফুট মতো। কথিত, স্বয়ং শিবের হস্তনির্গত এই ত্রিশূল এখানকার মাটিতে এসে গেঁথে যায়। একে কেন্দ্র করেই তৈরি মন্দিরটির বর্তমান রূপ।
লেখা: সোহিনী সেন
পাঠ: সুশোভন প্রামাণিক