সোমেন বললেন, তাঁর সত্তর ছুঁই ছুঁই বাবা টিভির সামনে বসে মন দিয়ে ইস্তাহার শোনেন, দেখেন। তিনি জানালেন, একসময় শিক্ষিত লোকেরা ইস্তাহার কিনতেন। বাবার মত– ক’জন পড়ল-না পড়ল তার ওপর ম্যানিফেস্টো প্রকাশ করা বন্ধ হতে পারে না। রাজনৈতিক দলের ইস্তাহার থাকবে না এটা হতে পারে না। গণতান্ত্রিক দেশে কোনও দলের আগামী কর্মসূচি সম্পর্কে মানুষদের অবহিত করতেই হবে। সোমেনের মতে, ইস্তাহার প্রকাশ একটা রাজনৈতিক কৌশল মাত্র। কর্মীদের এর মাধ্যমে একটু চাঙ্গা করে দিয়ে ভোটারদের কাছে পাঠানো হয়, যাতে তাঁরা ভোটারদের কাছে গিয়ে কিছু বলতে পারেন। তবে একবার মসনদে বসলে অদৃশ্য কালি দিয়ে আলাদা ইস্তাহার তৈরি হয়ে যায়, যেগুলি জনগণের কাছে পৌঁছনো হয় না। ভেতরে ভেতরে নৈতিক আর অনৈতিক কাজ শুরু হয়ে যায়। আর সেজন্যেই সোমেন এসব নিয়ে মাথা ঘামান না। তাঁর মতে, ‘যখন যা হচ্ছে তা দেখব-শুনব, চা খেতে খেতে রাজা উজির মারব, চাকরি আর সংসার করব।’
অনির্বাণ আরও সরাসরি বললেন, ‘ইস্তাহার? সেটা খায় না মাথায় দেয়! ছাড়ুন তো কাকু, আপনার তো চায়ে চিনি চলবে না।’
বিরস মুখে চিনি ছাড়া লাল চা কোঁত কোঁত করে গিলে রিক্সাস্ট্যান্ডে আসি। সেখানে জনা ছয়েক রিক্সাওয়ালা গুলতানি মারছেন। উত্তর কলকাতার শেষভাগে একটাই সুবিধা– হাতের নাগালেই রিক্সা পাওয়া যায়। যাই হোক, এঁদের মধ্যে একজন, অনিল দাসকে প্রায় সকালেই দেখি নগদ পয়সায় কাগজ কিনে পড়ছেন। কাগজটা তাঁর রিক্সার চালার ওপর দিকে গোঁজা থাকে। অনিলকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কাগজে ইস্তাহার সম্পর্কে তো লিখেছে, পড়েছেন কি?’
বললেন, ‘এমন হাসির জিনিস পড়ব না? পড়েছি আর খুকখুক করে হেসেছি।’
‘হাসি কেন?’
‘সবাই নাকি গরিবের ভাল করতে চায়! মানুষকে ঘরে বসিয়ে খাওয়াবে, এ আবার কেমন ধারা! গরিবদের পড়াও, চাকরি দাও, তা না… আর একটা কথা বলি, যে দলই হোক না কেন, যাদের হাত দিয়ে পাঠাবে তারাই তো কমিশন খাবে। তাদের বেশি লাভ।’
লেখা: বিকাশ মুখোপাধ্যায়
পাঠ: পৃথা ঘোষ
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস