পকেটের জোর নেই। তাই বলে ধনী হওয়া যাবে না? কভি নেহি! সহায় ব্যাঙ্ক লোন। মাসে মাসে কিস্তিতে টাকা শোধ। সেই নেশাতেই বুঁদ মধ্যবিত্ত। ঝোঁক বাড়ছে দামি জিনিস কেনার। বাড়ি-গাড়ি বড় ব্যাপার, সাধারণ ব্যাগ-মোবাইল-জুতোতেও চাপছে ইএমআই বোঝা। নতুন বিপদের ইঙ্গিত? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
আইটি সেক্টরের চাকরি। মোটের উপর বেতন ভালোই। তবু মাসের শেষে দেউলিয়া অবস্থা। ধার নিতেই হবে, এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় বারবার। মুক্তির পথ না পেয়ে আত্মহত্যাকেই বেছে নেন কতজন। আর সেখানেই স্পষ্ট হয় মধ্যবিত্তের নতুন অসুখ।
কথায় আছে, লাগে টাকা দেবে গৌরি সেন। বাস্তবে সেই গৌরি সেন কে, তার খোঁজ মেলেনি। বলা ভালো কেউ সেইভাবে খুঁজেও দেখেননি বোধহয়। কারণ বাস্তবে টাকার প্রয়োজন হলেই মিলতে পারে লোন। হোক না চড়া সুদ, মাসে মাসে ইএমআইতে মিটিয়ে দেওয়া যাবে। আপাতভাবে মনে হবে বিষয়টা বড় সহজ। চাকুরীজীবীদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে। কারণ প্রতিমাসে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা বেতন হিসেবে মিলবে। তার থেকেই শোধ হবে ইএমআই। সমস্যাটা অন্য জায়গায়। সহজে টাকা পাওয়ার এই পথ খরচের মাত্রা যেন দ্বিগুণ করেছে। অনায়াসে নিজের সামর্থের বাইরের জিনিস কেনার চেষ্টা করছেন অনেকে। ব্যাগ, জুতো, ঘড়ি, মোবাইল, সবই চাই ব্রান্ডেড। তাতেই ইএমআইয়ের বোঝা বাড়ছে। ঠিক সময় নিয়ন্ত্রণ না করলে মাত্রা ছাড়াবেই। তখন ভুল সিদ্ধান্ত নিতে খুব একটা বেশি সময় লাগবে না। এক নয়, একাধিক ক্ষেত্রে এমনটাই দেখা যাচ্ছে। নিজেদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে খরচের মাত্রা বাড়িয়েই চলেছে মধ্যবিত্তের বড় একটা অংশ। বলা ভালো, নিজেদের উন্নত জীবনের মান অন্যদের দেখানোর জন্যই এমনটা করছে তারা। কিন্তু কাকে দেখাবে? উত্তরটা সহজেই অনুমেয়। আরও একদল মধ্যবিত্তকে, যারা অনুকরণের প্রতিযোগিতায় নামবে।
সমীক্ষা বলছে, ভারতে যেসব নামীদামি ব্রাণ্ডেড জিনিস বিক্রি হয়, তাদের ৭৫% ক্রেতাই মধ্যবিত্ত। তাহলে কি ব্রান্ডেড জিনিসের দাম কমেছে? একেবারেই না। উলটে বেড়েছে। নামী কোম্পানির যে ব্যাগ ৩০ বছর আগে যে ব্রান্ডেড ব্যাগ ৪০হাজার টাকায় বিকোত, বর্তমানে তার দাম ২.৮ লক্ষ। মূল্যবৃদ্ধির হিসাবে এই সমীকরণ ঠিকই আছে। তবে ৩০ বছর আগে হাতে গোনা কয়েকজন ওই দামি ব্যাগ কিনতেন। কিংবা কেনার সামর্থ ছিল। বর্তমানে সেই সংখ্যাটা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। কারণ স্রেফ সামর্থ থাকলেই যে সৌখিন ব্যাগ কেনা হচ্ছে এমন নয়, যে কেউ কিনছেন স্রেফ দেখানোর উদ্দেশে। ভরসা ইএমআই! শুধু কি ব্যাগ? ঘড়ি, মোবাইল, জুতো সবেতেই ব্রান্ডের ছোঁয়া। দামের ট্যাগেও সেই ছাপ স্পষ্ট।
এঁদের অনেকেই দাবি করেন দামি মানেই মানে ভালো। বিষয়টা সবক্ষেত্রে হয়তো সত্যি নয়। স্রেফ ব্রান্ড ভ্যালু হিসেবে অতিরিক্ত দাম নেয় এইসব সংস্থা। ধনীদের ক্ষেত্রে সেই অতিরিক্ত টাকা দেওয়াটা বড় বিষয় নয়। কিন্তু একজন মধ্যবিত্তের পক্ষে বিষয়টা কঠিন হতেই পারে। আরও সমস্যা রয়েছে। এবং তা ওই সহজ কিস্তি বা ইএমআই-তেই। অনেক সময় লোন দেওয়ার সময় কিছু বিষয় বা শর্ত চেপে যায় ব্যাঙ্ক। আলাদাভাবে জিজ্ঞেস না করলে সে সম্পর্কে ধারণা হওয়া কঠিন। ঝোঁকের বশে ইএমআই ফাঁদে পা দেওয়া যে কেউ এই হিডেন কস্ট এর মায়াজাল ধরতে পারেন না। পরবর্তীতে দেখা যায়, ব্রান্ডেড জিনিস কেনার মাশুল হিসেবে কয়েকগুণ টাকা অতিরিক্ত দিতে হয়েছে। হয়তো সেই টাকা জমালে এমনিই ব্রান্ডেড জিনিস কেনা যেত। কিন্তু ওই যে, ‘এখনই চাই’ এর মোহ! সেই টানেই বড় বিপদ ডেকে আনা। অর্থ বিশেষজ্ঞরা তাই এই প্রসঙ্গে নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বেতন অনুযায়ী ঠিক করতে হবে মোবাইল কিংবা ঘড়ির ব্রান্ড কী হওয়া উচিত। অতিরিক্ত দেখানোর অভ্যাস না ত্যাগ করলে ভবিষ্যতে বিপদের আশঙ্কা থেকেই যাবে। আর্থিক দিক দিয়ে তো বটেই, মানসিক দিক থেকেও অস্থির হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।