জন্মদিন হোক বা বিয়ের অনুষ্ঠান, বেলুনের সাজ বেশ আকর্ষক। তবে তা দীর্ঘমেয়াদি নয়। একটা সময়ের পর হাওয়া কমে আসে বেলুনে। কিংবা ফেটে যায় যে কোনও সময়। কী হয় তারপর ফেলে দেওয়া বেলুনের? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
লাল, হলুদ, সবুজ, নীল! বাহারি রঙে চারদিক ঝলমল করছে। তবে আলো নয়। বেলুন। ছোট, বড়, মাঝারি কতশত মাপের বেলুন। সুন্দর করে সাজানো গোছানো চারদিক। সবাই দেখছে, অবাক হয়ে প্রশংসা করছে। কিন্তু অনুষ্ঠান যতক্ষণ বেলুনও ততক্ষণ। হাওয়া কমে ফুরিয়ে যায় সহজেই। সমস্যার শুরু তারপর থেকে।
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। বিষয়টাকে সহজ কথায় বললে, কারও পৌষমাস তো কারও সর্বনাশ। এক্ষেত্রে পৌষমাস যাদের অনুষ্ঠান তাদের। তবে সর্বনাশটা সকলের। কারণ ওই ফেলে দেওয়া বেলুন থেকে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। পরিবেশের ক্ষতি মানে মানুষের ক্ষতি। সম্প্রতি এই বিষয়টা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বিশেষজ্ঞ মহলে। তাতেই উঠে এসেছে এমন কিছু সমস্যার কথা, যা ভাবলে অবাক হতে হয় বইকি। আসলে, বেলুন অত্যন্ত সাধারণ এক ঘর সাজানোর জিনিস। যা আপাত অর্থে কারও ক্ষতি করে না। অর্থাৎ বেলুন ছুড়ে মারলে কেউ আহত হবে না। তাই সহজেই ছোটদের অনুষ্ঠানে বেলুন অপরিহার্য জিনিসের মতো গণ্য হয়। ছোটরা বেলুন নিয়ে খেয়াল খুশির আনন্দে মেতে ওঠে। অনেক সময় শান্তির প্রতীক বোঝাতেও বেলুন ওড়ানোর চল রয়েছে। একঝাঁক গ্যাস বেলুন আকাশে উড়িয়ে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়। একটা সময়ের পর তা চোখের আড়ালে চলে যায়। তারপর সেই বেলুন নিয়ে খুব একটা কেউ ভাবে না। আর যত সমস্যা সেখানেই।
আতশবাজী বা ওই ধরনের কিছু পরিবেশের ক্ষতি করে এই বিষয়টা খুব স্পষ্ট। এবং ব্যবহারের সময় সামান্য ভুল বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। বেলুন নিয়ে সেইসব ভয় নেই। তাই এর ক্ষতির দিকটাও খুব একটা ভেবে দেখেন না কেউ। কিন্তু গবেষণা বলছে বেলুনের দ্বারা পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বিশেষ করে সামুদ্রিক প্রাণীরা। আকাশে উড়তে উড়তে একটা সময়ের পর বেলুন মাটিতে নেমে আসে। অধিকাংশ সময় দেখা যায় তা পড়েছে সমুদ্রের জলে। যেহেতু জিনিসটা রাবারের তৈরি বা প্লাস্টিকের পরিমাণ বেশি, তাই জলে মিশে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। সুতরাং তা সামুদ্রিক প্রাণীদের কাছে ত্রাস হিসেবেই ভাসতে থাকে। জানা যাচ্ছে, সামুদ্রিক বর্জ্যের বড় একটা অংশ এই ফেলে দেওয়া বেলুনের অংশ বিশেষ। শুধু তাই নয়, অনেক সময় জঞ্জাল ফেলার জায়গায় ফেটে যাওয়া বেলুনের টুকরো ফেলে রাখা হয়। সেখান থেকে খিদের জ্বালায় কোনও কুকুর বা বিড়াল খাবার খুঁজতে এলে অনায়াসে তার পেটে চলে যায় ওই প্লাস্টিক বা রবারের টুকরো। তাতে যে ভালো কিছু হয় না বলাই বাহুল্য।
প্লাস্টিক বর্জ্যে ভরে গিয়েছে সমুদ্র। এ কথা নতুন কিছু নয়। তাতে বেলুনের টুকরো মিশে থাকাও খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু পরিবেশ দূষণ নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের মাথাব্যথা কই! বাকু-তে সাম্প্রতিক জলবায়ু সম্মেলনে ওয়ার্ল্ড মেটিয়োরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের রিপোর্ট বলছে, মানুষের বিবেচনাহীন কাজকর্মের দৌলতে সভ্যতা ভয়াবহ সংকটের মুখেই এসে দাঁড়িয়েছে। বেলুনের প্রসঙ্গও সেই সূত্রেই সামনে আসে। যে জিনিসটিকে আপাতভাবে শান্তির প্রতীক বা আনন্দের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তা আদতে পরিবেশের এতবড় ক্ষতির কারন হয়ে উঠছে দিনে দিনে। এমনিতে প্রকৃতির উপর প্লাস্টিকের প্রভাব যে কী ভয়াবহ, তা তো হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন সকলে। এই যে বিশ্ব উষ্ণায়ণ বা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সমস্যা, তারও একটা মূল কারণ নাকি এই প্লাস্টিক। মানবশরীরেও মারাত্মক ক্ষতি করছে এই জিনিস। অনেকেই ভাবতেন এক্ষেত্রে প্লাস্টিকের উৎস স্রেফ বাড়িতে নিয়ে আসা পলিব্যাগ বা এই ধরনের কিছু। কিন্তু সেই দলে যে বেলুনের মতো জিনিসও রয়েছে তা মনে রাখা প্রয়োজন বইকি। তাহলে ঘর সাজানোর উপকরণ হিসেবে বেলুনের বিকপ্ল কী?
হয়তো একেবারে বেলুনের মতো কিছু তৈরি সম্ভব নয়। তবে কাগজের তৈরি অনেকটা বেলুনের মতো দেখতে কিছু জিনিস রয়েছে, সেইসব ব্যবহার করা যেতে পারে। ফুল দিয়ে ঘর সাজানোর মতো সুন্দর আর কিছু নেই। সেক্ষেত্রে ক্ষতির কোনও অবকাশও নেই। এছাড়া আরও অনেক ধরনের উপকরণ হতেই পারে যা দিয়ে অনায়সে ঘর সাজানো যায়। বিশেষজ্ঞরা এই পরামর্শও দিচ্ছেন যে, এক বেলুন বারবার ব্যবহার করা হোক। অর্থাৎ একটা নির্দিষ্ট সময় অবধি বেলুন ফুলিয়ে রাখা তারপর সঠিকভাবে তার হাওয়া বার করে পুনরায় ব্যবহার করা। একেবারে নষ্ট হয়ে গেলে সঠিক পদ্ধতিতে রিসাইকেল করা। এবং তার থেকে আরও নতুন বেলুন বানানো। অর্থাৎ আসল উদ্দেশ্য পরিবেশের ক্ষতিটাকে রোধ করা। একটু সচেতন হলেই যা করা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সাধারণ জিনিস, কোনও ক্ষতি করে না, এই ধরনের ভাবনাগুলো বদলে, বেলুন থেকেও যে বড় বিপদ হতে পারে এতটুকু ভাবনা মনে রাখলেই ভবিষ্যতে বিপদ এড়ানো সম্ভব।