চিনিয়েছিলেন মুম্বই হামলার জঙ্গিদের। দেশরক্ষা করা সেই তরুণী এখন চাকরির সন্ধানে। চোখে স্বপ্ন হাজার, দেশ থেকে চিরতরে সন্ত্রাস মুছতে চান। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
২৬/১১ মুম্বই হামলার ১৫ বছর কাটল। এতদিনেও ঘটনার স্মৃতি ফিকে হয়নি অনেকের মনে। বিশেষ করে যারা সেদিনের হামলা চোখের সামনে দেখেছিলেন, ভয়ঙ্কর ওই রাত তাঁদের চোখে দুঃস্বপ্ন হয়ে ফিরে আসে, বারবার। এমনই এক তরুণী দেবিকা রোতেওয়ান। যিনি শনাক্ত করেছিলেন হামলার সঙ্গে যুক্ত কুখ্যাত জঙ্গি, আজমল কাসভ-কে।
মুম্বই হামলার সময় দেবিকার বয়স ১৬ ছুঁই ছুঁই। সেই অর্থে ছোট ছিলেন না, কাজেই স্মৃতি টাটকা এখনও। ভুলতেও চান না অবশ্য। সম্প্রতি সেদিনের কথা মনে করে সোশাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করেন দেবিকা। ঘটনার টুকরো ভিডিও দিয়ে সাজানো সেই পোস্ট দেখে আবেগে ভাসে নেটদুনিয়া। সেইসঙ্গে চর্চা শুরু হয় দেবিকা-কে নিয়ে। তার কারণ অবশ্যই রয়েছে। বর্তমানে বছর ২৫-র এই তরুণী শনাক্ত করেছিলেন আজমল কাসভকে। বলার অপেক্ষা রাখে না এই আজমল কাসভ কতটা কুখ্যাত জঙ্গি! ভারতীয় আইন অনুযায়ী চরম শাস্তিও হয়েছে তাঁর। আর সবটাই সম্ভব হয়েছে দেবিকার জন্য। এ দেশে আইনের পথ দীর্ঘ, যতই ভয়ঙ্কর অপরাধ হোক, সঠিক বিচার না হওয়া অবধি শাস্তি দেওয়ার নিয়ম নেই। সেক্ষেত্রে আজমলকে শনাক্ত করে সবকিছু অনেকটা সহজ করেছিলেন দেবিকা। তবে তাঁর পক্ষে কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। স্রেফ চোখের সামনে জঙ্গি হামলা দেখা নয়, দেবিকা নিজেও সহ্য করেছিলেন সেই দমবন্ধ করা পরিস্থিতি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটক করে রাখা হয়েছিল তাঁর মতো আরও অনেককে। সেসবের আতঙ্ক তো বটেই, অত্যাচারও সহ্য করতে হয়েছিল রীতিমতো। সে যাত্রায় প্রাণরক্ষা হয়েছিল, তবে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে অনেকগুলো দিন লেগেছিল। অপারেশন অবধি হয়েছিল তাঁর। অথচ এই দেবিকাই আদালতে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে চিনিয়ে ছিলেন কাসভকে। ভয় পাননি একবারও। প্রসংসাও কুড়িয়েছেন এর জন্য।
তবে স্রেফ এইটুকু দেশসেবা করে ক্ষান্ত হতে চান না দেবিকা। বরং চিরতরে সন্ত্রাস মুছে ফেলতে চান দেশ থেকে। স্বপ্ন আইপিএস অফিসার হওয়া, তাহলেই নিজের লক্ষপূরণ করতে পারবেন বলে মনে করছেন দেবিকা। সরকারের তরফে কোনও সুযোগ এখনও পাননি। তবে আগামীদিনে নিজেকে দেশের জন্য উৎসর্গই করতে চান। আসলে, ২০০৮ সালের ২৬শে নভেম্বর দিনটাকে সারা দেশের মানুষই হয়তো ভুলতে পারবেন না। তবে মুম্বাই শহরের অধিবাসীদের কাছে এই দিনটি বিভীষিকার মতো। আচমকাই শহরের ব্যস্ত রুটিনে একদল জঙ্গির ঢুকে পড়া। সবকিছু এলোমেলো করে দেওয়ার উদ্দ্যেশে অসংখ্য নিরীহ মানুষকে হত্যা করা। এসবের কিছুই কেউ ভোলেনি, ভুলবেও না।