একমনে ব্যস্ত ছবি আঁকতে। খ্যাতনামা আঁকিয়ের কায়দায় শুঁড় বাগিয়ে ক্যানভাসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটি মস্ত হাতি। কোথায় ঘটছে এমন ঘটনা, আসুন শুনে নিই।
হাতির দাঁতের দাম লাখ টাকা উঠতে পারে, একথা সকলেই কমবেশি শুনেছি। কিন্তু হাতির হাতের থুড়ি শুঁড়ের আঁকা ছবির দামও যে লাখ টাকা উঠতে পারে সেকথা শুনেছেন কি? তাহলে আসুন, শুনে নেওয়া যাক সেই চিত্রশিল্পী হাতির রং-তুলির জাদু।
হাতিকে সাধারণত আপনারা কোন কোন ভূমিকায় দেখেছেন? সার্কাসে হাতিকে সাইকেল চালানো, বল ছোঁড়াছুড়ি করা ইত্যাদি নানান কাজ করতে দেখে খুশি হয় আট থেকে আশি। কিন্তু শুধু ওইরকম ধরাবাঁধা গতের কাজ নয়। রং-তুলি, ক্যানভাসের দুনিয়াতেও যে হাতি সমান ভূমিকায় ব্যাট-বল হাঁকাতে পারে তার প্রমাণ মিলল হাতে নাতে।
আর পাঁচটা হাতির মতোই লম্বা শুঁড়ওয়ালা বিশালাকৃতি হাটিতির নাম সুডা। এলিফ্যান্ট পার্কে সে থাকতো তার সঙ্গীসাথীদের নিয়ে। বলা বাহুল্য পর্যটকদের আকর্ষণের মূল ছিল সেইই। পর্যটকরা দলে দলে ভিড় করতেন এই শিল্পী হাতির দর্শন পেতে। হাতিটিও মহোৎসাহে আঁকত নানান ছবি। আর তাই দেখে আহ্লাদিত দর্শকদের টাকায় দিব্য স্বচ্ছলভাবে চলে যেত সুডা ও তার দলবলের ভরণপোষণ। কিন্তু বাধ সাধলো করোনার আক্রমণ। স্বাভাবিকভাবেই প্রায় থেমে গেলো পর্যটকের আনাগোনা।
মাথায় হাত পড়ল মাহুত টুনওয়ার। উপায় ভাবতে ভাবতে ঠিক বেরিয়ে গেল পথ। টুনওয়ার তত্ত্বাবধানে সুডা আবারও আঁকতে থাকল একের পর এক ছবি। আর তাদের ঠাঁই হল অনলাইন ওয়েবসাইটে। অল্পদিনের মধ্যেই সুডার আঁকা ছবিগুলি অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পেয়ে গেলো সকলের কাছে। খুব সহজেই সুডা পেলো বিশ্ববিখ্যাত ছবি আঁকিয়ের তকমা। লোকজন আবারও সুডার ছবি কিনতে ভিড় জমাতে লাগল। তবে মাধ্যম এবার অনলাইন। আর সেই টাকায় সুডা দায়িত্ব নিয়েছে পার্কের অন্যান্য হাতিদের আহার এবং চিকিৎসার। নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে সেই পার্কটি কোথায়? তা দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে সোজা থাইল্যান্ড। নাম হল চিয়াং মাই এলিফ্যান্ট পার্ক ও ক্লিনিক।
এতো কিছুর পর একটা কথা না বললেই নয়। শুধু কথা বলতে পারে না বলে যাদের মনুষ্যেতর প্রাণী বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে তারা কি আদৌ ইতর? বরং যেসব না-বলা কথা তাদের ভিতরে জমে আছে, সেসবের খোঁজ নেওয়ার নেই কেউ। ঝাড়গ্রামে খুব সদ্য ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা আপনাদের মনে আছে? বুনো হাতি গ্রামে ঢুকে পড়ায় হুলাপার্টির নিষ্ঠুর আক্রমণে নির্মম মৃত্যু হয় হাতির। আগুনের শলাকা, ধারালো বল্লম ইত্যাদি দিয়ে নিষিদ্ধ পদ্ধতি অবলম্বন করে হাতিটিকে মেরে ফেলা হয়। তাহলেই ভাবুন। মনুষ্য স্বভাব হারিয়েছে যেসব মানুষ, তাঁদের চোখে আঙুল দিতেই কি সুডারা প্রকৃতির বুকে ঠাঁই পায়!
আরও শুনুন: সরকারি উদ্যোগে প্রাণনাশ হবে ৭০০ অবোলা পশুর, নেপথ্যে কী কারণ?
তবে যাই হোক না কেন, সুডার নজরকাড়া প্রতিভা আর তার মাহুত টুনওয়ারের যুগলবন্দী দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। পশুপাখি এবং মানুষ যে চাইলেই এভাবে একে-অপরের হাত ধরে থেকে যেতে পারে একবাক্যে তা স্বীকার করতেই হয়।