জামতাড়া গ্যাং! ঝাড়খন্ড রাজ্যের এক অখ্যাত জেলা, যা আজ পুরো ভারতবর্ষের ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছে। সালটা ২০১৫-১৬, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে Digital Payment করার প্রবণতা হু হু করে বেড়ে চলেছে। কেই বা না চায় বলুন রোদ-বৃষ্টিতে লাইনে না দাঁড়িয়ে, আয়েশ করে বাড়ি বসে বা বাসে যেতে যেতে কার্ড-এর মাধম্যে বিল মেটাতে বা অনলাইন-এ নিজের পছন্দের জিনিস শপিং করতে? আর বিভিন্ন সময়ে কার্ড কোম্পানি, ব্যাঙ্ক, বিভিন্ন ব্র্যান্ড থেকে পাওয়া যায় ক্যাশ-ব্যাক অফার, লাকি ড্র’তে, টিভি, মোবাইল ফোন, বাইক, গাড়ি আরও কত কিছু!
আপনি পেলেন না, কিন্তু আপনার পাশের বাড়ির শশীবাবু পেয়ে গেলেন। রাগ আর লোভ দুই-ই হলো আপনার। ওই যে কথায় বলে না, ‘লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু’। আপনার এই চাহিদার সুযোগ নিয়ে কল করবে জামতাড়া গ্যাং! ফ্রি-তে অফার দেবার অছিলায় জেনে নেবে, আপনার ডেবিট অথবা ক্রেডিট কার্ড-এর ডিটেলস।
তারপর পুরো একাউন্ট চিচিং ফাঁক।
সাইবার ক্রাইম-এর পরিভাষায় একে ‘ফিশিং’ (Phishing) বলে। অর্থাৎ ই-মেইল, এসএমএস, মোবাইল এই ধরণের টেকনোলজি ব্যবহার করে যে প্রতারণা হয়।
প্রথম দিকে কেউ এই ক্রাইমকে খুব একটা আমল দেয়নি, সাধারণ চুরি হিসেবেই নিয়েছিল। তার একটা কারণ অবশ্যই ভারতবর্ষ এই ‘নিউ-এজ ক্রাইম’-এর সঙ্গে খুব একটা পরিচিত ছিল না। আর একটা কারণ, ভারতের সাইবার-ল বেশ দুর্বল।
কারা এই জামতাড়া গ্যাং?
পুলিশ-এর সূত্র অনুযায়ী সীতারাম মণ্ডল, মিঠুন মণ্ডল, প্রভু মণ্ডল, রমেশ কুমার মণ্ডল, গীতা দেবী এই গ্যাং শুরু করেছিল। যদিও দ্রুত গতিতে এই গ্যাং-এর প্রসার বাড়তে থাকে। নোটবন্দীর সময় থেকে, এখনো পর্যন্ত প্রায় দুশো জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আর অপরাধীর সংখ্যা প্রত্যেকদিন বাড়ছে।
জামতাড়া গ্যাং ও ব্যবসা বাড়ার সাথে সাথে তাদের জালিয়াতি করার নানা ফন্দি-ফিকির বার করে। প্রথমে ব্যাংকের কাস্টমারদের যাবতীয় ডিটেলস জোগাড় করতো, তারপর ব্যাংকের ম্যানেজার সেজে, তাদের কল করে, ক্রেডিট কার্ড লক হয়ে গেছে জানিয়ে, ভয় দেখাতো; কার্ড চালু করার জন্য কার্ড ডিটেলস হাতিয়ে নিয়ে, পাঠাতো একটা ম্যালওয়্যার এসএমএস, আর তাতে ক্লিক করলেই সর্বনাশ।
Digital India-র Digital Crime Hub হয়ে দাঁড়ালো জামতাড়া। ব্যাপারটা ভালোই এগোচ্ছিল, কিন্তু বাদ সাধলো তীব্র প্রতিযোগিতা। ঝাড়খন্ড রাজ্যের বাইরেও নিয়মিত ভাবে এই চক্র সক্রিয় হলো–দিল্লী, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব, মোটামুটি সমস্ত বড়ো শহরকে টার্গেট করা হলো। একের পর এক অভিযোগ জমা পড়তে লাগলো। আইএএস, আইপিএস, ব্যাঙ্ক, আইটি শিল্পের উচ্চপদস্থ কর্মীদের কাছেও ফোন যেতে লাগলো। শোনা যায় দিল্লী-র প্রাক্তন লেফট্যানেন্ট গভর্নর নাজিব জাং-ও ‘কল’ পেয়েছিলেন। দিল্লী নড়েচড়ে বসলো।
পুলিশকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল এই গ্যাং-কে পাকড়াও করতে। তদন্তে যা বেরিয়েছিলো, তা চমকে ওঠার মত…
লেখা: অম্লান দত্ত
পরিচালনা: সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়
পাঠ: শ্যামশ্রী সাহা ও সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস