ডুম্স ডে আসন্ন। এই যে মনুষ্য প্রজাতি, হ্যাঁ, আপনাদেরই বলছি, আগামী ২০০ বছরের মধ্যে পৃথিবী ছাড়ার জন্য তৈরি না হলে, ধ্বংসের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত হন!
এত নাটকীয়ভাবে না হলেও অক্ষরে অক্ষরে এই সাবধানবার্তাই শুনিয়েছিলেন পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং। ‘Leave earth or face extinction.’ পৃথিবীর সর্বার্থ মঙ্গলকামনায় মনুষ্য প্রজাতিকে মঙ্গলে গিয়ে বসতি স্থাপনের পরামর্শ দেন বিজ্ঞানবিশ্বের সেরা জ্যোতিষ্ক। শুধু কি তাই? বলেছিলেন, যেকোনও মুহূর্তে প্রবল শক্তি ও বুদ্ধিসম্পন্ন ভিনগ্রহী দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে আমাদের সুজলা–সুফলা নীলগ্রহটি। এবং ওই অজ্ঞাত–ধাঁচা আক্রমণের মোকাবিলা করার ক্ষমতা নাকি থাকবে না মানুষের; সেই মানুষ যারা কি না নিজেদের ‘শ্রেষ্ঠতম জীব’ বলে দাবি করে। বিশ্ববাসীর কাছে খানিক যেন হুংকারের সুরেই অনুরণিত হয়েছিল তাঁর সতর্কবাণী। আজ থেকে বছর ২০ আগে এই জানুয়ারিতেই ভারতে আসেন হকিং। সেবার এদেশেই পালিত হয় তাঁর জন্মদিন। ১৬ দিনের সেই সফর তাঁর কাছে ছিল ‘ম্যাগনিফিসেন্ট’। করোনা আর বিশ্বজোড়া দ্রোহকালে ধ্বংসের দু’–এক টুকরো ফুলকি যখন এসে পড়ছে আমাদের গায়ে, কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে পারছি ডুমস ডে–র; মনে পড়ে যাচ্ছে সায়েন্স জিনিয়াসের দেওয়া সেই অশনি সংকেতগুলো।
ঠিক কী কী জানিয়েছিলেন স্টিফেন হকিং? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মানুষের পারস্পরিক হিংসা–দ্বেষ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তন। এই তিনটেকেই ‘দ্য প্রাইম থ্রেটস ফর হিউম্যানকাইন্ড’ মনে করতেন হকিং। তাঁর অকপট উক্তি, ‘মনুষ্য প্রজাতির যদি তার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তা থাকে, তাহলে তাদের এই মুহূর্তে পৃথিবী ছেড়ে মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার বন্দোবস্ত করা উচিত।’
হকিংয়ের শঙ্কা ছিল, যে দ্রুতগতিতে বিশ্বের জনসংখ্যা বাড়ছে, তাতে থাকার জায়গা সংকুলান করা দায় হয়ে পড়বে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং যে পৃথিবী ধ্বংসকারী অন্যতম ভিলেন, মানতেন প্রবাদপ্রতিম বিজ্ঞানী। বলেছিলেন: প্রাকৃতিক সম্পদ ক্রমে কমে আসছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি, মেরু অঞ্চলের তুষার গলন, জঙ্গল কেটে সাফ করা ও যথেচ্ছ হারে বন্যপ্রাণ হত্যার খেসারত মানুষকে দিতে হবে। দিতেই হবে… তা সে আমরা যতই এড়িয়ে যাই, যতই এসবকে অদেখা করি বা পাত্তা না দিই। গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ আটকাতে না পারলে অচিরেই শুক্রগ্রহের মতো হয়ে পড়বে পৃথিবী। ৪৬০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা ৮৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তখন পৃথিবীর নর্মাল টেম্পারেচার হবে। কোনও ডিসটোপিয়ান দুঃস্বপ্নেও কি আমরা ভাবতে পারি সেই দৃশ্যকল্প?
শুনুন..তারপর…
লেখা: সোহিনী সেন
পাঠ: শ্যামশ্রী সাহা
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস