শুনুন রুদ্ধশ্বাস এক জবানবন্দী, প্রচেত গুপ্ত-এর কলমে, দেবশঙ্কর হালদার-এর কণ্ঠে।
পাঠ হওয়া গল্পটির নির্বাচিত অংশ রইল নিচে।
অনেক সওয়াল-জবাব হল। যুক্তি-পাল্টা যুক্তি, প্রমাণ, পাল্টা প্রমাণের ঝড় বইল বিস্তর। আমার বিপক্ষের ওরা বলল, অপর্ণার গলায় যে শাড়ির প্যাঁচ ছিল, সেটা আমারই দেওয়া। এমন কঠিন ফাঁস দিয়েছি, যাতে প্রাক-মৃত্যু মুহূর্তের আসুরিক শক্তি তাকে পরাস্ত করতে না পারে। পারেওনি। অপর্ণা শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছে।
ওরা বলেছে, আমি নাকি জোর করে শাড়ি-জামা খুলে ফেলে অপর্ণাকে নগ্ন করি। মিলিত হতে চাই। অপর্ণা বাঁধা দেয়, আমি খেপে উঠি। পৌরুষ জেগে ওঠে ভিতরে। ধর্ষকের পৌরুষ। আমি জোর করি… আরও জোর। অপর্ণার সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়। সে আমার সঙ্গে পেরে ওঠে না। একসময়ে তাকে বাগে এনে ফেলি এবং ধর্ষণ করি। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। এরপর অপর্ণারই খুলে ফেলা শাড়ি দিয়ে তার গলায় ফাঁস দিই। জোরে টেনে ধরি। আরও জোরে। শেষে মৃত ও নগ্ন অপর্ণাকে ঝুলিয়ে দিয়ে আসি বাথরুমে।
রেপ অ্যান্ড মার্ডার। আইপিসি থ্রি হান্ড্রেড সেভেনটি সিক্স, থ্রি হান্ড্রেড টু। ক্লাসিক্যাল কেস।
বিপক্ষের কথা আপনি যেমন শুনেছেন ধর্মাবতার, আবার আমার পক্ষের কথাও আপনি শুনেছেন। আপনি ‘নিরপেক্ষ’ ছিলেন। কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
আমার পক্ষ বলল, ঘটনা বানানো। অপর্ণা নামের মেয়েটি স্বেচ্ছায় আমার সঙ্গে মিলিত হয়। মিলন-শেষে সে বাথরুমে যায় এবং সেখানে উঁচু জানলায় নিজের শাড়ি গলায় জড়িয়ে আত্মহত্যা করে। এজন্য সে একটা লোহার বালতি ব্যবহার করেছিল। বালতি উল্টো করে, তার ওপর উঠে দাঁড়িয়ে জানলার নাগাল পায়। গলায় ফাঁস জড়ানোর পর বালতিটাকে ফেলে দেয় পা দিয়ে এবং ঝুলে পড়ে। যেহেতু তার চেহারা একটু ভারীর দিকে, ঝুলে মৃত্যু হয়েছে দ্রুত। আমাকে মিথ্যে ফাঁসানো হয়েছে। কোনও দোষ নেই আমার। পরিস্থতির শিকার মাত্র।
আপনি এ কথাও মন দিয়ে শুনেছেন ধর্মাবতার।
যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে, তারা আপনার কাছে অপর্ণার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট জমা দিয়েছে। সেখানে লেখা- মৃত্যুর আগে মেয়েটি সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছিল। তার আগে জোরজবরদস্তি হয়েছে। মেয়েটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঠোঁটে, ঘাড়ে, স্তনে আবছা রক্তের ছাপ রয়েছে। আমাকে ডাক্তারি পরীক্ষা করে জানা গেছে, মেয়েটির সঙ্গে শেষ যে পুরুষের সঙ্গম ঘটে, সে আমি, আর কেউ নয়।
লেখা: প্রচেত গুপ্ত
পাঠ: দেবশঙ্কর হালদার
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস