ডমরুধরদের আবাদে যে বিষম কুমির রয়েছে, সে আবার যে-সে কুমির নয়, হুঁ হুঁ। রূপে-আচারে-ব্যবহারে-চরিত্রে সে ‘সাধারণ’ কুমির অপেক্ষা অধিক ভয়ংকর! সাধারণ কুমিরকে ডমরুধররা গ্রাহ্যি করেন না। কিন্তু এই কুমিরটিকে অগ্রাহ্য করবেন––– কারও বাপের এমন সাধ্যি নেই!
তার বিশালবপু দেহটি প্রায় তালগাছ সমান। আর প্রকাণ্ড উদরটি একমাত্র বৃহৎ দালানের সঙ্গেই তুল্য। অন্যান্য কুমির তবু জীবজন্তুকে ছিঁড়েটিঁড়ে খায়। এই কুমির চোখের নিমেষে আস্ত গরু, মহিষ গিলে ফেলে টুক করে। তবু যেন এই উদাহরণগুলো কিস্যু না। তার ভয়ংকরতা মাপতে বড় বড় উদাহরণও খাটো পড়ে যায়।
তা ঠিক কতটা ভয়াবহ এই কুমির? গন্ধমাদন পর্বতে কালনেমির পুকুরে যে-কুমিরটা হনুমানকে ধরেছিল, তাকে মনে পড়ে? এটি তার থেকেও ভয়ংকর! গঙ্গাদেবী যেই মকরের পিঠে বসে হাওয়া খেয়েছিলেন, সেই মকরকে এই কুমির বাছাধন একগালে খেয়ে ফেলতে পারে! শুধু পৌরাণিক অনুসঙ্গেই বা থেমে থাকা কেন? পর্বতপ্রমাণ যে-হাতি সেকালে বহুকাল ধরে কচ্ছপের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল, ডমরুধরদের বিষম কুমির সে-কচ্ছপকেও নস্য করতে পারে। এর জ্বালায় তটস্থ গ্রামকে গ্রাম।
একটা সময় পশু-পাখির সঙ্গে সঙ্গেই নৌকো ডুবিয়ে আরোহীদেরও খেতে শুরু করল এই কুমির। তার হাত থেকে কীভাবে নিষ্কৃতি মিলবে––– এই কল্পনায় যখন গোটা গ্রাম ব্যস্ত, তখনই সে কলকাত্তাইয়া এক বাবুর স্ত্রীকে গিলে ফেলল! সপরিবার পূর্বদেশগামী সেই স্ত্রীলোকের শরীরে ছিল বহুমূল্যের গয়না। কুমিরের মাংস হজম হয়, কিন্তু গয়না হজম হয় থোড়াই? তাই ডমরুধর তক্কে তক্কে ছিলেন, তার পেট চিরে গয়নাগাটি বের করে আর কিছু না হোক, অন্তত কিছু টাকা লাভ করবেন।
ভেবেটেবে যেই না প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছেন, অমনি ঘটল গিয়ে আরেক কাণ্ড। অন্য এক স্ত্রীলোককে গিলে ফেলল কুমিরটি। এইবার এক সাঁওতাল মহিলা। বেচবেন বলে একঝুড়ি বেগুন মাথায় চাপিয়ে হাটের পথে চলেছিলেন তিনি।
তাহলে এই মুহূর্তে বিশালাকার সেই কুমিরের পেটে দু’-দু’জন স্ত্রীলোক! তারপর?
লেখা: ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়
পাঠ: কোরক সামন্ত
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস