কাক: কেসটা কী মেমসাহেব? প্রায়ই রাতে তুমি যে আমাদের ঘুম নষ্ট করছ, তোমার বোঝা উচিত, সারাদিন পেটের ধান্দায় বহুত খাটাখাটি করতে হয় আমাদের। খানিকটা বিশ্রাম তো চাই, নাকি? নিজের আর কী, আছ এক ঠায় দাঁড়িয়ে, খুশি মতো হাসছ কাঁদছ ঝিমুচ্ছ… কাজ কম্ম নেই ভিজে পেটিকোট শুকোচ্ছ তো শুকোচ্ছ! বুঝলে, বর্ষাকালে ডানাদুটো ঝাড়ারও ফুরসত পাইনে! প্যানপ্যানানি থামাও বলছি!
মেমসাহেব: চুপ কর লক্ষ্মীছাড়া হতচ্ছাড়া কাকের বাচ্চা!… কী! অবস্থা করেছে আমায় শয়তানগুলো… এই নেটিভ কাকগুলো!… ঝিলের জলে চাঁদটা কেমন খুবসুরতি…আর আমি…ছি ছি ছি… মাথায় গালে বুকে… কী নোংরা…কী নোংরা! উঃ কেন মরণ হয়না গো!
কাক: আরে আমাদের কী দোষ! নট নড়ন চড়ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন? হাত পা ঝাঁকালে আমরা থোড়াই তোমার কাছে ঘেঁষি! আরে বাবা, সব্বাই জানে কাকেরা একটু স্ট্যাচুর মাথায় নখ খোঁচাতে ভালবাসে!
মেমসাহেব: দূর হ, দূর হ কেলে কুচ্ছিত! দাঁড়া আমার সাহেব ফিরে এসে তোদের কী হাল করে ছাড়ে দেখিস তখন!
কাক: কবে আসবে গো মেমসাহেব, তোমার সাহেব? টেলিগ্রাম পেয়েছে?… চিঠি লিখে দাও, তোমার জন্য যেন একটা সিল্কের ম্যাক্সি আর নরম তোয়ালে নিয়ে আসে! আর একটা ওয়াটারপ্রুফ… বর্ষাকালে আর দাঁড়িয়ে ভিজতে হবেনা!…
মেমসাহেব: দেখিস দেখিস ফেরে কি না-ফেরে! সাহেব ছুটি ফুরোলেই চলে আসবে, যাবার সময় বলে গেছে!
কাক: ধন্যি আশা কুহকিনী! মেমসাহেব তোমার মালিককে দেখিনি! যা শুনেছি, সাতচল্লিশে রাজত্বি হাতবদল হতে তল্পিতল্পা গুটিয়ে নিয়ে স্বদেশে ভেগেছে! অ্যাদ্দিন সে বোধহয় বেঁচেও নেই। কিন্তু এটাই ভারী আশ্চয্যি, যাবার আগে বাগানবাড়িটার কিংবা তোমার একটা বিলিব্যবস্থা করে গেল না কেন! অবিশ্যি না করে ভালোই করেছে, আমরা কয়েকশো কাক বাদুড় চামচিকে একটা বেওয়ারিশ বাগানবাড়ি ভোগদখল করতে পারছি!… সাহেবের জন্য আর কেঁদে লাভ নেই মেমসাহেব!… এ দেশে সাহেবের রাজত্বি শেষ, তোমারো বোলবোলাও শেষ মেমসাহেব!
লেখা: মনোজ মিত্র
পরিচালনা: শঙ্খ বিশ্বাস, সুশোভন প্রামাণিক
পাঠ: কোরক সামন্ত, মৌমিতা সেন
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস