আজ থেকে প্রায় ৪৬ বছর আগে এই ক্রিসমাসের ছুটিতেই মুক্তি পেয়েছিল বাংলা সিনেমার ইতিহাসের অন্যতম ক্লাসিক ‘সোনার কেল্লা’। সেই ছবিরই অভিজ্ঞতা শুনিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন ‘সোনার কেল্লা’–র তোপসে আর মুকুল। সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় ও কুশল চক্রবর্তী।
টিম ‘শোনো’–র সঙ্গে দু’জনে ভাগ করে নিলেন সেসব সোনালি দিনের মণি–মানিক্য। শুনলেন শ্যামশ্রী সাহা।
সিদ্ধার্থ জানালেন, শুটিং চলাকালীন এক অকিঞ্চিৎকর ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা।
হাইওয়েতে শ্যুটিং চলছে। গাড়িতে বসে ফেলুদা–জটায়ু–তোপসে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সন্তোষ দও আর তিনি। গন্তব্য জয়সলমিঢ়। সেই টাওয়ার পাংচার হয়ে যাওয়ার বিখ্যাত দৃশ্য। তাঁরা যখন সিন প্রায় শেষ করে এনেছেন, ক্যামেরা যখন বন্ধ হব–হব, সত্যজিৎ রায় সদ্য ক্যামেরা থেকে চোখটা সরিয়েছেন; ঠিক সেই মুহূর্তে পিছন থেকে একটা লরি সজোরে ধাক্কা মারে গাড়িটিকে! ড্রাইভার নেশায় চুর ছিলেন। ধাক্কার অভিঘাতে পিছনে থেকে সামনে চলে যান ফেলু মিত্তির–তোপসে অ্যান্ড দ্য গ্রেট জটায়ু। ভাগ্যক্রমে সেই মুহূর্তে শটটা হয়ে যাওয়ায় সত্যজিৎ রায় ক্যামেরা থেকে চোখ সরিয়েছিলেন। ভাগ্যক্রমেই বটে; কারণ যদি না সরাতেন, যদি তখনও শুটিং চলতেই থকত, ক্যামেরার যে আই হোলটা আছে, সেটা একেবারে ওনার চোখে ঢুকে পড়ত। নষ্ট হয়ে যেত বাঁ চোখটা।
কুশল রোমন্থন করলেন ‘সোনার কেল্লা’–য় ‘চান্স পাওয়া’র স্মৃতি।
চার বছরের কুশলের আঁকা ছবি ও বিভিন্ন খ্যাতনামা লেখকের ছড়া নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল একটি বই। নাম: ‘আমার ছবি তোমার ছড়া’। তো সেই বইয়ের জন্য সত্যজিৎ রায়ের কাছে ছড়া পাঠানোর আবেদন জানানো হয়। চার বছরের ছেলের অঁকা সেই ছবি মুগ্ধ করেছিল মানিকবাবুকে। অচিরেই তিনি খুদে শিল্পীর সঙ্গে সাক্ষাতের ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। সেই সূত্রেই সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি যাওয়া কুশলের। থিয়েটারশিল্পী বাবার সঙ্গে ‘মানিক জেঠু’ থিয়েটার নিয়ে আলোচনা করছিলেন। নাটকপ্রেমী কুশল সুযোগ বুঝে একটু নাটকও করে দেখালেন জেঠুকে। একে আঁকায় হয় না, তায় নাটক দোসর। ব্যাস, আর যায় কোথায়! নাটকে বিমোহিত মানিক জেঠু কুশলের একটা পোট্রেইট এঁকে দেন। লেখা: ‘কুশলবাবুকে মানিক জেঠু’। সেখানেই শেষ নয়; বরং শুরু। ছ’মাস পর বাবাকে চিঠি লিখলেন তিনি। স্বরচিত ‘সোনার কেল্লা’ চলচ্চিত্রাকারে নির্মাণ করছেন। এবং সেখানে কুশলবাবুকে চান। বাকিটা ইতিহাস এবং তার গায়ে লেপটে থাকা মুকুল।
শুনুন…
লেখা: শ্যামশ্রী সাহা
পাঠ: সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়, শঙ্খ বিশ্বাস